তারাও আর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়
‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই প্রত্যয়ে তার আবেগের প্রকল্প ‘আশ্রয়ণের’ মাধ্যমে দুই ধাপে ঘর পেয়েছেন এক লাখ ২৩ হাজার ২৪৪টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। তৃতীয় ধাপে ঘর পাবে আরও ৬৫ হাজার ৪৭৪টি পরিবার। এতে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর করে দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মতো সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্যও রয়েছে ঘর দেওয়ার প্রকল্প। এতে বদলে যাচ্ছে তাদের জীবনযাত্রার মান। উঠে আসছে সমাজের মূলস্রোতে।
রুপকল্প-২০৪১ কে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর সুদুরপ্রসারী ও অভূতপূর্ব এসব কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে উপকারভোগী হচ্ছেন নিঃস্ব এই মানুষগুলো, বদলে যাচ্ছে তাদের জীবন তা সরেজমিনে দেখেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক এসকে রেজা পারভেজ। রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সাভারের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসে পরিবর্তনের সেসব গল্পের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব।
সকাল থেকে দারুণ উচ্ছ্বসিত মধু মালা। রাতে মেয়ের বিয়ে তাই শেষ মুহূর্তে সব প্রস্তুতি চলছে। রান্না-বান্না, অতিথি আপ্যায়ন-এগুলো নিয়ে দম ফুরোনোর ফুসরত নেই তার।
অথচ এক বছর আগেও আকাশের কালো মেঘের মতো তার মনের কোনে ভর করতো আশঙ্কা, আতঙ্ক। ঘরহীন-গৃহহীন ঘরের মেয়েকে কে বিয়ে করবে? আজ মধু মালার সব হয়েছে। ঘর হয়েছে। জমি হয়েছে। মেয়ের বিয়েও হচ্ছে।
মধু মালার কাছে এক বছর আগে আর পরের গল্প শুনতে চাইলে তিনি জানান, কোনরকম সরকারি জমিতে জোড়াতালি দিয়ে পরিবারের সবাই নিয়ে থাকতেন। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়তো। সারারাত ঘুমাতে পারতেন না। এখন ঝড়-বৃষ্টিতে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারেন। সবচয়ে বড় কথা মেয়ের বিয়েটাও দিতে পেরেছেন।
শুধু মধু মালা নয়, সমাজের পিছিয়ে পড়া সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এমন হাজার হাজার পরিবারের জীবন বদলে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র মাধ্যমে। সমাজের মূলস্রোত থেকে হারিয়ে যেতে বসা এসব মানুষ এখন পরিচিত হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার সঙ্গে। ঘরে ঘরে সংযোগ দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ। তাদের সন্তানরা স্কুলে শিক্ষা গ্রহণ করে আলোকিত হচ্ছেন। কেউ হাত পাতেন না, কর্মসংস্থান করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
সম্প্রতি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে কাদিপুর মোজা এলাকায় এমন কয়েকজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবারের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা শোনান তাদের বদলে যাওয়া জীবনের গল্প।
রবিদাস সম্প্রদায়ের সীতা রানী আগে রেলের জমিতে কোনো রকম ভাঙা টিন, প্লাস্টিক আর ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়ে মাথাগোঁজার ঠাই বানিয়েছিলেন। দুই সন্তান নিয়ে শীতে জবুথবু, বৃষ্টিতে সীমাহীন ভোগান্তি আর গরমে হাসফাস করে কাটতো জীবন। জীবন টেনে নিয়ে যাওয়ায় যেখানে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ ছিলো সেখানে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াতো বিলাসিতা। প্রধানমন্ত্রীর উপহার নতুন ঘর পেয়ে এখন দুই ছেলে মেয়ে স্কুলে যায়। স্বামী সেলুনে কাজ করে চালায় সংসার। খুবই ভালো আছেন তারা এখন।
পরিবার পরিজন নিয়ে এখন খুব ভালো আছেন উপকারভোগী আরেকজন দর্শনা রানী। প্রধানমন্ত্রীর ঘর উপহার পেয়ে আর যাই হোক মাথার ওপর ছাদ আছে, তাই জীবনে উন্নতির স্বপ্ন দেখেন তিনি।
‘আগে ঘরে পানি পড়তো। এখন ভগবান খুবই ভালো রাখছে। পরিবর্তন আছে। আস্তে আস্তে যাতে আরও উন্নতি করতি পারি। শুইতে পারতাম না রাইতে, পানি পরতো। এই যে শেখ হাসিনা ঘর দিয়েছে, এখন সুখী আছি। এখন দিনমজুরি করে খাইতে পারছি। চারপাঁচজন মানুষ খাইচ্ছে। আগে সিকিও ভালো ছিলো না। এখন অনেক ভালো আছে।’, স্থানীয় ভাষায় এভাবেই বলছিলেন দর্শনা।
আগে অন্যের জমিতে চাষাবাদ করে কোনো রকম টেনে টুনে চলতো সংসার। শেষ বয়সে শান্তির নীড়ে স্বস্তির কথা জানান বার্ধক্য গ্রাস করা দর্শনা।
স্বামীকে নিয়ে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করা নারীর আরেকজন স্বরস্বতী। সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অনেকের মতো ঘর পেয়েছেন তিনিও। এক মেয়ে নিয়ে এখন সুখী সংসার তার। স্বামী জুতার কাজ করেন।
দিনবদলের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাড়ি পেয়ে খুশি আছি। আগে ছিলো কষ্টের দিন। ঘরে পানি পড়তো। হাটের এক কোনে মাটির ঘরে ছাপরা ছিলো। শেখ হাসিনা বাড়ি দিয়েছেন। ধন্যবাদ দিতে চাই।’
দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠীর ঘর পাওয়ার পর কিভাবে নিজের জীবন পরিবর্তন করছেন তা দেখেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু ঘর দিয়েই থেমে যাননি। উপকারভোগীরা কিভাবে আছেন, কিভাবে তাদের উন্নতি হতে পারে; তা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছেন এবং কাজ করছেন। সমতল কিংবা পাহাড়ে, যেখানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে। তারা যাতে সমাজের মূলস্রোতে চলতে পারে, স্বচ্ছলভাবে জীবনধারন করতে পারেন, সেজন্য নানামুখী পদক্ষেপও নিচ্ছেন।’
এ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, ঘর পাওয়ার পর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে দল বেধে। এজন্য আমরা তাদের সাইকেল দিচ্ছি। যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছে, তাদের লেখাপড়ার খরচ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের মাধ্যমে।
/পারভেজ/এসবি/
আরো পড়ুন