ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

নদীর সুরক্ষা অপরিহার্য 

সালেক সুফী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১  
নদীর সুরক্ষা অপরিহার্য 

নদীমাতৃক দেশে বাংলাদেশের নদীগুলো কি সুরক্ষিত? নদ-নদীর সুরক্ষার বিষয়টিতে সরকারের আন্তরিক প্রয়াস মূলত জনসম্পৃক্ততার অভাবে গতি পাচ্ছে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারা সুষম আর সমৃদ্ধ করার জন্য নদী এবং নারী সুরক্ষিত করা অত্যাবশ্যক।

ভারত আর নেপালে হিমালয় থেকে সৃষ্ট গঙ্গা-যমুনা-ব্রহ্মপুত্র থেকে উৎসারিত নদী, শাখা নদীসমূহের পলিমাটি দিয়ে সৃষ্ট বাংলাদেশ নামের বেঙ্গল বেসিন এখন উজানে স্থাপিত নানা বাধার কারণে সংকটে। ভাটিতেও নেই নদীগুলো সুরক্ষার কোনো উপযোগী বাস্তবধর্মী কর্মপরিকল্পনা। আগ্রাসী গোষ্ঠীর দখল , অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, কর্ণফুলী, সুরমা, কুশিয়ারা, কপোতাক্ষসহ অনেক নদ-নদী মৃতপ্রায়। শুষ্ক মৌসুমে জল সংকট আর বর্ষায় প্লাবন নিত্যসঙ্গী। উজানে ভারত নদীর আন্তর্জাতিক নিয়ম মানছে না। অনেক আলোচনার পরেও তিস্তাসহ অভিন্ন নদীগুলোর জলবন্টনের সমাধান হচ্ছে না। প্রভাবশালী মহলের করালগ্রাস থেকেও নদীগুলো রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত হচ্ছে না।

দুনিয়ার অধিকাংশ দেশ, অধিকাংশ প্রধান শহরগুলো নদ-নদীকে ধারণ করেই বিকশিত হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, পার্থ সিটি নদীগুলোকে সুরক্ষা দিয়ে বিকশিত হয়েছে। নেদারল্যান্ডস, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি, সুইটজারল্যান্ড, জাপান, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে দেখেছি তারা নদী সুরক্ষায় এনে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কাজে লাগিয়েছে। আমাদের উজান থেকে নদীগুলোতে সারা মৌসুমে জল প্রাপ্তি, সুষম বন্টন করার জন্য ভারতের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের বিষয়টি সুদূর ভবিষ্যতে সুনিশ্চিত নয়। কিন্তু আমরা তো নিজেদের নদীগুলো সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে পারি। নিয়মিত নদী খনন করে নাব্যতা অক্ষুণ্ন রাখতে পারি, নদীগুলোকে দূষণ মুক্ত রাখতে পারি। বর্ষাকালের পানিপ্রবাহ ধরে রেখে শুষ্ক সময়ে ব্যবহার করতে পারি।

দুনিয়ার প্রায় প্রতিটি বড় শহর লন্ডন, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, আমস্টারডাম, ভেনিস, ভ্যাংকুবার নদী তীরে গড়ে উঠেছে। আমাদের শহরগুলো ঢাকা ( বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগ), চট্টগ্রাম ( কর্ণফুলী), সিলেট ( সুরমা, কুশিয়ারা ), খুলনা (পশুর, ভৈরব ), কুমিল্লা (গোমতী), রাজশাহী (পদ্মা ), চাঁদপুর (মেঘনা, পদ্মা) নদী তীরে। নদীগুলোকে প্রভাবশালীদের কবল থেকে দখলমুক্ত-দূষণমুক্ত করে, খননের মাধ্যমে নাব্যতা ধরে রেখে নানা কাজে ব্যবহার করা এখন অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। এই কাজে সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন কার্যক্রমে সব মহলকে সম্পৃক্ত করা না করার কারণে পরিকল্পনাগুলো ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে।

নদীগুলো সুরক্ষা পেলে নদীগুলোই ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহীর মতো ঘনবসতিপূর্ণ নগরীগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা, যোগযোগ, জল সরবরাহ, বিনোদন ইত্যাদিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে।  প্রকৃতি বাংলাদেশকে দুই হাত ভরে সম্পদ দিয়েছে। কিন্তু কুটিল এবং জমিখেকো কিছু মানুষের জন্য সরকারের জনসম্পৃক্ত পরিকল্পনার অভাবে প্রকৃতির আশীর্বাদ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। যদি একটি বা দুটি নদী লন্ডন, ভেনিস, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন নগরের প্রাণ স্পন্দন হতে পারে, তাহলে কেন বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু, তুরাগের মতো চারটি নদী ঢাকা মহানগরীর প্রকৃত প্রাণের স্পন্দন হতে পারবে না? কেন সুরমা, কুশিয়ারা সবুজ সিলেট গড়ায় ভূমিকা রাখতে পারবে না? কেন কর্ণফুলী চঞ্চলা চট্টগ্রাম সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারবে না? কেন পশুর, ভৈরব নদীগুলো খুলনাকে আরো সবুজ করতে পারবে না?

লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ
 

এমএম/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়