ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

রেজাউদ্দিন স্টালিন: পূর্ণ প্রাণের কবি

জাহিদুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২২ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১১:৫২, ২২ নভেম্বর ২০২১
রেজাউদ্দিন স্টালিন: পূর্ণ প্রাণের কবি

আশির দশকের একজন বিশিষ্ট কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। তার কাব্যভাষা শক্তিশালী। বিবিধ অনুষঙ্গে সে যুক্ত করেছে পুরাণ, ধর্মতত্ত্ব, পরাস্বপ্ন ও জাদুবাস্তবতা। আমি লক্ষ্য করেছি তার কবিতা দেশ-বিদেশে আদৃত হচ্ছে, অনূদিত হচ্ছে। আমাজন তার ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশ করেছে। আমাদের পাঠক, বিদেশী পাঠক বাংলা কবিতাকে জানতে পারছে এটা সত্যি আনন্দের।

আমরা দুর্ভাগা আমাদের ভাষার শক্তি থাকা সত্ত্বেও আমাদের কবিতা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তুলে ধরতে পারছি না। রেজাউদ্দিন স্টালিন সে কাজটি করছে এ জন্য তাকে অভিনন্দন। রেজাউদ্দিন স্টালিনের জন্য এ লেখাটি সাহিত্য সমালোচনা নয়। আমরা আলোচনায় যখন বাহ, সুন্দর, খুব সুন্দর- এসব বলি তখন এটাও ঠিক এই সুন্দর বলাটাও সাহিত্যের অংশ হয়ে যায়। অর্থাৎ ভালোলাগাটাও এক ধরনের সমালোচনার পর্যায়ভুক্ত। আমি বিশ্বাসের সাথে বলি আমাদের কবিতা ভুবনে খুবই মুষ্টিমেয় শক্তিমানদের একজন রেজাউদ্দিন স্টালিন। প্রেম দ্রোহ আধ্যাত্মিকতা এবং সেই সঙ্গে প্রাদেশিকতার রূপময়তায় স্টালিন কবিতাকে সাজাতে পেরেছে দেখে ভালো লাগছে।

আবেগকে মেধা দিয়ে চেপে ধরতে জানতে হয়, কবিতাকে এবং অবশ্যই মেধাকে মুড়িয়ে। কবিতা তো বিবৃতি নয় কিন্তু অলৌকিক বিবৃতি- এতে সন্দেহ নেই। এই যে কবিতা সম্পর্কে বোধ- সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে স্টালিন আগের চাইতে, তার আগের কবিতাগুলোর চাইতে বেশি করে বুঝতে ছিখেছে। এই শেখাটা যদি ধারাবাহিক রূপ পায় যদি কাব্যশক্তিকে অধিকারে নিয়ে নতুন ভাষার ভুবন তৈরি করতে পারে তবে নিশ্চিতভাবে বলবো সে বাংলা কবিতার গতিপথ বদলাতে পারবে। যুক্ত করতে পারবে কবিতায় নতন মাত্রাপথ। 

ইতোমধ্যে তার অর্জন অনেক। প্রায় ৫০টির মতো কবিতার বই। একটা নিরবচ্ছিন্ন সাধনা যে স্টালিনের অন্তরে দীপ্যমান তা পাঠকমাত্র বুঝতে পারে। স্টালিন তার সমকালে অনেক পাঠকের ভালোবাসা ও আশীর্বাদ পেয়েছে। এমনকি এই ঈর্ষাকাতর সমাজে অগ্রজদের অভয় তাকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছে। সুপরামর্শ তো দিতে পারে কবিরাই। বলবো এখনো হয়তো তাদের হৃদয়ে প্রেম অবশিষ্ট আছে। এখনো বিভিন্ন প্রকারে তারা প্রকৃতিকে বুকে নেয়, নদীর কলস্বর শুনতে কান পাতে, পাখির উড়াল দেখে বিস্মিত হয়। নারীকে সৌন্দর্যের আধার জ্ঞান করে। রেজাউদ্দিন স্টালিনের মধ্যে এই ভলোবাসার সদগুণ আছে বলে ও কবি।

চলনে সাজসজ্জায় কবি নয় বরং কবি হতে হয় কবিতা দিয়ে। স্টালিন কবি সাজেনি, কবি হয়েছে। এখানেই তার কালের অনেকের চেয়ে সে আলাদা। নিঃসন্দেহে বলবো, স্টালিন তার কালের অনেকের চেয়ে অগ্রগামী। ভারতীয়, গ্রীক, আরব্য, রোমক, মিশরীয় পুরাণের বহুমাত্রিক প্রাসঙ্গিক ব্যবহার তার কবিতাকে একইসঙ্গে আধুনিক ও ধ্রুপদী গুণ দিয়েছে। নানা ভাষায় অনুবাদে তার আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি হচ্ছে এটিও কম নয়। তার কবিতার বিষয় বৈচিত্র্যের বহুমাত্রিকতা আমাকে টানে। বিশেষ করে একটা কবিতার কথা বলবো সেটা আইকনিক উচ্চারণ: 

'আমি এক সোনামুখী ধানশীষ, পূর্ণপ্রাণ যাবো।'

যখন গ্রীনহাউজ এফেক্ট পৃথিবীকে প্রাণীশূন্য করে ফেলতে চায় তখন এ রকম উচ্চারণ প্রাণদায়ী। এই কবিতার এক জায়গায়শ আছে: ‘একদিন বৃক্ষের জন্য সবাইকে কাঁদতে হবে।' 

এমন দণ্ডিত সময়ে রেজাউদ্দিন স্টালিনের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সচেতন করুক। কবিতার অভিকেন্দ্র বিনিদ্র হোক তার সাধনা।

ঢাকা/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়