ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সুখের হরমোন বাড়ানোর উপায়

এস এম ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৩০ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৬:৩৪, ৩০ নভেম্বর ২০২১
সুখের হরমোন বাড়ানোর উপায়

কানাডার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুসান বিয়ালির মতে, এমনকিছু হরমোন রয়েছে যা মানুষের সুখানুভূতিতে প্রভাব ফেলে এবং হরমোনগুলো জীবনযাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়। এসব হরমোনকে হ্যাপি হরমোন (সুখ হরমোন) বলা যায়।

অনেকেরই জীবনযাপন সম্পর্কে অজ্ঞানতা বা অবহেলায় সুখ কমে যায়। ফলে বিষণ্নতার মতো সমস্যায় ভুগতে হয়। বিষণ্নতার লক্ষণ থাকলে হ্যাপি হরমোন বাড়াতে পারলে সুখানুভূতি পাওয়া সম্ভব। তবে সকল প্রচেষ্টার পরও বিষণ্নতা থেকে বের হতে না পারলে থেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে।

পাঁচটি প্রধান হ্যাপি হরমোন হলো- ডোপামিন, সেরোটোনিন, অক্সিটোসিন, ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন। ডা. বিয়ালি কোন হ্যাপি হরমোন কীভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে বাড়াতে হয় তা জানিয়েছেন।

ডোপামিন 

এই হ্যাপী হরমোন হলো একটি নিউরোট্রান্সমিটার, যা মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমকে চালিত করে। কাউকে কোনো ভালো কাজের প্রশংসা করা হলে তার ডোপামিন বাড়ে। এর ফলে তিনি সুখানুভূতি পান। এই হরমোন ভালো আচরণেও উদ্দীপনা যোগায়। দেখবেন- যাদেরকে সুখী মনে হয়, তারা মানুষের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন বা হাস্যোজ্জ্বল মুখে কথা বলেন। ডোপামিন বাড়াতে নিজের কাজটাকে ভালোভাবে করার চেষ্টা করুন। কাজ ভালোভাবে সম্পন্ন হলে নিজেও নিজেকে প্রশংসা করে। এতেও ডোপামিন বাড়ে। সৃজনশীল বা কল্যাণমূলক কাজেও নিজেকে জড়াতে পারেন। এছাড়া জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে বা করতে ভালো লাগে এমন যেকোনো কাজ করতে পারেন। এমনকিছু করবেন না যা আইনের চোখে অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

সেরোটোনিন

এটি হলো মেজাজ ভালো করার হরমোন। প্রাকৃতিক উপায়ে সেরোটোনিন বাড়ানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো, প্রতিদিন শরীরচর্চা করা। এমনকি ১০ মিনিট দ্রুত হাঁটলেও মেজাজ ভালো হয়ে যেতে পারে। মানসিক স্থিরতার জন্য সকালের নির্মল পরিবেশে হাঁটাই অধিক ফলপ্রসূ। স্বাস্থ্যকর, উচ্চ আঁশের কার্বোহাইড্রেট খেলেও সেরোটোনিন বাড়ে।

অক্সিটোসিন

এই হ্যাপি হরমোনকে লাভ হরমোনও বলা হয়। নারীদের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় জানা গেছে, অক্সিটোসিন বাড়লে জীবন সন্তুষ্টিও বাড়ে। এটা পুরুষের তুলনায় নারীর শরীর ও সুখে বেশি প্রভাব ফেলে। প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটালে ও অপরের প্রতি সদয় হলে শরীরে অক্সিটোসিন বাড়ে। তাই ব্যস্ততা কমিয়ে পরিবারকে সময় দিন। এতে নিজে যেমন সুখী হবেন, তেমনি পরিবারেরও মনমানসিকতা ঠিক থাকবে। অন্তরে মানুষের প্রতি ভালোবাসার চর্চাও করতে হবে। এতেও সুখের হরমোন বাড়বে।

ইস্ট্রোজেন

এই হ্যাপি হরমোন আরেকটি হ্যাপি হরমোন সেরোটোনিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং খিটখিটে আচরণ ও দুশ্চিন্তা কমিয়ে থাকে। এটা মেজাজে স্থিরতা আনে। নারীর মেনোপজ (মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে বন্ধ) হলে ইস্ট্রোজেন কমে যায়। যাদের মেনোপজ হতে যাচ্ছে তাদের ইস্ট্রোজেনও কমতে থাকে। একারণে এসময় নারীদের খিটখিটে আচরণ বেড়ে যায়। এছাড়া ধূমপান ও তীব্র শরীরচর্চায় ইস্ট্রোজেন কমতে পারে। শরীরে ইস্ট্রোজেনের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে মানসিক চাপ (স্ট্রেস) নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারণ স্ট্রেস হরমোন করটিসোল হ্যাপি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও সেরোটোনিন নিঃসরণে হস্তক্ষেপ করে। হরমোন দুটির কার্যক্রমও ব্যাহত করে। মানসিক চাপ কমাতে প্রার্থনা, ধ্যান, যোগব্যায়াম ও সামাজিকতায় যুক্ত হতে পারেন।

প্রোজেস্টেরন

এটা ভালোভাবে ঘুমাতে, দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা এড়াতে এবং মেজাজের আগ্রাসী ওঠানামা প্রতিরোধে সহায়তা করে। যেসব নারী মেনোপজের দিকে যাচ্ছেন (সাধারণত ৩৫ বা ৪০ বছরের পর) তাদের শরীরে এই হ্যাপী হরমোন কমতে থাকে। অত্যধিক মানসিক চাপ বা অস্বাস্থ্যকর খাবারে হরমোনটির মাত্রা আরো কমে যায়। হরমোন বিশেষজ্ঞদের মতে, পুষ্টিকর খাবার খেলে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও চিনি এড়িয়ে চললে এবং মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা কমালে প্রোজেস্টেরন বাড়বে। এরপরও ব্যর্থ হলে হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির প্রয়োজন আছে।

ঢাকা/ফিরোজ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়