ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কাঁঠালের বাম্পার ফলনে খুশি হবিগঞ্জের বাগানিরা

মো. মামুন চৌধুরী, হবিগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ২৯ জুন ২০২২  
কাঁঠালের বাম্পার ফলনে খুশি হবিগঞ্জের বাগানিরা

গাছ থেকে কাঁঠাল নামিয়ে পিকআপে করে বাজারে নেন বাগান মালিকরা

আষাঢ় মাস চলছে। গাছে গাছে পাকা কাঁঠালে ভরে গেছে। হাটবাজারগুলোতে এখন পুরোদমে বিক্রি হচ্ছে এই ফলটি। এবারও পাহাড় ও হাওর অধ্যুষিত হবিগঞ্জ জেলায় কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভালো পাওয়ায় তাই খুশি চাষিরা।

পাহাড়ি টিলা আর সমতলে চাষ হওয়া পুষ্টিগুণে ভরা কাঁঠাল বিক্রির জন্য এখন পাইকারি বাজারে নিতে শুরু করেছেন বাগান মালিকরা। কাঁঠাল বেচা-কেনার এখনই সঠিক সময়। বিভিন্ন স্থান থেকে সুস্বাদু এ ফলটি কেনার জন্য ক্রেতারা ভিড় জমাচ্ছেন ফলের বাজারগুলোতে।

জানা গেছে, হবিগঞ্জ জেলার পাহাড়ি এলাকায় রয়েছে অনেকগুলো কাঁঠালের বাগান। এছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনা আর রাস্তার পাশেও দেখা যায় অসংখ্য কাঁঠাল গাছ। 

জেলার নবীগঞ্জ, চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবল উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার কাঁঠাল সংগ্রহ করেন চাষিরা। এরপর এসব কাঁঠাল জেলার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাহুবল উপজেলার মুছাই ও চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়ার বাজারে নিয়ে আসা হয়। এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটি আড়ত। এসব আড়তে প্রতিটি কাঁঠাল ৫০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা হিসেবে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হয়।

ছোট আকারের কাঁঠাল প্রতি শ বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ও বড় কাঁঠাল প্রতি শ’ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। পাইকাররা এ কাঁঠাল মুছাই ও চন্ডিছড়া থেকে ট্রাক ভর্তি করে হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে থাকেন।

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলার প্রায় ৩ হাজার একর জমিতে কাঁঠালের ফলন হয়েছে। প্রতি একরে উৎপাদনের পরিমাণ ৫ থেকে ৬ মেট্রিক টন। 

মুছাই’র ফলের আড়ত মালিকরা জানান, এ বছর কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। কাঁঠাল বিক্রি করে লাভ হওয়ায় চাষিরা আনন্দই পাচ্ছেন।

চুনারুঘাটের কালেঙ্গা পাহাড়ের কালিয়াবাড়ি পুঞ্জির হেডম্যান বিনয় দেববর্মা, নবীগঞ্জের দিনারপুরের সজল মিয়া, বাহুবলের রশিদপুরের তোরাব আলী মোল্লা জানান, তাদের বাগানে সহযোগী ফসল হিসেবে কাঁঠাল উৎপাদন করা হয়। কাঁঠাল উৎপাদন করতে আলাদা যত্ন নিতে হয় না বলে উৎপাদন খরচও কম। এ বছরও কাঁঠালের ভালো ফলন হয়েছে। দামটাও ভালো হওয়ায় তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘বিষমুক্ত তাজা কাঁঠাল ক্রয় করার জন্য মুছাই ও চন্ডিছড়া যেতে হবে। এ বাজারে পাহাড়ি কাঁঠাল পাওয়া যায়। প্রতিদিন ক্রেতারা মুছাই ও চন্ডিছড়ার কাঁঠাল বাজার বিচরণ করছেন। আমিও ২০০ টাকায় একটি কাঁঠাল কিনেছি। খেয়ে তৃপ্তি পেয়েছি।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) জাতীয় পরিষদ সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, ‘কাঁঠাল বাংলাদেশের জাতীয় ফল। এই ফলের স্বাদে যেমন অনন্য তেমনি পুষ্টিতেও ভরপুর। তাই সব স্তরের লোকজনের কাছেই কাঁঠাল অত্যন্ত প্রিয়। বিশেষ করে এই সময়ে গ্রামের দরিদ্র লোকজনের প্রধান খাদ্য তালিকায় চলে আসে কাঁঠাল। তারা বাজার থেকে কাঁঠাল এনে পরিবারের সবাই মিলে একবেলা পেট ভরে কাঁঠাল খেয়ে থাকেন। কাঁঠালের বীজ শুকিয়ে তারা সবজি হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি কাঁঠালের যে উচ্ছিষ্ট অংশ তাও ব্যবহার করা হয় গো-খাদ্য হিসেবে। অর্থাৎ একটি কাঁঠালের বহুমুখি উপযোগ ভোগ করেন তারা।’

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তমিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘কাঁঠাল ফলের ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে প্রশিক্ষণের। কাঁঠাল উৎপাদন করলে একই সঙ্গে ফসল এবং কাঠ পাওয়া যায়। কাঁঠাল গাছের পাতা থেকে শুরু করে প্রতিটি অংশ ব্যবহার করা যায় বলে অন্য ফলের তুলনায় এটি লাভজনক। এছাড়াও কাঁঠাল গাছেন তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না। একটি গাছ বহু বছর পর্যন্ত ফলন দেয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘বন্যা মুক্ত এলাকায় কাঁঠালের বাগান করা উচিত। কারণ দীর্ঘদিন এই গাছ পানি সহ্য করতে পারে না।’

হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মুখলিছুর রহমান উজ্জল বলেন, ‘ফলের রাজা আম হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর সব ফলের রাজা কিন্তু কাঁঠাল। এটি একটি সুস্বাদু রসালো ফল। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় এ ফলটি। এতে বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন-এ, সি, বি-১, বি-২, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা পুষ্টি ও খনিজ উপাদান রয়েছে। এগুলো আমাদের শরীরকে সুস্থ ও সবল রাখার পাশাপাশি ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ করে। শুধু দাঁত ও হাড় সুস্থ রাখতে নয়, বরং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতেও সাহায্য করে কাঁঠাল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় কাঁঠাল।’ 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়