ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

পুরির রাজা টাকি পুরি 

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ৭ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৬:২৪, ৭ জানুয়ারি ২০২২
পুরির রাজা টাকি পুরি 

ভিনদেশের ‘কাঁচা বাদাম’ ভাইরাল হয়, কিন্তু দেশের ‘টাকি পুরি’ হয় না। এক আড্ডায় কথাটা কানে যেতেই কৌতূহল হলো- টাকি পুরি! আলু পুরি, ডাল পুরি, এমনকি ভেল পুরির নামও শুনেছি কিন্তু এমন পুরির কথা তো শুনিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল- এজন্য যেতে হবে পুরনো ঢাকায়। বাহারী খাবার, ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার জন্য বিখ্যাত রাজধানীর পুরনো ঢাকা। প্রায় ৪০০ বছর ধরে সুস্বাদু নানা পদের খাবারের জন্য এই এলাকার সুনাম আছে। এখানেই এমন আজব পুরি মিলবে এ আর নতুন কি! 

এক বিকেলে রাজধানীর টিপু সুলতান রোডে হাঁটতে হাঁটতে মিলে গেলো টাকি পুরির খোঁজ। হোটেলের নাম-  খান হোটেল। উপচে পড়া ভিড় হোটেলের সামনে। সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে পুরি, পিঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন চপ, ছোলা, ডাবলি বুট এবং গরম গরম জিলাপি। কিন্তু সিংহভাগ গ্রাহকের নজর ওই টাকি পুরির দিকে। কথা বলে জানা গেল গ্রাহকের অনেকে আবার অনেক দূর থেকে এসেছেন। অর্থাৎ এই পুরির সুনাম ছড়িয়েছে বিস্তর। আমিই এখানে নবাগত, অনাহুত।  

প্রায় ৬০ বছর খান হোটেল এই এলাকায় টিকে আছে। প্রতিষ্ঠাতা ইসমাইল খান মারা গেছেন অনেক আগেই। ব্যবসা সামলাচ্ছেন তার ছেলে মো. বিল্লাহ হোসেন। আগে নানা ধরনের পুরি বিক্রি হলেও টাকি পুরির এই রেসিপি তারই আবিষ্কার। সেও প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। শুধু টাকি পুরি নয়, খান হোটেলে চিকেন পুরিও মুফতে মেলে।
ভিন্ন এমন ভাবনা কীভাবে মাথায় এলা- প্রশ্ন করতেই বিল্লাহ হোসেনের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো। একটু বোধহয় লজ্জাও পেলেন। সামলে নিয়ে বললেন, ‘টাকি মাছ আমার খুব প্রিয়। এই মাছের ভর্তা আমার ছোটবেলা থেকেই পছন্দ। আমার স্ত্রী টাকি ভর্তা খুবই ভালো বানাতে পারেন। একদিন বাসায় এই ভর্তা দিয়ে ভাত খেতে খেতে আমার মাথায় টাকি মাছের পুরির চিন্তা আসে। তখন থেকেই এই পুরির যাত্রা শুরু।’ 

রেসিপি প্রসঙ্গে বিল্লাহ হোসেন জানান, প্রথমে টাকি মাছ সিদ্ধ করে তেলে ভেজে নেওয়া হয়। এরপর কাঁচা মরিচ, সিদ্ধ আলু, ধনেপাতা, পেঁয়াজ মিশিয়ে বানানো হয় কিমা। ময়দার মধ্যে কিমা গুজে দিয়ে তেলে ভাজা হয় এই পুরি। 

টাকি পুরির জন্য যেসব টাকি মাছ সংগ্রহ করা হয় তার কাঁটা সূক্ষ্ম ও সুনিপুণভাবে দীর্ঘদিন থেকে আলাদা করার কাজটি করছেন বিল্লাহ’র স্ত্রী। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন প্রায় এক ডজন কর্মী। কারণ আলু পুরি, ডাল পুরি, চিকেন পুরি, টাকি পুরি মিলিয়ে দিনে প্রায় ২৫০০ পুরি বিক্রি হয় হোটেলে। প্রতিদিন ৮ কেজি টাকি মাছ এবং ৪ কেজি চিকেন ব্যবহার হয় পুরি তৈরি করতে। ফলে এসব আয়োজন এক হাতে সম্ভব নয়। 

এই পুরির সঙ্গে খাবারের জন্য দেওয়া হয় বিশেষ এক ধরনের চাটনি। চাটনি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় টকদই, সরষেবাটা, ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচ। চাইলে সঙ্গে নিতে পারবেন টমেটো সস। প্রতিটি টাকি পুরি এবং চিকেন পুরির মূল্য ১০ টাকা। আকারেও বেশ বড়। পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ ৫ টাকা করে। সব খাবারের দাম নাগালের মধ্যেই। এছাড়াও এখানে পাওয়া যায় চিকেন চাপ যার দাম ৮০ টাকা। ছোলা এবং জিলাপি বিক্রি হয় কেজি দরে।  

বিল্লাহ বলেন, আমার ব্যবসায় লাভ খুব সামান্য। অনেকেই পরিমাণে কম দিয়ে লাভ বেশি করে- বিষয়টি আমার ভালো লাগে না। হাতের নাগালের মধ্যে আমার এখানে সব পাওয়া যায় বলে ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে। তাছাড়া রান্নায় যে তেল ব্যবহার করা হয় তা একদম পিওর। একদিনের তেল আরেকদিন ব্যবহার করা হয় না বলে স্বাদটা হয় ভিন্ন।  

সকাল ৭ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে হোটেল। তবে টাকি পুরির স্বাদ নিতে চাইলে যেতে হবে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যার মধ্যে। মিরপুর থেকে টাকি পুরি খেতে আসা শরিফ আহমেদ বলেন, আমি প্রায়ই সময় পেলে এই পুরি খেতে আসি। দারুণ স্বাদ! ‘পুরির রাজা’ বলতে পারেন। প্রথমে তো আমি ভাবতেই পারিনি টাকি মাছ দিয়ে আবার পুরি হয় নাকি! খাবার পর বিশ্বাস হয়েছে। হোটেলের সামনে মুদি দোকানদারি করেন শফিক মিয়া। তিনি টাকি পুরি খাওয়াটা প্রায় নিয়ম বানিয়ে ফেলেছেন। ‘চোখের সামনে ভাজে না খাইয়া থাকতে পারি না’ হাসিমুখে বললেন তিনি। 

ও হ্যাঁ, আধুনিক এই সময়ে, আপনাকে যে টিপু সুলতান রোডের ১৫/১৪ নাম্বার লেনে গিয়ে টাকি পুরির স্বাদ নিতে হবে এমন নয়, পাঠাও, ফুডপান্ডা এবং সহজে অর্ডার করেও নিতে পারবেন খান হোটেলের টাকি পুরির স্বাদ। 

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়