ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফুয়েল মিশ্রণ বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ 

সালেক সুফী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৩৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফুয়েল মিশ্রণ বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ 

বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকীতে শতকরা শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় আনা নিঃসন্দেহে বিশাল অর্জন। সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতায় নিরবচ্ছিন্ন এবং মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের যেগুলো প্রান্তিক সমস্যা সেগুলো ২০২৩ সাল নাগাদ সমাধান হয়ে যাবে।

এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ সুলভ মূল্যে সবাইকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুষম প্রাথমিক জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রমাণিত উত্তোলন যোগ্য গ্যাস মজুদ দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছে। বর্তমানে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ২৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আমদানিকৃত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ করে সর্বোচ্চ সরবরাহ হচ্ছে ৩০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। সর্বোচ্চ দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৫০০-৩৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। দৈনিক ঘাটতি প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এই ঘাটতির কারণে গ্রাহক পর্যায়ে সবাই গ্যাস সংকটে আছে এবং প্রতিদিন সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। নিজস্ব গ্যাস ক্ষেত্র সমূহের উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২৫ সাল নাগাদ গ্যাস উৎপাদনে ধস নামতে পারে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অতিরিক্ত এলএনজি আমদানির সুযোগ নেই। তাহলে এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কী?

মানতেই হচ্ছে, অনেক দুর্বল পরিকল্পনার কারণে দীর্ঘ সময় নিজস্ব আবিষ্কৃত উঁচু মানের কয়লা সম্পদ উত্তোলন করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত  গ্রহণে ব্যর্থতা এবং জলে-স্থলে গ্যাস, তেল অনুসন্ধানে লাগসই ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় বাংলাদেশ ধীরে ধীরে আমদানিকৃত প্রাথমিক জ্বালানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিশ্ব জ্বালানি বাজার অস্থির। নানা কারণে তেল এবং গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি মূল্য দ্রুত ওঠা-নামা করছে। আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতির কারণে যে কোনো সময়ে সরবরাহের এই চেইন বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

আমার অভিজ্ঞতা জানাচ্ছে, আমদানিকৃত জ্বালানি সংগ্রহে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই খাতে বাংলাদেশ এখন বড় সঙ্কটে। এ কারণে আমি মনে করি, এই মুহূর্তে জ্বালানি সংগ্রহই বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের কার্বন ফুটপ্রিন্ট অনুল্লেখযোগ্য হওয়ায় কার্বন দূষণ নিয়ন্ত্রণে কোনো দায়বদ্ধতা নেই। বাংলাদেশের নিশ্চিন্তে আধুনিক টেকনোলজি অনুসরণ করে কয়লা উত্তোলন এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে বাধা নেই। গ্যাস অনুসন্ধান এবং গ্যাস-ভিত্তিক শক্তি উৎপাদনেও বাধা নেই। তাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশকে নিজস্ব জ্বালানি (কয়লা এবং গ্যাস তেল) অনুসন্ধান উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা নির্ভর ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে দেশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পৃক্ত করে পেট্রোবাংলাকে কারিগরিভাবে আরো সক্ষম ও কার্যক্ষম করে তুলতে হবে। জলে এবং স্থলে ব্যাপক অনুসন্ধান চালাতে হবে। পাশাপাশি এলএনজি এবং গ্যাস আমদানিতে বাস্তবসম্মত কার্যক্রম জোরদার করার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে হবে। একই সঙ্গে সৌর বিদ্যুৎ, বায়ু বিদ্যুৎসহ নবায়ন যোগ্য জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্যে বাস্তবভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশকে জ্বালানি বিদ্যুতের আঞ্চলিক সহযোগিতা উন্নয়নের জন্য আরো সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভারত, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি সহযোগিতা তরান্বিত করতে হবে।

সোজা কথা বাংলাদেশ কখনো শুধু আমদানিকৃত জ্বালানি নির্ভর হয়ে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা অর্জন করতে পারবে না। এটি হলো এই খাতের চরম সত্য। 

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
 

এমএম/তারা 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়