ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

চিরনিদ্রায় শায়িত অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৮, ১ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৮:৪০, ১ ডিসেম্বর ২০২১
চিরনিদ্রায় শায়িত অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং বাংলা একাডেমিতে জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষরা।

বুধবার (১ ডিসেম্বর) দেড়টার কিছু পরে নজরুল গবেষক, অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের মরদেহ বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে রাখা হলে তার কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর বাংলা একাডেমি থেকে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের কফিনে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুর মনসুর। এরপর বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে একাডেমির মহাসচিব মো. নুরুল হুদার নেতৃত্বে একাডেমি পরিবার, কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট, শালুক, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন ও বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 

শ্রদ্ধা জানানো শেষে অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের একমাত্র ছেলে বর্ষণ ইসলাম বলেন, আমার বাবার পুরো জীবনটাই সফলতায় ভরা। তার জীবনে আমি কখনো কোনো ব্যর্থতা দেখিনি। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের সময় বাবার ক্যামেরায় ধারণকৃত ছবিগুলোই পরবর্তীতে ইতিহাস হয়। সেগুলো যদি না থাকতো, তাহলে হয়তো আমরা অনেক ইতিহাস জানতে পারতাম না। আমি একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনো ছবিতে আপনার নাম দেখলাম না। উত্তরে বাবা বলেছেন, আমার নামের তো দরকার নেই। সবাই ইতিহাস জানতে পারছে তাতেই চলবে। 

শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে তার বাবার কবরের পাশে জাতীয় এই অধ্যাপককে সমাহিত করা হয়।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ১৯৩৪ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পরে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়, মিশিগান-অ্যান আরবর বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারে ভাষাতত্ত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন ও গবেষণা করেন।

১৯৫৮ সাল থেকে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি নজরুল গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন। অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

২০১৮ সালের ১৯ জুন বাংলাদেশ সরকার তাকে জাতীয় অধ্যাপক ঘোষণা করে। একই বছরের ৩ ডিসেম্বর তিনি কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের সভাপতি পদে যোগদান করেন। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক এই অধ্যাপক যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর বন্দিশিবিরে নির্যাতিত হন। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক তার বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা রয়েছে।

সাহিত্য চর্চা ও গবেষণার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, নজরুল একাডেমি পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া মাতৃভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, বিকাশ, চর্চা, প্রচার-প্রসারে অবদান রাখায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক লাভ করেন।

মেসবাহ/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়