ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সাউথ বাংলা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, ৭  জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১
সাউথ বাংলা ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি, ৭  জনকে জিজ্ঞাসাবাদ

ক্ষমতার অপব্যবহার করে নামে-বেনামে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল ইসলামসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এই ৭ কর্মকর্তা দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হন। এ সময় পর্যায়ক্রমে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

এর আগে, গত বুধবার ব্যাংকটির ৯ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক।

যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তারা হলেন- ব্যাংকটির এমডি ও সিইও মো. রফিকুল ইসলাম, ডিএমডি মো. শওকত আলী, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জিয়াউল লতিফ, সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার খালেদ মোশারেফ, ভিপিও শাখা প্রধান এস এস ইকবাল মেহেদী, সিনিয়র অফিসার বিদ্যুত কুমার মণ্ডল এবং এমটিও তপু কুমার সাহা। 

দুদক সূত্র জানায়, এসবিএসির সাবেক চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রাথমিক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, খুলনা বিল্ডারস লিমিটেডের নামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। বাস্তবে এ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

বিএফআইইউর তদন্ত দল সরেজমিন গিয়ে এ ঠিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান খুঁজে পায়নি। অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যাংক ঋণ অনুমোদন করান এবং তা আত্মসাৎ করেন। এছাড়া কর্মচারীদের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

বিএফআইইউএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমজাদ হোসেন অনিয়ম করার জন্য এসবিএসির খুলনা ও কাটাখালী শাখাকে বেছে নেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও খুলনা ও কাটাখালীকেন্দ্রিক। ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতে তিনি ব্যবহার করেছেন নিজের, স্ত্রীর, আপন ভাইয়ের, ভাতিজিসহ কর্মচারীদের নাম। এসব ব্যক্তি ও কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে ব্যাংকের বোর্ডসভায় ঋণের অর্থ ছাড়ের মাধ্যমে তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ওঠে এসেছে। গত আগস্ট মাসে দুদক দ্বিতীয় দফা আমজাদ হোসেনের অর্থ আত্মসাতের বিষয় অনুসন্ধান ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলে তিনি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। সম্প্রতি তিনি ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের কাছে পদত্যাগপত্র ই-মেইল করে পাঠান। এতে ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে নিজের শারীরিক অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন বলে জানা গেছে। 

এর আগে ৫ জানুয়ারি ঋণ জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগের প্রাথমিক অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আমজাদ হোসেনের নামে থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে চিঠি দেয় দুদক। 

চিঠিতে বলা হয়, আমজাদ হোসেন সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের শেয়ারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। এসব অর্থ তিনি অবৈধ প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টা করছেন, যা মানিলন্ডারিং অপরাধ। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পেলে চিঠির মাধ্যমে আমজাদ হোসেনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ দেয় দুদক। সেই সঙ্গে তার সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেয় সংস্থাটি। পরে এস এম আমজাদ হোসেন, তার স্ত্রী সুফিয়া আমজাদ ও মেয়ে তাজরির আমজাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞার আবেদন করে দুদক।

শিশির/এসবি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়