ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

২০০ পরিবার ছন চাষ করে স্বাবলম্বী

মহাসিন আলী, মেহেরপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
২০০ পরিবার ছন চাষ করে স্বাবলম্বী

মেহেরপুর সদর উপজেলার দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ি এলাকায় ছন চাষ করে ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তারা এই ছন থেকে ঝাড়ন তৈরি করছেন এবং পান বরজে বিক্রি করছেন। ওই গ্রামের দুই শতাধিক পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে ছন চাষে। শুধু তাই নয়, চাষ ও বিক্রিতে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে তাদের মধ্যে বেকার নেই কেউ। 

দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ির মাঠে ওই গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ২ বিঘা ৭ কাঠা, আশরাফ ৪ বিঘা, ইস্রাফিল ৩ বিঘা, মিকাইল ৪ বিঘা ও তাহাজুল ৪ বিঘা জমিতে ছন চাষ করেছেন। এবছরও বেলেগাড়ি মাঠে নতুন ৫০ বিঘাসহ প্রায় দুইশত বিঘা জমিতে ছনের চাষ হয়েছে। এছাড়া আশেপাশের মাঠে আরও প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেনসহ স্থানীয় কয়েকজন চাষি।

জাহাঙ্গীর হোসেন ও মিকাইল হোসেনসহ এলাকার আরও কয়েকজন চাষি জানান, এলাকার অধিকাংশ চাষি নিজ জমিতে ছন চাষ করেছেন। তবে অনেকে ২০ হাজার টাকায় এক বছরের জন্য প্রতি বিঘা জমি লিজ নিয়েও চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে প্রথমবার ২০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং একই জমি থেকে পরপর চার বছর ছন সংগ্রহ করা সম্ভব। 

এছাড়াও শীত মৌসুমে ছন কাটা না গেলেও প্রতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে চারবার ছন কাটা যায়। প্রথমবার ছন কাটার পরের তিনবার খড়ের যত্ন নিতে প্রতিবার তিন-চার হাজার টাকা করে খরচ হয়। পান বরজের জন্য প্রতিমণ ছন বিক্রি হয় দুই থেকে তিন হাজার টাকায়। আর প্রতি বছর এক বিঘা জমির ছন বিক্রি হয় প্রায় দেড় লাখ টাকায়। এভাবে একই জমির ছন চার বছর সংগ্রহ করা সম্ভব। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এ জেলার ছন চুয়াডাঙ্গা ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি হচ্ছে।

লেবারের ছন গ্রেডিংয়ের পাশাপাশি গৃহিণী আরজিয়াকে রোদে শুকাতে দেখা গেছে। তিনি বলেন, ছন কাটা, শুকানো ও গ্রেড়িং করতে প্রতিটি লেবারকে দিন হাজিরা খরচ দিতে হয় পাঁচশ টাকা। তাই এ গ্রামের নারী-পুরুষ সবাই মিলে এ কাজ করে থাকি। এবছর আমরা ১ বিঘা ৭ কাঠা জমিতে ছন চাষ করে তিনবার কেটে বিক্রি করে ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা পেয়েছি। এবছর আরও একবার ছন বিক্রি হবে। এছাড়া অল্প অল্প খরচ করে আরও তিন বছর ওই জমি থেকে ছন পাবো। 

তিনি আরও বলেন, গত ২০ বছরে এ গ্রামের মানুষের জীবন চিত্র পাল্টে গেছে। প্রায় প্রতিটি কাঁচা বাড়ি পাকা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে একটি করে মোটরসাইকেল হয়েছে। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াচ্ছে। মেয়েদের ভালো ঘর-বর দেখে বিয়ে দিতে পারছে।

একই গ্রামের সেলিম রেজা ও সাদ্দাম হোসেনকে ছন গ্রেডিংয়ে লেবারের কাজ করতে দেখা গেছে। তারা বললেন, ৫০০ টাকা (খরচ) দিন হাজিরায় কাজ করছি। এ গ্রামের প্রায় দুইশত লোকের ছন চাষ আছে। আবার লেবার খেটে দিন চালাচ্ছে আশপাশের গ্রামের আরও প্রায় দুই-তিনশত লোক। প্রতি বছরের গ্রীষ্ম মৌসুমে এ গ্রামে সহজে কাজ পাওয়া যায়।

মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ দীঘিরপাড়া বেলেগাড়ি এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ছন চাষ হচ্ছে। ঘর ছাউনি, ঘর ঝাড়ুর বাড়ুন তৈরি এবং পান বরজসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছনের চাহিদা প্রচুর। তাই মূল্য বেশি হওয়ায় এই এলাকার চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। সাথে সাথে এলাকায় ছন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতোমধ্যে এলাকার অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন।

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়