ক্ষেত ভরা দৃষ্টিনন্দন মৌরি ফুল আর সুঘ্রাণ বাতাসে
মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম
মৌরি ক্ষেতে কৃষক
ক্ষেত ভরা মৌরি ফুলের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য আর সুঘ্রাণ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ক্ষেতের কাছে গেলেই মন ভরে যায়। এ চিত্র খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার পল্লীর।
সবজির পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে মৌরি চাষ বেশ লাভজনক। চাহিদা থাকায় অধিক মুনাফার আশায় বিকল্প এই ফসল চাষে আকৃষ্ট হচ্ছেন কৃষক। এই ফসল চাষে অতিরিক্ত মুনাফায় কৃষকের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে। এ কারণে খুলনায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মৌরি চাষ।
খুলনার ডুমুরিয়ায় এ বছর ২০ হেক্টর জমিতে মৌরি চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ২২ মেট্রিক টন ফলন হয়েছে। এই ফসল পান মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্থানীয়ভাবে একে গুয়ামুরিও বলা হয়। এখানে এখন বাণিজ্যিকভাবেই চাষ হচ্ছে মৌরি। এবার প্রায় ৯ লাখ টাকার মৌরি বিক্রি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শীতের সবজি তোলার পর পতিত জমিতে কৃষক কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা থেকেই মৌরির চাষ হয়ে আসছে। আলাদা ভাবে সার সেচ কিছুই লাগে না। খুলনার মধ্যে শুধুমাত্র ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরঘোনা, আরশনগর, আটলিয়া ও মালতিয়াসহ কয়েকটি গ্রামে এর চাষ হচ্ছে। গড়ে প্রতি হেক্টরে ১ মে. টনের বেশি ফলন হয়েছে।
এটিকে বোনাস ফসল হিসেবে নিয়েছেন এখানের চাষিরা। কারণ, শীত মৌসুমে বাঁধা ও ফুল কপি রোপণ করার পর ক্ষেতে সারিবদ্ধ ভাবে ফাঁকা করে চারা রোপণ করা হয়। ক্ষেত থেকে কপি তোলার পর ক্ষেতেই গাছ বেড়ে ওঠে। এজন্য বাড়তি সার, সেচ ও কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সুগন্ধযুক্ত উচ্চমূল্যের এই মৌরি দৈনন্দিন রান্নার কাজেও ব্যবহার হচ্ছে। পাঁচ ফোঁড়নের এক ফোঁড়ন মৌরি। এতে ঔষধি গুণও বিদ্যমান। পাইকাররা ক্ষেতসহ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে কৃষকদের ফসল বিক্রির জন্য দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়না।
কৃষকরা জানান, জমির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য এলোমেলো করে নকশা ব্যবহার করে বাঁধাকপি, ফুলকপি ও অন্যান্য ফসলের সাথী ফসল হিসেবে মৌরি চাষ লাভজনক। এই গাছের পাতা, বীজ, কন্দ, শিকড় কোনো কিছুই ফেলনা নয়। বর্তমানে মৌরির কন্দ ইউরোপে সর্বাধিক জনপ্রিয়। মৌরির ফল বা বীজ মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মাছ-মাংসের তরকারি, আচার, পিঠা, রকমারি মিষ্টি খাবারে মৌরি ব্যবহৃত হয়।
মৌরি ক্ষেতে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাদ্দেক হোসেন
এর গাছ দুই থেকে পাঁচ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। ফুল দেখতে অনেকটা খোলা ছাতার মতো। সাধারণত ফুলের রঙ হলুদ আর সাদা হয়ে থাকে। পাতাগুলো চিরল, মসৃণ এবং পাখির পালকের মতো। চাষের জন্য বেলে, বেলে দো-আঁশ মাটি ভালো। জমি একটু উঁচু সুনিষ্কাশিত হলে ভালো হয়।
ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরঘোনা গ্রামের চাষি মো. আ. আজিজ মোড়ল, শরিফুল মালঙ্গী, মফিজুর মোড়ল, মনসুর মোড়ল ও বেলাল মোড়ল এরা জানালেন, মৌরি তাদের জন্য লাভজনক ফসল। এ বছর ফলন ভালো হলেও বৃষ্টির জন্য সামান্য ক্ষতি হয়েছে। প্রতি কেজি পাইকারি ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এবিষয় উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শও পাচ্ছেন তারা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, শীত মৌসুমে বাঁধা ও ফুলকপি কাটার পর ক্ষেতে মৌরি গাছ বড় হতে থাকে। মৌরি অর্থকরী ফসল।
/টিপু/
আরো পড়ুন