ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রম্য ভুবনে আজো তুলনাহীন যিনি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:১৯, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
রম্য ভুবনে আজো তুলনাহীন যিনি

পাঠক রম্যলেখক হিসেবেই তাকে জানেন। যদিও তার রয়েছে বিশাল সাহিত্য সম্ভার। জীবনে ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনাকে অবলম্বন করেই তার রম্য রচনার ভুবন। যেখানে একবার অবগাহন করলে হাসিতে মন ভরে যায়।

সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১৮তম জন্মদিন আজ।এই শিক্ষাবিদ ও রস সাহিত্যিকের জন্ম ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাবার কর্মস্থল সিলেটের করিমগঞ্জে। বাবা সৈয়দ সিকন্দর আলী ছিলেন সাব-রেজিস্ট্রার। পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রাম। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে শান্তিনিকেতনে লেখাপড়া, সেখানেই স্নাতক ডিগ্রি লাভ।

বিশ্বভারতীতে পড়তে গিয়ে বহু ভাষা শেখার সুযোগ পান। সংস্কৃত, সাংখ্য, বেদান্ত, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ফারসি, আরবি, রুশ, ইতালিয়ান, উর্দু, হিন্দি ও গুজরাটি- এমন ১৮টি ভাষায় দখল ছিল তার। গীতা তার সম্পূর্ণ মুখস্ত ছিল। এমনকী রবীন্দ্রনাথের গীতিবিতানও।

তিনি জার্মানের বার্লিন ও বন বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও অধ্যয়ন করেন। পড়ালেখায় তিনি প্রচুর সময় কাটিয়েছেন। চাকরিজীবন শুরু হয় কাবুলের কৃষিবিজ্ঞান কলেজে ফরাসি ও ইংরেজি ভাষার প্রভাষকরূপে।  এরপর বাংলাদেশে ও কোলকাতায়ও শিক্ষকতা করেন। পরে পেশা পাল্টে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের সচিব ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মকর্তা হন। সবশেষে বিশ্বভারতীতে রিডার হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকেই অবসরে যান।

শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালেই হস্তলিখিত বিশ্বভারতী পত্রিকায় তার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়। তিনি সত্যপীর, রায়পিথোরা, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ইত্যাদি ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ, শনিবারের চিঠি, বসুমতী, হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখতেন। এ ছাড়া  মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি,  কালান্তর, আল-ইসলাহ্  প্রভৃতি সাময়িক পত্রেরও তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন।

গ্রন্থাকারে তার মোট ত্রিশটি উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ ও ভ্রমণকাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য: ভ্রমণকাহিনী ‘দেশে-বিদেশে’, ‘জলে-ডাঙায়’। উপন্যাস ‘অবিশ্বাস্য’, ‘শবনম’। রম্যরচনা ‘পঞ্চতন্ত্র’, ‘ময়ূরকণ্ঠী’ এবং ছোটগল্প ‘চাচা-কাহিনী’, ‘টুনি মেম’ ইত্যাদি। তার আরেকটি অনবদ্য গ্রন্থ ‘পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।

সৈয়দ মুজতবা আলী ‘দেশে-বিদেশে’ গ্রন্থখানি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই হইচই ফেলে দেন এবং পাঠকচিত্ত জয় করতে সক্ষম হন। কাবুলে অবস্থানের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও  অন্তরঙ্গ উপলব্ধির ফসল এই বই।

মুজতবা আলী বহুদেশ ভ্রমণ করেছেন, কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন করেছেন এবং বহুজনের সান্নিধ্য লাভ করেছেন। তাই তার লেখায় সে প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। তার রম্যবিষয়ক ছোট ছোট রচনা পাঠকদের চিত্তবিনোদন ও অনাবিল আনন্দদানে তুলনাহীন। বিশেষ করে উপন্যাস ও ছোটগল্পে মানবজীবনের অন্তহীন দুঃখ-বেদনা ও অপূর্ণতার কথা তিনি সহানুভূতির সঙ্গে চিত্রিত করেছেন।

১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় মারা যান।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়