ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এই মানুষে আছে সেই মানুষ

হামিদ কায়সার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৯:৫১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
এই মানুষে আছে সেই মানুষ

মোশতাক আহমদকে কবি হিসেবে অনেকদিন থেকেই চিনি। আজ থেকে প্রায় পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর আগে আমার এক মামা তালিম হোসেন দেখা হলেই বলতেন, ‘মোশতাক কিন্তু ক্যাডেট কলেজে আমার ব্যাচমেট, ভালো কবিতা লেখে। তুমি কিন্তু পইড়ো ওর কবিতা!’
আমি তালিমের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম যে- পড়ব এবং ঠিকই পড়েছি; অবশ্য এখনও পড়ে যাচ্ছি।

তালিম, মোশতাক আহমদ ক্যাডেট কলেজের প্রিয় শিক্ষক বাংলাদেশের অন্যতম সাহিত্য সমালোচক রফিক কায়সারের কথা বলতেন, তাঁর ঋদ্ধ ব্যক্তিত্বের কথা বলতেন। আমি শুধু শুনেই যেতাম। একদিন জীবনের প্রায়-পড়ন্ত বেলায় এসে দুজনের সঙ্গেই দেখা হয়ে গেল তালিম মামারই উত্তরার বাসায়। তবে তালিমের শুধু তখন নিঃসাড় দেহটাই পড়ে ছিল খাঁটিয়ায়, প্রাণপাখি ছেড়ে গেছে খাঁচা। সেদিন তালিমের জানাজা শেষে দুজন সাহিত্যবেত্তার সঙ্গেই কথা হয় এবং সে-সূত্রে আমরা পরস্পর ফেইসবুক বন্ধু হয়ে উঠি ক্রমে ক্রমে। একদিন সেই ফেইসবুকেই কবি মোশতাক আহমদ ইনবক্সে আমাকে নক দিয়ে জানালেন, আমি কবি আবুল হাসানকে নিয়ে একটি উপন্যাস লিখছি। আপনার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো স্মৃতিকথা বা সূত্র বা পত্রিকা আছে কিনা?

আমি সঙ্গে সঙ্গেই মোশতাক ভাইকে বললাম, আপনার মোবাইল নাম্বার দেন। তারপর তাকে আবুল হাসান সম্পর্কে বটু ভাইয়ের শক্তি চট্টোপাধ্যায় সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার বয়ান দিলাম। আর তখনই কথা বলতে বলতে জানতে চাইলাম, বুলবুল চৌধুরী সম্পর্কে কি কিছু লিখেছেন আপনি? 
মোশতাক ভাই বললেন, না। 

আমি তাঁকে অনুরোধ করলাম, পারলে এখনই বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন, সিটিং দেন, বুলবুল চৌধুরী ছাড়া আবুল হাসান অসম্পূর্ণ হবে। এক কথায় মহাপাপ হবে!
মোশতাক ভাইও অচিরেই বুলবুল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ফেললেন। কিন্তু সে বুলবুল ভাই আর সারা শহর আঁতিপাতি করে চড়ে বেড়ানো বুলবুল চৌধুরী নয়, ক্যানসারের কামড়ে বিপন্ন বিছানায় শায়িত মানুষ। তবে তখনও তার প্রবল জীবনীশক্তি, স্মৃতি ষোলআনা জাগ্রত, কথা বলাতেও ক্লান্তি নেই। করোনাকাল বলে হয়তো বুলবুল চৌধুরী যেমন মোশতাক আহমদকে সাক্ষাৎ দেননি, তেমনি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র নিজেও করোনার মধ্যে অসুস্থ বুলবুল ভাইয়ের নিরাপত্তার কথা ভেবেই সশরীরে তার সামনে হাজির হননি। তা সত্ত্বেও থেমে থাকেনি কাজ। বুলবুল চৌধুরী মোশতাক ভাইয়ের কথা শুনেই বুঝতে পেরেছিলেন ভালো একটা কাজ হতে যাচ্ছে। তিনি আমাকে বলেওছিলেন সে কথা- ছেলেটা হাসানকে ধরতে পেরেছে হামিদ। আমি ওর সঙ্গে কথা বলেই বুঝেছি। যতটুকু পারি সাহায্য করব। হাসানের সঙ্গে আমার কত স্মৃতি! ওকে বলেছি আমার কাছে কিছু ডকুমেন্টে আছে, পাঠিয়ে দেব। 

ঠিকই খুব যত্ন করেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সেইসব মূল্যবান ডকুমেন্ট। আমার একটা আত্মতৃপ্তির জায়গা হলো, এ দুজন কবিআত্মা মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি! আশঙ্কা ছিল, বুলবুল ভাই তার স্বাস্থ্য বিপর্যয়ে মোশতাক আহমদকে সঠিকভাবে সহযোগিতা করতে পারবেন কিনা। বুলবুল ভাই ক্যানসারের যন্ত্রণাকে বাউন্স মেরে ঝিনুক নীরবে সহো-তে আবীরের রঙ ছড়াতে ভূমিকা রেখেছেন। 


আমি আশ্চর্য হয়ে যেমন ক্যানসার-আক্রান্ত বুলবুল চৌধুরীর অদম্য প্রাণশক্তি চাক্ষুস করছিলাম, তেমনই সমানভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছি মোশতাক আহমদ কতটা দ্রুত অথচ কতটা গভীর তলদেশ থেকে তুলে আনছেন কবি আবুল হাসানসহ তাবৎ চরিত্রদের- সেটা বিস্ময়করই! ধরেন, আজ সকালেই হয়তো বুলবুল চৌধুরী আর আবুল হাসানের কোনো ঘটনাক্রমের উৎস তিনি পেলেন, এক-রাতের মধ্যেই তা ঝিনুক নীরবে সহো-র মধ্যে সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন, ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে অথচ শিল্পমানও অক্ষুণ্ন থাকছে। 

এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার আগেই তিনি ডকু ফিকশনটি মোটামুটি লিখে ফেলেছিলেন। পরে তার ভেতরে ভেতরে নতুন করে সমন্বয় ঘটান বুলবুল চৌধুরী প্রসঙ্গ। শুধু যে বুলবুল চৌধুরী তা নয়, তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে তার লেখাটিতে উপযুক্ত তথ্য এবং চরিত্র যুক্ত করছিলেন। মোশতাক আহমদের এই শ্রম যে ব্যর্থ হয়নি, পাঠকমাত্রই টের পাবেন। তিনি যেমন কবি আবুল হাসানের বোধ ও চৈতন্য শব্দে শব্দে জাগিয়ে দিতে পেরেছেন, তেমনি ষাট দশক থেকে আবুল হাসানের মৃত্যুকাল অর্থাৎ পঁচাত্তরের নভেম্বর পর্যন্ত একটি ধারাবাহিক সুস্পষ্ট ছবিও তুলে ধরতে পেরেছেন।

আহমদ ছফা, সুরাইয়া খানম, নির্মলেন্দু গুণ, বুলবুল চৌধুরী, জার্মানের সেই আবুল হাসানের বন্ধু- সবাইকে মিলিয়ে এ যেন মহাকাব্যিক আঁকর। আমি তো ঝিনুক নীরবে সহোর পাণ্ডুলিপি পড়ে দুদিন ঝিম মেরে বসেছিলাম। একটা ক্ল্যাসিক মুভি দেখার পর, সে যেমন ধরুন হোক ‘গডফাদার’ কী ‘পথের পাঁচালী’ বা ‘খন্ডহর’ বা ‘জেনেসিস’ -যখন চরিত্রগুলো নিবিড়ভাবে মনে দোলা দিয়ে যায় বারবার, কিছুতেই হৃদয় থেকে মুছে ফেলা যায় না, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের অনুরণন জিইয়ে থাকে মস্তিষ্কে, ঝিনুক নীরবে সহোর পাঠশেষেও তেমনই কি এক আবেশে ডুবে থাকতে হয়।

এ বইটি আমি বলব বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের রংধনুজ্যোতি। প্রতিদিন একই নিয়মে সূর্য ওঠে, সূর্য ডুবে, সে এক অভ্যস্ততা, এই নিত্যনৈমত্তিকতার ভেতর যখন হঠাৎ আকাশের এক প্রান্তে রংধনুর আবির্ভাব ঘটে, তখন অপার্থিব মনে হয় মুহূর্তটি। ঝিনুক নীরবে সহোর আবির্ভাব যেন আমাদের প্রকাশনা জগতের আকাশে ছড়িয়ে দিলো রংধনুর বর্ণিলতা।


বুলবুল চৌধুরী যখন মৃত্যুর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও জীবনের ঠোঁটে তীব্র চুম্বন দিচ্ছিলেন, তার প্রিয় গাছ-গাছালির ছায়াতে খুঁজছিলেন ঠাঁই (আইচ্ছা তুমি যে কও গাছ-গাছালি, কী নাম না রাখছো সিদ্ধির। খাও যে, হের যতন কইরা আয়োজন করো। কী পাও হুনি? [বুলবুল চৌধুরীর উপন্যাস পাপপুণ্যি থেকে]। একই সময়ে যখন চোখের অসুবিধা নিয়েও ঝিনুক নীরবে সহোর নন্দনবাগান সাজাচ্ছিলেন মোশতাক আহমদ, তখন আরো একজন মেতে উঠলেন অসুস্থ বুলবুল চৌধুরীকে আনন্দের খেয়ায় ভাসিয়ে দিতে। কবি পুলক হাসানের মনের ভেতর শুধু একটাই তাড়না, বুলবুল ভাইয়ের হাতে যেন তিনি ধরিয়ে দিতে পারেন ‘খেয়া’ বুলবুল চৌধুরী সংখ্যা। কখন যে মানুষটা চলে যায়! একই সঙ্গে তার সমস্ত ইন্দ্রিয় সজাগ, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে যেন যা তা একটা কিছু না হয়। কি যে ভালোবাসা আর নিমগ্নতা দিয়ে তিনি ঝটপট বের করে ফেললেন বুলবুল চৌধুরী সংখ্যা। অসংখ্য লেখায় সমৃদ্ধ খেয়া। যারা লিখেছেন ভালোবাসার সঙ্গে নিজেদের নামের সুনামও রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন বেশ বোঝা যায়।

পুলক ভাই আমার কাছ থেকে যখন জানতে পারলেন, মোশতাক আহমদ আবুল হাসানকে নিয়ে উপন্যাস লিখছেন, সেখানে রয়েছে বুলবুল চৌধুরীরও স্বমহিম উপস্থিতি, তিনিও মোশতাক আহমদ-এর কাছ থেকে চেয়ে নিলেন লেখা। সন্দেহ নাই, মোশতাক আহমদের লেখা সংখ্যাটি আরো আকর্ষণীয় এবং সমৃদ্ধ করেছে!


বুলবুল চৌধুরীকে আবুল হাসানের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন কায়েস আহমেদ। আর কায়েস আহমেদের কাছে বুলুকে পৌঁছে দিয়েছিল বাবা আবদুল মতিন চৌধুরী ও মা সুফিয়া বেগম চৌধুরী। কীভাবে? 

বুলবুল চৌধুরীর শৈশব কেটেছে কালিগঞ্জের দক্ষিণবাগে নানির স্নেহছায়ায়। সেখানে তিনি সবুজ প্রকৃতির ভেতর হেসেখেলে বড় হতে থাকেন। ১৯৫৭ সালে উন্নত জীবন এবং ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার সুবিধার জন্য বাবা আবদুল মতিন চৌধুরী বাড়ি কেনেন ঢাকার পূর্ণ ব্যানার্জি লেনে। ঢাকায় এসেই বাবা বুলুকে কেএল জুবিলী স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন ক্লাস থ্রিতে। এখানেই ক্লাসমেট হিসেবে বুলবুল চৌধুরী পেয়ে যান কায়েস আহমেদকে। দুজনই বই পড়ুয়া বলে গাঢ় বন্ধুত্ব হতে সময় লাগলো না। কায়েস আহমেদ শৈশব থেকেই ছিলেন গভীর সাহিত্যানুরাগী। নিজের সংগ্রহে তো বই ছিলই, বিভিন্ন লাইব্রেরিতেও পড়তে যেতেন। বুলবুল চৌধুরী জুটে যেতেন তার সঙ্গে। কায়েস আহমেদের প্রথম লেখা ‘চোর’ গল্পটি ছাপা হয় জুবিলী স্কুলের বার্ষিকীতে। যা থেকে বুলবুল চৌধুরীরও মাথায় ঢোকে লেখালেখির পোকা। কায়েস আহমেদ বুলবুলকে নিয়ে ঢুঁ মারেন বাংলাবাজারের বইয়ের দোকানে, নিয়ে যান বিউটি বোর্ডিংয়ের জমজমাট সাহিত্য আড্ডায়। এখানেই আবুল হাসানের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বুলবুল চৌধুরীর, দেখা হয় কবি নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গেও। তিনজনের বন্ধুত্ব গভীর থেকে গভীরে পৌঁছায়। হাইকোর্টে নির্মলেন্দু গুণের হাতেই গাছগাছালির ধুম্র  জগতে ঢুকে পড়েন বুলবুল চৌধুরী এবং আবুল হাসান। নারী অভিজ্ঞতাও হতে থাকে বিস্তর। নারী অভিজ্ঞতা অবশ্য বুলবুল চৌধুরীর আগেই সম্পন্ন হয়েছে। নারীর ভেতর দিয়ে তিনি তার সাহিত্যের উপাদান খুঁজতে থাকেন।


শৈশবে দেখা প্রকৃতি আর যৌবনে আসা নারী যেন মিলেমিশে জায়গা করে নিয়েছে বুলবুল চৌধুরীর গল্প আর উপন্যাসে। প্রকৃতি যেমন তার লেখায় মানুষের জীবনাচরণের অঙ্গ হয়ে আসে, নারীও তেমনি উপস্থিত হয় রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে। সেখানে মিথ্যে বানোয়াট আবেগ নিয়ে তিনি খেলেননি। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে, নিজের প্রতিভার প্রতি ঠিক সুবিচার করেননি বুলবুল ভাই। যতটুকু লেখার শক্তি ছিল, আর ছিল নিজস্ব ভাষাভঙ্গি, বলবার ধরন, তিনি যদি লেখার টেবিলে ঠিকমতো বসতেন, আমাদের সাহিত্য হয়তো আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধ হতে পারতো। সে-কারণে আমি মনে করি বুলবুল চৌধুরীকে মোটেও দোষ দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশে আসলে সাগরময় ঘোষের মতো একজন সম্পাদক জন্ম নেননি।

প্রকৃত কবি-লেখকরা হলো শিশুর মতো, নিজের ভেতরে ডুবে থাকেন, স্বার্থ বোঝেন না, ধান্দা খোঁজেন না। একজন মা-সম্পাদক তার সন্তানকে চেনেন, জহুরীর চোখ তার, তিনি তার লেখকসন্তানকে লালন করেন, তাকে দিয়ে লেখান, তার ভেতর থেকে লেখা বের করে আনেন। আর আমাদের দেশের সম্পাদকগুলো প্রায় সব উল্টো। তারা প্রতিভাবান লেখকদের সন্ধান পেলেই ঈর্ষাকাতর হয়ে ওঠেন, কীভাবে তাকে দমিয়ে রাখা যায় তার ফিকির খোঁজেন। অথবা প্রত্যাশা করে বসে থাকেন যে, ওই প্রতিভাবান লেখক তার নিয়ন্ত্রণে থাকবেন, তারপর তিনি তার লেখা ছাপাবেন। তারও পরে নিজের বিল্ডিংয়ের মিডিওকার লেখকটিকে জনপ্রিয় করে তুলবার মিশনে নামবেন তিনি। অবশ্য লেখক যদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হন তাহলে আবার ভিন্ন চেহারা। তখন চলে কর্পোরেট হাওয়া গায়ে লাগিয়ে সোনারগাঁ শেরাটনে দাওয়াত খেয়ে ফেইসবুকে ফটো সাঁটানো। আর কোনো কোনো সম্পাদকের থাকে নিজস্ব গোত্র, গোষ্ঠি, রাজনৈতিক মতাদর্শ। তার বাইরে তিনি হাঁটতে নারাজ।

এই অবক্ষয়-কবলিত সাহিত্য জগতে বিচরণ করে তবুও যে আউলাঝাউলা মানুষটি টুকা কাহিনী,পরমানুষ, মাছের রাত নামের তিনটি অসামান্য ছোটগল্প গ্রন্থ; ইতু বৌদির ঘর, ঘাটের বাঁও, এই ঘরে লক্ষ্মী থাকে, তিয়াসের লেখন, মরম বাখানি, ভাওয়াল রাজার উপাখ্যান, পাখিটি ছাড়িল কে, জলটুঙ্গি, পাপ ও পুণ্যিও মতো গভীর জীবন বোধের উপন্যাস; শিশুতোষ গ্রন্থ গাঁও গেরামের গল্পগাঁথা, প্রাচীন গীতিকার গল্প; কলাম-  মানুষের মুখ, অতলের কথকতা, জীবনের আঁকিবুকির মতো গ্রন্থ রেখে গেছেন সেও আমাদের পরম প্রাপ্তি।


যা কিছু মহাকাব্যিক, তার ভেতরে ট্র্যাজিক উপাদান লুকিয়ে থাকে। আমি জানি না, বুলবুল চৌধুরী শেষ পর্যন্ত ঝিনুক নীরবে সহো বইটি দেখে যেতে পেরেছেন কিনা। কেননা, আমি নিজেও কোভিড ছোবলে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলাম। চৌদ্দদিন হাসপাতালে থেকে ফিরে আসার পর বেশ কদিন বিছানা-আশ্রয়ে থাকার ফলে সবার কাছ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলাম। ১৪ জুনের পর বুলবুল ভাইয়ের কাছেও আর যাওয়া হলো না। ইত্যবসরে ফেইসবুক মারফত জানলাম, ঝিনুক নীরবো সহোর লেখক মোশতাক আহমদ গুরুতর অসুস্থ। আমরা বুলবুল চৌধুরীকে হারিয়েছি, মোশতাক আহমদকে কিছুতেই হারাতে চাই না। তিনি ঝিনুক নীরবে সহোর মতো আরো অনেক রঙধনুর আবির্ভাব ঘটাবেন বাংলাদেশের সাহিত্য-আকাশে, এই প্রত্যাশার ভেতর দিয়েই তো আমরা বুলবুল চৌধুরীকে হারানোর সান্ত্বনা খুঁজে নেব।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়