ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিশ্বে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর শীর্ষে বাংলাদেশ! আহতরা হিসেবের বাইরে

হাসান মাহামুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১০:৪৮, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১
বিশ্বে পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর শীর্ষে বাংলাদেশ! আহতরা হিসেবের বাইরে

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ মারা যায়। গড়ে প্রতিদিন মারা যায় ৪০টি শিশু। জনসংখ্যার অনুপাতে এটি বিশ্বে সর্বোচ্চ শিশুমৃত্যুর রেকর্ড। পানিতে ডুবে মৃত্যুর বিষয়টি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় এসেছে।

তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে যারা প্রাণে বেঁচে যান, তারা পরবর্তীতে যেসব শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হন তাদের নিয়ে কোনও আলোচনা নেই। এমনকি এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি কোনও সুনির্দিষ্ট উদ্যোগও নেই।

দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশে (সিআইপিআরবি) এর তথ্য মতে, পানিতে ডুবে বাংলাদেশে অন্তত এক লাখ শিশু আহত হয় এবং তাদের মধ্যে প্রায় ১৩ হাজারই পরে পঙ্গু হয়ে যায়।

এছাড়া জেলা ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনা করা কিছু প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেলেও পরবর্তী সময়ে অনেক শিশু খিচুনি, এজমা, কানে কম শুনা প্রভৃতি শারীরিক সমস্যায় ভোগেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর মূলে রয়েছে সচেতনতার অভাব। এ বিষয়ে কিছু সরকারি কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে এসব কার্যক্রম আরও জোরালো করা দরকার। পাশাপাশি বেসরকারিভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কাজ করে তাদের সরকারিভাবে সহযোগিতা করা প্রয়োজন। বিশেষ করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমকে সরকারিভাবে পাইলট প্রকল্প আকারে প্রমোট করা যেতে পারে।

তারা আরও বলছেন, যেহেতু পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে এখনো খুব বেশি সচেতনতা তৈরি হয়নি, তাই আপাতত মৃত্যুর ভয়াবহতার বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে সরকারি-বেসরকারিভাবে। কিন্তু পানিতে ডুবে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা শিশুদের পরবর্তী মানসিক ও শারীরিক প্রভাবও কম নয়। তাই আহতদের বিষয়েও কাজ করা প্রয়োজন।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু নিয়ে গবেষণা ও রোধে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর উপ-নির্বাহী পরিচালক ডা. আমিনুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, পানিতে ডুবলে ফুসফুসে পানি ঢুকে যাওয়ার ফলে শিশুর অক্সিজেন স্বল্পতা ও পরবর্তীতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের অভাব হয় এবং মৃত্যুও হতে পারে।

মস্তিষ্কে অক্সিজেন কমে গেলে শিশু সহসাই জ্ঞান হারায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রধান নালি সংকুচিত হয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেন ক্রমান্বয়ে কমে আসে। ১০ মিনিটের মধ্যে শিশুকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়া সম্ভব হলে প্রাণ রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। এভাবে বেঁচে যাওয়ার পরও শিশুর শারীরিক ও মানসিক কিছু সমস্যা পরবর্তীতে দেখা যেতে পারে। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে আলাদাভাবে প্রকল্প বা কর্মসূচী নেয়া কঠিন। তবে চলমান প্রকল্পগুলোকে জোরদার করা যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে নদী ও জলাশয় অনেক বেশি, তাই মানুষ পানির কাছাকাছি থাকেও বেশি। এছাড়া মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। কাছে জলাশয় বা পুকুর থাকলে শিশুরা যে পড়ে গিয়ে ডুবে মারা যেতে পারে, সেই বিষয়ে মানুষ সচেতন নয়। শিশুদের নজরদারির অভাব রয়েছে।

যেভাবে সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করার কথা, সেভাবে তত্ত্বাবধান করা হয় না। তবে এ ধরনের মৃত্যু প্রতিরোধে চলমান আঁচল প্রকল্পের আওতায় যেসব এলাকায় শিশুদের ডে-কেয়ারে দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় রাখা যায়, সেক্ষেত্রে ৮০ শতাংশ মৃত্যু কমে যায়। আর ১০ বছরের আগে শিশুদের সাঁতার শেখানো গেলে ৯৩ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার কমে আসে।

এদিকে, দেশে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হিসেব সেভাবে রাখার কোনও ব্যবস্থা নেই। কেউ পুলিশেও রিপোর্ট করে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত রিপোর্টিং সিস্টেম চালু করা যেতে পারে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানিতে ডুবে মৃত্যু রেকর্ড করা যেতে পারে। প্রয়োজনে স্কুলভিত্তিকও এ ধরনের রেকর্ড রাখার পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে।

এর ফলে সঠিক পরিসংখ্যান জানা গেলে, সেই অনুযায়ী সরকারের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নেয়া সহজ হবে। আর যেহেতু এসব কার্যক্রম এখনো প্রস্তাবনার পর্যায়ে রয়েছে, আহত হওয়া শিশুদের সহায়তার বিষয়টিও এই পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর নামে এক এনজিওর সমীক্ষা বলছে, গত ১৯ মাসে ১,৫১২ জন পানিতে ডুবে মারা গেছেন, তার মধ্যে ১,৩৩২ জনই ছিল শিশু এবং তাদের বয়স পাঁচ বছরের কম৷ বলা হচ্ছে, এখন বাংলাদেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া৷

হাসান/কেআই

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়