ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সত্যজিৎ, চলচ্চিত্রে যার সাহিত্য আস্বাদ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২৩ এপ্রিল ২০২২  
সত্যজিৎ, চলচ্চিত্রে যার সাহিত্য আস্বাদ

সত্যজিৎ রায় বাংলা চলচ্চিত্রের নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হলেও সাহিত্য, চিত্রকলা, নাটক, সংগীত- এসব বিষয়েও তিনি ছিলেন অনন্য প্রতিভার অধিকারী। চলচ্চিত্রের এই কিংবদন্তি নির্মাতার ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। 

সত্যজিৎ রায় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল প্রয়াত হন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়াও শিল্পকলার নানা শাখায় ছিলো তার স্বাচ্ছন্দ্য বিচরণ। বাংলা সাহিত্যে ফেলুদা আর প্রফেসর শঙ্কুর মতো অবিস্মরণীয় চরিত্র তারই সৃষ্টি। তিনি সাহিত্য ও চলচ্চিত্রকে চমৎকার এক বাঁধনে জড়িয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায়ও ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। তার পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন একাধারে লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও জ্যোর্তিবিদ। বাংলা শিশু সাহিত্যে যার রচনাশৈলী আজও প্রশংসা কুড়াচ্ছে। 

সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায়। তার আদিপুরুষরা ছিলেন বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জের। উনিশ শতকের শেষভাগে তিনি এদেশ থেকে সপরিবারে কলকাতায় চলে যান উপেন্দ্রকিশোর। 

মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছিলেন। মা সুপ্রভা দেবীর ইচ্ছাতেই শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।

কর্মজীবনে বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণের প্রচ্ছদ আঁকতে গিয়ে বইটিতে তিনি ভীষণ মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে এ উপন্যাসটি নিয়েই চলচ্চিত্র নির্মাণে পা বাড়ান তিনি। ছবিটি যেমন দর্শক প্রশংসা পায় তেমনই কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্টারি হিসেবে পুরস্কৃত হওয়াসহ ১১টি আর্ন্তজাতিক পুরস্কার পায় । 

এরপর ‘অপরাজিত’ তাকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক পরিচিতি এনে দেয়। ছবিটি ইতালির ভেনিসের বিখ্যাত গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার লাভ করে। এরপর একে একে নির্মাণ করেন  ‘অপুর সংসার’, ‘পরশপাথর’, ‘জলসাঘর’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘দেবী’, ‘মহানগর’, ‘অভিযান’, ‘কাপুরুষ’, ‘মহাপুরুষ’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’, ‘সীমাবদ্ধ’, ‘জনারণ্য’, ‘হীরক রাজার দেশ’, ‘গণশত্রু’, ‘শাখা প্রশাখা’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয়বাবা ফেলুনাথ’ও  ‘আগুন্তক’। আর ডকুমেন্টারি ফিল্ম, শর্ট ফিল্ম, ফিচার ফিল্মসহ সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করেছেন মোট ৩৭ টি ছবি। তাকে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। চলচ্চিত্র পরিচালনায় তার অসাধারণ নৈপুণ্য এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি বাংলা চলচ্চিত্রে একটি নতুন মাত্রা তৈরি করেছিল।

ভারতীয় চলচ্চিত্র প্রাবন্ধিক শঙ্করলাল ভট্টাচার্য লেখেন- তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ একজন মানুষ এবং তার সেই সম্পূর্ণতাকে পাওয়া যায় তার ছবিগুলোতে। সব বিষয়ে তার অসামান্য একটা দখল ছিল। তিনি মিউজিক জানতেন, এডিটিং জানতেন, স্ক্রিপটিং জানতেন, ডিরেকশন তো জানতেনই। ফটোগ্রাফি, সিনেমাটোগ্রাফি জানতেন। এই যে একটা ছবিকে সম্পূর্ণ নিজের মত করে করা -ছবি তৈরির সবদিকে নিজেকে সম্পূর্ণ ঢেলে দেওয়া- এটা বিরল। এসব কারণেই তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের একজন না বলে কোন উপায় নেই।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়