ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অনাহারী কুকুর-বিড়ালের মুখে খাবার তুলে দেন ইমু

মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৫৫, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
অনাহারী কুকুর-বিড়ালের মুখে খাবার তুলে দেন ইমু

আফসানা আফরোজ ইমু। বাড়ি দিনাজপুর শহরের কালীতলা পোস্ট অফিস এলাকায়। ছোট থেকেই পশুদের প্রতি প্রেম-ভালোবাসা তার। পথেঘাটে পড়ে থাকা পশুদের স্নেহ-মমতা দিয়ে মনে তৃপ্তি খুঁজে পান।

সম্প্রতি এক বিকেলে দিনাজপুরের শহীদ মিনার মাঠে (বড় মাঠ) দেখা মেলে আফসানা আফরোজ ইমুর।তিনি পশুদের সঙ্গে ভালোবাসা বিনিময় করছেন। মাঠে বেশ কয়েকটি কুকুর ঘুরে বেড়াচ্ছে, তার সুমধুর কণ্ঠের একটি ডাকে সবাই ছুটে আসলো তার কাছে। দেখে মনে হলো এসব পশুর সাথে তার মনের মিতালী রয়েছে। মায়ের ডাকে সন্তানরা যেমন ছুটে আসে, তেমনি এক ডাকে পশুগুলো ছুটে আসলো তার কাছে।

কোনো ঘৃণা বা সংকোচ নেই এই মানুষটির মনে। গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। ব্যাগে থাকা খাবার পশুগুলোকে নিজ হাত দিয়ে খাওয়াতে থাকেন। ছোটবেলা থেকে পশুদের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। কুকুর, বিড়াল সবাই তার পোষ মানে। পুরো শহরের ক্ষুধার্ত কুকুর-বিড়াল তাকে চেনে। ঘুরে ঘুরে ক্ষুধার্ত প্রাণীদের খাবার খাওয়ানোই তার কাজ। আবার অসুস্থ কুকুর-বিড়ালগুলোকে পশু হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসাও করেন তিনি।

আফসানা আফরোজ ইমু ‘জাগ্রত দিনাজপুর সেচ্ছাসেবক’ নামের একটি সংগঠনের সভাপতি। তার সংগঠনে রয়েছে ৩০ জন সদস্য, তারা সবাই ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গত দেড় বছর ছিল দেশে কঠোর লকডাউন। বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ দোকানপাট ও হোটেল। ওই মুহূর্তে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মাঠেঘাটে আর শহরের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতো এসব পশু। আফসান আফরোজ ৩০ সদস্যর দল নিয়ে নিজের অর্থায়নে খাবার রান্না করে খুঁজে বেড়িয়েছেন অসহায় পশুগুলো। পুরো লকডাউনেই তারা প্রতিদিন খাবার দিয়েছেন এসব ক্ষুধার্ত প্রাণীদের।  

শহীদ মিনার মাঠে একজন ফুচকা বিক্রেতা নাজমুল হোসেন। তিনি বলেন, তিনি একজন আজব মানুষ। লকডাউনে দেখেছি প্রতিদিন এখানে এসে এসব ক্ষুধার্ত বিড়াল আর কুকুরদের খাবার খাওয়াতে। এমন মানুষ সমাজে কমই আছে।

একজন পথচারী আফসানা আফরোজ ইমুকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রাণীদের সাথে তার অন্তরঙ্গ প্রেম দেখে আমি অবাক হয়েছি। পশুগুলোও তাকে চেনে এবং তার প্রতি টান ছাড়া কোনো হিংস্রতা নেই।

আফসানা আফরোজ ইমু পেশায় একজন গৃহিণী। সংসারে তার দুই মেয়ে, স্বামী আর শ্বশুড়-শাশুড়ি। সবাই মুগ্ধ তার পশুদের প্রতি ভালোবাসা দেখে। আবার তারাও নিজেদের গড়ে তুলেছেন পশুপ্রেমিক হিসেবে। তারাও অসহায় প্রাণীদের খুঁজে বেড়ান।

ইমু বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে পশু পাখিদের ভালোবাসি। ওরা তো অধম, কিছু বোঝে না এবং বলতেও পারে না। ওদের কষ্ট দেখলে নিজে খুব কষ্ট পাই। ওদের চোখমুখ আর পেট দেখলে আমি সব অনুভব করতে পারি, তাই ওদের পাশেই থাকতে ভালোবাসি। 

তিনি আরও বলেন, আমার একার পক্ষে তো এত বড় কাজ করা সম্ভব নয়। তাই একটা সংগঠন তৈরি করেছি। এই সংগঠনে ছোট থেকে বড়রাও আছেন। স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের নেওয়ার একটা বড় উদ্দেশ্য আছে আমার। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক ছেলে-মেয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে বিপথে চলাচল করে। তাই তাদের ভালো পথে থাকতে এবং পশুপ্রেমিক বানাতে আমার প্রচেষ্টা মাত্র। 

লকডাউনে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট আর দোকান হোটেলে কোনো খাবার ছিল না। শহরের অভুক্ত প্রাণীরা খাবার পেতো না, তখন আমরা প্রতিদিন ওদের খাবার তৈরি করে খাওয়াতাম। তবে বর্তমানে সব খোলা রয়েছে, তাই ওরা খাবার জোগার করতে পারছে। এজন্য আমরা ওদের জন্য সপ্তাহে একদিন করে খাবারের ব্যবস্থা করছি। আমার ইচ্ছে আছে, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এসব অসহায় প্রাণীদের পাশে থাকবো, বলেন ইমু।

/মাহি/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়