ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আবাসভূমির তিক্ত-মধুর দিনগুলি

মঞ্জু সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:৩৫, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
আবাসভূমির তিক্ত-মধুর দিনগুলি

জন্মের পর মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী জেনেও এই পৃথিবীর এক কোণে স্থায়ী হবার জন্য মানুষের স্বপ্ন ও সংগ্রাম চিরকালীন সত্য। এই স্বপ্ন ও সংগ্রাম তরুণ বয়সেই তীব্রভাবে দোলা দিয়েছিল অন্তরে। তার সঙ্গত কারণও আছে। ঢাকায় কিছুদিন নিজের ভাসমান জীবন ও ছিন্নমূল মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার স্মৃতিচারণ করেছি ভিন্ন এক নিবন্ধে। তখন শিকারী বুনো মানুষের মতো খাদ্যের সন্ধান বড় সমস্যা হলেও, এই শহরে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন ও সংগ্রামটা অন্তস্থলে সুপ্ত অবস্থায় ছিল বোধহয়। মানুষের পাকা দালানবাড়ির জানালার পর্দা উড়তে দেখে, বারান্দায় কি পর্দার আড়ালে নিরাপদ সুখের সংসার দেখে মন আনচান করত। আহা! কবে যে হবে এ নগরীতে আমারও এরকম একটি ঘর। স্থায়ী নিরাপদ ঠিকানার সুপ্ত স্বপ্নটা উপ্ত হয়ে ওঠে আসলে বিয়ের পর।

ভাড়া বাসায় টবের মধ্যেও স্ত্রী লাউ-পুঁইয়ের চারা লাগিয়ে  যেমন জলসিঞ্চন করেন, মাথা গোঁজার স্থায়ী ঠিকানার স্বপ্নের বীজটাকেও তেমনি সারপানি দিয়ে প্রস্ফুটিত করে তোলেন। কারণ বিয়ের পর এক দশক না পেরুতেই, দু’সন্তানের জনক-জননী হতে না হতেই আমাদের অন্তত আটটা বাসা পাল্টাতে হয়েছে। ভদ্রলোকদের ঘন ঘন বাসা বদলে ঠেলাগাড়ি-ভ্যানওয়ালাদের পোয়াবারো হয় বটে, কিন্তু সংসার ভেঙে নতুন করে  সাজানোর ঝক্কিঝামেলা সব স্ত্রী দেবীকেই সামলাতে হয়। আমি চাকরি ও লেখলেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। সংসারে সচ্ছলতা নেই। অতএব কানের কাছে ঘুরেফিরে স্ত্রীর একই কেত্তন: মাসে মাসে এতগুলি টাকা যদি ভাড়া দিতে না হতো! তা হলে কোনোরকমে চলে যেত। আমি না হয় জেনেশুনে বিষ খাওয়র মতো তোমার সাথী হয়েছি, কিন্তু পেটের দুটির ভবিষ্যৎ? কোথায় ভেসে যাবে ওরা?

কাঁহাতক এরকম গান আর ভালো লাগে। কারণ ততদিনে লেখক হিসেব একটু-আধটু নামখ্যাতি হলেও, বুঝে গেছি হুমায়ূন আহমেদ আমি হতে পারব না, হতেও চাই না। আর চাকরিতে যে ধরাবাঁধা বেতন, তা দিয়ে সংসার চালাতে প্রতি মাসেই হিমশিম খাই। অফিসে সরাসরি ঘুষ না খেয়েও ক্ষমতাসীনদের মোসাহেবি ও দুর্নীতি-অনিয়মে শরিক হয়ে কিছু বাড়তি রোজগারের ধান্ধা করা যায় বটে, করছেও অনেকে। কিন্তু এমন দুনাম্বারী কাম দূরে থাক, যারা এসব করে তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করি। আমি আবার স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানটির রেজিস্ট্রার্ড কর্মচারী ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ছিলাম কিনা! এই ইউনিয়ন আবার কমিউনিস্ট পার্টির ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রেও এফিলিয়েটেড ছিল। যাক, এসব ইউনিয়ন, সংগঠন-রাজনীতির অভিজ্ঞতার কথা ভবিষ্যতে লেখা যাবে। এখন আবাসভূমির গল্পটা শেষ করি। কথায় আছে না- ‘পাছায় নেই চাম, মুখে  রাধাকেষ্টের নাম!’ আমার স্বভাবটাও নাকি এরকম। স্ত্রী  প্রায়ই এরকম বাগধারায় খোঁচা দেন। কারণ আয়-উন্নতি কম হলেও, চাপার জোরে হাতিগণ্ডার মারতাম। স্বপ্নের তেজ ছিল ষোলোআনা। প্রায়ই বলতাম, মাথা গোঁজার মতো একটা বাড়ি করা কোনো ব্যাপার হলো! দুদিন দেরি করো, ঢাকায় তোমাকে অবশ্যই একটা বাড়ি বানিয়ে দেব।
ভাগ্যদেবতার চক্রান্তে তিনি আমার জীবনসঙ্গিনী হয়ে, সেই বাসররাত থেকেই আমার স্বপ্নের রথে চড়ে আকাশপাতাল ভ্রমণ করে অনেক নাকানি-চুবানি খেয়েছেন ততদিনে। বিশ্বাস করতে পারেন না। তখন এক বিকল্প মুক্তির পথ মাথায় এলো।

বাবা ত্যাজ্যপুত্র করার ত্রেুাধে বাড়িছাড়া করেছিলেন বটে, বিয়ের পর  যোগাযোগ ও সম্পর্কটা ক্রমে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। আমার লক্ষ্মী স্ত্রীর ভূমিকায়, নাতি-নাতনির টানেও খানিকটা, আব্বা আমার অতীতের অবাধ্যতা ক্ষমা করে দিয়েছেন। এই সুযোগে ভাবলাম, একাডেমিক ডিগ্রির তোয়াক্কা করিনি, তোষামদ করাটাকে সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ ভাবি, অতএব চাকরিতে আমার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এ অবস্থায় ছোটখাটো পদবীর তুচ্ছ চাকর-বাকর হওয়ার চেয়ে গ্রামে গিয়ে স্বাধীন কৃষক হওয়াই তো ভালো। 

দাদাদের ছিল জোতদারি, শরিকদের মধ্যে ভাগাভাগির পর আমাদের জমির পরিমাণ সঠিক জানি না। পিতা নিজে কৃষিকাজ করেন না। ইউনিয়নের মাতবরি নিয়েই ব্যস্ত। জমিগুলো বর্গাদার চাষ করে, বাড়ির বাঁধা কামলা দিয়েও চাষাবাদ হয় কিছুটা। এ অবস্থায় আমি যদি নিজেদের জমির দায়িত্ব নিয়ে আধুনিক কৃষক হই, চাকরির বেতনের চেয়েও বেশি আয় করব অবশ্যই। কৃষিকর্মের ফাঁকে, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধায়ের মতো গ্রামের বাড়িতে বসেও গ্রাম-জীবন নিয়ে মহৎ সাহিত্য করতে পারব। 
স্ত্রীকে হিসাব কষে বোঝাতে লাগলাম। রাজনৈতিকভাবে আমি দেশের সর্বহারা শ্রেণীর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার চেষ্টা করছিলাম তখন। সর্বহারাদের অস্তিত্ব তো গ্রামেই বেশি। আর স্ত্রীর ঢাকায় মাথা গোঁজার মতো দুই শতাংশ জমিতে নিজস্ব বাড়ির স্বপ্ন এবং ভাড়া বাসার টবে সবজি ফলানোর শখ গ্রামের মস্ত বাড়িভিটায় গেলে তুচ্ছ হয়ে যাবে। টবের বদলে ভিটার বিঘা জমিতে কতো কি ফলাতে পারবে! আমার  জন্মগত আর একটা ব্যারাম বলা যায়, মাথায় যখন যে পেকা ঢোকে, সহজে বেরুতে চায় না। বন্ধু কায়েস আহমেদও অনেক বুঝিয়ে দমাতে পারলেন না। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ভাড়া বাসা ছেড়ে দিলাম। বুকসেলফ ও টুকটাক সাংসারিক কিছু জিনিসপত্র দান করলাম বন্ধু খোকনের নতুন সংসারে। তবে চাকরিটা একেবারে ছাড়লাম না। লম্বা ছুটি নিয়ে তল্পিতল্পা ও স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে চললাম জন্মভূমির স্থায়ী ঠিকানায়। 
বেড়াতে নয়, একেবারে এসেছি জেনে পিতা থেকে শুরু করে গ্রামবাসী সবাই আমার ক্ষমতাকে সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমি কাজ শুরু করলাম।

বাড়ির বড় ছেলে, আমার পরবর্তী সঞ্জু ঢাকায় ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকলেও, অবশিষ্ট আট ভাইবোনেরা সবাই লেখাপড়ার লাইনে। অতএব সংসারের হাল ধরায় বাবা-মা এক দিক দিয়ে খুশি। আমাকে সন্দেহ করলেও, সংসার-নিপুণা স্ত্রীর উপর সম্পূর্ণ আস্থাশীল ছিলেন তারা। অন্যদিকে সংসারের হাল ধরতে আক্ষরিক অর্থেই, ভালো এক জোড়া বলদ কিনে কামলা-কিষাণদের সঙ্গে নিজেও হালের মুঠো ধরি। হাল বাওয়া, গাভীর জন্য ঘাস কাটা, মোষের পিঠে চড়ে বেড়ানো প্রাইমারিতে পড়ার সময়েই শিখেছিলাম। খেটে খাওয়া গরিবদের সঙ্গে একাত্মতার বোধ বাড়াতে কামলাদের সঙ্গে ক্ষেতের কাজে নিড়ানী দিতে যাই। আড়ালে লোকজন হাসিঠাট্টা আর কতো কথা বলে! বলুক। আমি যে আমার গল্পের মঙ্গাক্রান্ত বঞ্চিত মানুষের স্বার্থের একজন প্রতিনিধি, প্রমাণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু ওরা অনেকেই এই দুর্বলতার সুযোগে আমাকে ঠকাতেও চেষ্টা করে। যারা নিবেদিত প্রাণ হয়ে বাম-বিপ্লবী রাজনীতি করে, তাদের দৃষ্টিতে হয়তো সর্বহারা মাত্র আত্মীয়তুল্য আপনজন, আর ধনী মানে ঘৃণিত শোষক। কিন্তু গ্রামে কয়েক মাসের মাঝারি গেরস্তের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে টের পাই, কামলারা সুযোগ পেলে গেরস্তকেও উত্তমরূপে ঠকাতে কসুর করে না। কয়েকজন কামলাকে তো প্রতারক খারাপ মানুষ হিসেবেও চিনে ফেলি।

গ্রামে যাওয়ায় আমার পাঁচ/ছয় বছরের শিশু পুত্রের সময়টা আনন্দে কেটেছে। ঢাকায় গৃহবন্দি হয়ে ছিল। কিন্তু গ্রামে গিয়ে যেদিকে খুশি ছুটতে পারে। সমবয়সী খেলার সাথীদের সঙ্গে মিলেমিশে গ্রামীণ প্রকৃতি আবিষ্কারে বেশ ব্যস্ত বৈজ্ঞানিক ও শিকারী হয়ে উঠেছিল যেন। আমার মোড়ল পিতাও বড় আদুরে শিষ্য পেয়ে খুশি ছিল। অবশ্য প্রায়ই ডায়রিয়া-আমাশয় ইত্যাদির প্রকোপ সহ্য করতে হয়েছে বাচ্চাদের। স্ত্রীও  বাড়ির ভিটায় শাক-সবজি আবাদ করেছিল প্রচুর। সব মিলিয়ে আমাদের যৌথ চেষ্টায় বছরখানেকের মধ্যে আয়-উন্নতির লক্ষণ দেখতে পাচ্ছিল সবাই। কিন্তু  কী কারণে জানি না, গ্রামে আমার অবস্থান ও উন্নতি সহ্য করতে পারেনি কিছু মানুষ। ঘরে একদিন সিঁধ কেটে চোর কি ডাকাত ঢুকে অনেক কিছু নিয়ে গেল। এই চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এমন কিছু ঘটনা ঘটতে লাগল, আব্বাও আবার আমার উপর বিরক্ত হয়ে বললেন, গ্রামের পলিটিক্স সমাজ কিছুই বুঝিস না তুই। গ্রামে বসবাসের যোগ্যতা নেই তোর। মার্ডার কেসের আসামি হয়ে জেলে যাবি। তারচেয়ে বউবাচ্চা নিয়ে তুই  আবার ঢাকা ফিরে যা।

ভাগ্যিস জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের চাকরিটা তখনও ছাড়িনি। তিন/চার মাস পরপর ঢাকায় গিয়ে নানা অজুহাত দেখিয়ে নানারকম ছুটি বাড়িয়ে চলছিলাম। একাকী ঢাকায় ফিরে এসে মেসে উঠলাম আবার। স্ত্রী-সন্তানদের আনার জন্য নতুন করে সংসার ফাঁদার ব্যবস্থা করলাম মাস দুয়েকের মধ্যে। পরিবারকে নতুন ভাড়া বাসায় তোলার জন্য স্টেশনে গিয়ে তাদের সঙ্গে যখন মিলন হলো, দুই বছরের কন্যা আমার কোলে উঠেই আমাদের গাঁয়ের ভাষায় বলেছিল ‘আব্বু, তোমার বাদে ব্যাল আর তেইতল আনছোঁ মুই।’

জন্মভূমিতে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ছফা ভাইয়ের তাড়ায় এক মাসের মধ্যে ‘তমস’ উপন্যাসটি লিখে দিয়েছিলাম। কিন্তু লেখালেখি করে বৃদ্ধ বয়সে প্রায় শত গ্রন্থের গ্রন্থকার হয়েও রয়ালটির টাকায় সংসার চালাতে পারি না, তখন চার-পাঁচটা বই থেকে আর কী আয় হবে? এদিকে অফিসে নতুন করে ইউনিয়নের হাল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রচলিত আর্থিক সুযোগসুবিধা গ্রন্থকেন্দ্রেও কার্যকর করার দাবি-আন্দোলন করতে লাগলাম। হাউস বিল্ডিং লোন, মোটরসাইকেল লোন পাওয়ার সুযোগ হলো। এসব লোন বাবদে সব মিলিযে তখন প্রায় ষাট হাজার টাকা হাতে এল। তার উপর ‘অবিনাশী আয়োজন’-এর জন্য ব্যাংক পুরস্কারের দশ হাজার টাকাও এফডিআর করে রেখেছিলাম। সব মিলিয়ে প্রায় সত্তর-আশি হাজার টাকার মালিক হয়ে নিজেকে বড়লোক মনে হতে লাগল। তখন ঢাকা শহরে মাথা গোঁজার জন্য জমি-বাড়ির স্বপ্নের পোকাটাও মাথায় ঢুকল আবার। স্ত্রী ছাড়াও, এবার বাড়ি থেকে পিতাও ইন্ধন যোগান। কোথাও জমি ঠিক করলে তিনি নিজেই এসে কাগজপত্র দেখে দিয়ে নিশ্চিত করবেন ভেজাল বা দু’নাম্বারি কিছু আছে কি না। বাড়ি করার ব্যাপারেও সহযোগিতা করবেন।

সময়টা ছিল বিগত শতাব্দির আশির দশক। অফিসেও হাউসবিল্ডিং ও  মোটরসাইকেল লোনপ্রাপ্ত  কয়েকজন সহকর্মী স্বপ্নের সাথী হলো। ঢাকা শহরে আর্থাৎ মিউনিসিপালিটি এলাকায় সম্ভব না, কারণ তখন মিরপুরের মতো জায়গাতেও এক কাঠা জমির দাম এক লাখ টাকা। কিন্তু আশপাশের শহরতলি এলাকায়, বিশেষ করে সাভার বা ফতুল্লা এলাকায় খুঁজলে অল্প টাকায় নিষ্কন্ট জমি কেনা ও বাড়ি করা সম্ভব। এখন কিছু কষ্ট হলেও, শহরতলির এসব গ্রামও নগর হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।
বেশ কয়েকদিন শহরের পুর্ব-পশ্চিম উত্তর-দক্ষিণের শহরতলির গাঁয়ে খোঁজখবর নেয়া ও দালালদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি পর, শেষে উত্তর দিকের ডিঅ্যান্ডডি এলাকার ভিতরে, ফতুল্লা থানার পাগলার কাছকাছি দেলপাড়া গ্রামে একটি ধানক্ষেত পছন্দ হলো। অফিসের তিন কলিগ মিলে পাঁচ শতাংশ করে মোট পনের শতাংশ জায়গা বায়না করে ফেললাম। সব মিলিয়ে খরচ হবে চুয়ান্ন হাজার। তারপরও পঞ্চাশ হাজারের ব্যবস্থা করা সম্ভব। অতএব জমি রেজিস্ট্রির আগেই বাড়ি বানাবার জন্য নিজেই পাগলা থেকে ইটাবালু কিনে বায়নাকৃত জমিতে ফেলি। বিদ্যুৎ ও রাস্তাবিহীন জমিতে তড়িঘড়ি বাড়ি করার পেছনে আমার বিষয়বুদ্ধিটা ছিল জোরালো। অফিসে যত রকম লোন করেছি, এগুলির কিস্তি কর্তনপূর্বক অফিস আমাকে যে বেতন দেবে, তাতে নিজেদের ভালো খাওয়ার শখ ও সুখ কমবে অবশ্যই। তারওপর বাড়িঅলার গলা ধাক্কা খাওয়ার ভয়ে ঘুমাতে পারব? অন্যদিকে নিজের কেনা জমিতে এখনই বাড়ি করলে ভাড়া চাইবে কে? বাড়ি থেকে অফিস করতে মাইল দুয়েক পথ হেঁটে আমাকে বাস ধরতে হবে। কিন্তু ছেলেমেয়ে দুটি অল্প পথ পায়ে হেঁটেই সরকারি ফ্রি-প্রাইমারি স্কুলে যেতে পারবে। গ্রামে হাইস্কুলও আছে একটি। নগরীর ভদ্রলোকরা বাচ্চাদের ভালো স্কুলে ভর্তি করার প্রতিযোগিতায় ও টেনশনে মরুক, আমি নিজের সন্তানদের মানুষ করার গ্রান্টি আপাতত সরকারের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজবাড়িতে শান্তিতে ঘুমাতে পারব। 

অতএব আমার বিষয়বুদ্ধির জয় হলো। মাস দুয়েকের মধ্যে জমি রেজিস্ট্রি এবং দুই রুমের ছোট এক বাড়িও তৈরি হলো। বাড়ি হওয়ার আগেই ভাড়াবাসার বাড়িঅলাকে নোটিশ দিয়েছিলাম। বর্ষণমুখর নির্ধারিত দিনে ট্রাকে সংসারের দামী-তুচ্ছ তাবদ মালামাল তুলে গ্রামের ধানক্ষেতে নতুন এবং শতভাগ নিজের বাড়িতে উঠলাম অবশেষে। জমি কেনা থেকে শুরু করে বাড়ি করা এবং সেই বাড়িতে বসবাসের অভিজ্ঞতার বয়ান আমার ‘আবাসভূমি’ উপন্যাসে আছে। প্রায় দেড়যুগ কাল বাস করেছিলাম সেই বাড়িতে। জীবনের এই অধ্যায়ে মানবসমাজ ও সভ্যতা বিকাশের দুটি বড় সত্য অনুভব করেছিলাম আমি। আদিবাসীদের সঙ্গে বহিরাগত দখলদারি শক্তির দ্বন্দ্ব, খোদ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দেশের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে যেমন ঘটেছে; দেলপাড়া গ্রামে কয়েক পুরুষ ধরে বসবাসকারী কিছু গরিব চাষীকে দেখেও সেই সত্যটা অনুভব করেছিলাম। সাম্প্রদায়িকতার বিরোধ তো কেবল হিন্দু-মুসলামানে হয় না, আঞ্চলিকতা ও দেশি-বিদেশির দ্বন্দ্বও সমাজে অনেক সময়  প্রকট রূপ ধারণ করে। বিশেষ করে ফায়দা লোটার শক্তি এই দ্বন্দ্বকেই উস্কে দিয়ে বিপন্ন করে তোলে মানুষের জীবন। আর এ দেশে উন্নয়নের সঙ্গে দুর্নীতির যে গভীর সম্পর্ক, তাও হাতেনাতে টের পেয়েছিলাম শহরতলির নিজবাড়িতে বিদ্যুৎ-গ্যাস ও শেষ দিকে ফোন লাইন সংযোগ নিতে গিয়ে। সাংবাদিকতা পেশায় থাকার সময় পুঁজিবাদী ব্যবস্থায়  শোষণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, পরিবেশের বিপর্যয়, জলবায়ু পরিবর্তন সংকট ইত্যাদি বিষয়গুলি নিয়ে সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয় আকছার লিখেছি। কিন্তু তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝা নয়,  এসবের ভয়াবহ পরিণতি হাতেনাতে অনুভব করেছিলাম সহসা একদিন শহরতলির আবাসভূমি ত্যাগের সময়। বিষয়টা ‘প্লাবন’ উপন্যাস তথা অখণ্ড ‘আবাসভূমি’তে বিশদভাবে এসেছে। তারপরও ভুলতে পারি না স্বপ্নসাধের বাড়িটা থেকে চিরদিনের জন্য উচ্ছেদ হওয়ার সেই মর্মান্তিক স্মৃতি। 

আমি সে সময়ে ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকায় চাকরি করাতাম। নিজবাড়ি থেকে গুলিস্তান কি কারওয়ানবাজারের কর্মস্থলে নিত্য আসাযাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। ২০০২ সালে কয়েক দিনের টানা বর্ষণে একবার রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিতে পুরো মতিঝিল এলাকাসহ ঢাকার অধিকাংশ স্থান ডুবে যায়। ডিএনডির বসতি ও ফসলী জমি তো রাজধানীর উঁচু তথা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা রাস্তা-লেবেল থেকে অনেক নিচুতে। বৃষ্টি হলেই ক্ষেত উপচে পানি জমত নিচু ঘরবাড়িতে। প্রতি বর্ষাকালেই কমবেশি পানি ভেঙে বাড়িতে ঢুকতাম। ঘরে অবাঞ্ছিত পানির প্রবেশ ঠেকাতে বহু কায়দাকৌশল প্রয়োগ করেছিলাম, ব্যর্থ হয়েছিল বেশিরভাগই। কিন্তু সেইবারের বৃষ্টিতে এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে, ভাবতে পারিনি।  

এক সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজার থেকে ঢাকা নগরীর রাস্তার পানি ভেঙে, প্যান্ট হাঁটুর উপরে তুলেও প্রায় ভিজেনেয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখি, আমার উঠানে নয় শুধু, ঘরের ভিতরেও কোমরপানিতে বিছানাপত্র ডুবে যাওয়া অবস্থা। মেয়েটি তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলে ছিল, আর ছেলে ঢাকায় তার চাচার বাসায়। আমার স্ত্রী একাই সেলফের বই রক্ষার চেষ্টা করে হয়রান। স্থানীয় পড়শি দিলু ভয় দেখায়, খালি বিষ্টির পানি না ভাই,  বিশ্বরোড মনে হয় ইঁদুরে লিক কইরা দিছে। মন কয় বাঁধও কাইটা দিছে কোনো শয়তান বেডায়! এইবার আমাগো ডুইবা মরণ ছাড়া কোনো উপায় নাই।

বর্ষাকালে ডিএনডিতে জলাবদ্ধতা কমবেশি দেখেছি। ১৯৮৮ সালের বন্যায় প্রায় পুরো ঢাকা শহর যখন ডুবে ছিল, তখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোড বালির বস্তা ফেলে সেই বন্যর পানি ডিএনডির ভিতরে ঢোকা প্রতিরোধ করেছিল এলাকার ঐক্যবদ্ধ জনগণ। কারণ পানি ঢুকলে আমরা ঘরের ছাদে উঠেও আত্মরক্ষা করতে পারতাম কি না সন্দেহ। সে কারণে এলাকার লোক রাত জেগে রাস্তা পাহারা দিয়েছে। সেই বন্যায় তদানীন্তন স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট এরশাদও কোমরপানি ভেঙে বন্যাক্রান্ত পাবলিককে সাহস জোগানোর চেষ্টা করেছিল মনে পড়ে। অবশেষে সেই সময়ের আতঙ্কের বাস্তবরূপ দেখলাম ২০০২-এর অতিবৃষ্টিতে আমার ঘরের ভিতরেও কোমরপানি দেখে। খাঁটের পায়ার নিচে ইট ঢুকিয়ে আমরা দুজন কোনোমতে সাপসহ নানারকম বালামসিবতের আতঙ্ক নিয়ে বিনিদ্র রাতটা পার করলাম। সেই রাতেই কল্পনা করেছিলাম, সমুদ্রপৃষ্ঠ উঁচু হয়ে ওঠা ও জলবায়ুর পরিবর্তনে অতিবর্ষণে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ একদিন আমার মতোই আশ্রয়চ্যূত হবেই হবে। কে নেবে সেই মহাট্রাজেডির দায়ভার?
সারাটা রাত বিনিদ্র কাটিয়ে, পরদিন সকালে দরকারি জিনিসপত্র ব্যাগে গুছিয়ে পানি ভেঙে সস্ত্রীক বিশ্বরোড তথা ঢাকা-চট্রগাম রোডে পৌঁছলাম। উঁচু রাস্তাটা পুরো পানিতে ডোবেনি তখনও। তারপরও জলমগ্ন যাত্রাবাড়ি মতিঝিল এলাকা পেরিয়ে কলাগানে শিল্পীবন্ধু সমর মজুমদারের বাসায় উঠলাম। মাসের বাকি দিনগুলি সমরের বাসাতেই কাটালাম বাধ্য হয়ে। মাসের এক তারিখে নতুন বাসা ভাড়া নিলাম কলাবাগান এলাকায়। বাড়ি ত্যাগের সময়েই মনে মনে শপথ করেছিলাম, আমি আর ফিরব না ওই বাড়িতে। পানি কমে গেলে ছেলে দরকারি জিনিসপত্র উদ্ধার করে এনেছে। নতুন করে সেই বাড়িতে বসবাসের শখ বা সাহস হয়নি পরিবারের কারোই।

ভাড়া বাসার সুবিধা ও আরামের মধ্যেও, অনেকগুলো বছর শহরতলির গাঁয়ে নিজবাড়িতে বসবাসের অভিজ্ঞতা শুধু কষ্টের স্মৃতি জন্ম দেয়নি, অনেক মধুর স্মৃতিও মনকে আপ্লুত করে এখনও। বর্ষা মৌসুমে ডোবার আগে প্রতি বছরই শীতকালে উঠানে কতোরকম সবজি আবাদ করতেন আমার স্ত্রী। পাঁচ শতাংশ জায়গার পুরো অর্ধেকটা ছিল আমাদের উঠান। তার মধ্যে আঙিনা-ঘর উঁচু করার জন্য একটা গর্ত করা হয়েছিল। সেই গর্তটাও হয়ে উঠেছিল আমাদের ছোট্ট পুকুর। তেলাপিয়া ও মাগুর মাছের পোনা ছেড়ে দিয়েছিলাম। রাক্ষুসে বড় মাগুর মাছ শিকারের স্মৃতি ভোলার মতো নয়। অন্যদিকে এক গ্রীস্মের সন্ধ্যায় খাটের নিচে সাপ আবিষ্কার করে ভয়ে আমাদের আত্মা খাঁচা ছেড়ে যাবার উপক্রম হয়েছিল। কারণ বর্ষাকালের ঢোড়া সাপ ছিল না সেটা, মাথায় দাগঅলা বিষাক্ত গোখরো সাপ। আমার ছেলে সুজন লাঠি দিয়ে মারতে গেলে ফণা তুলে তাকে ঠোকর দিয়েছিল প্রায়। ভাগ্যিস লাঠিটা সেই মুহূর্তে সাপের মাথায় পড়েছিল। তারপর সেই মৃত সাপটা দেখার স্মৃতি মনে করলে এখনো শিউরে উঠি।

বাড়িতে বিষাক্ত সাপ, পোকা-মাকড় ও চোর-সন্ত্রাসী, মসজিদের চাঁদাবাজের উৎপাতের কষ্ট-বিরক্তি যেমন ছিল, তেমনি অন্যদিকে মাঝে মাঝে স্বজন-বন্ধুদের উপস্থিতিও ছিল খুব আনন্দদায়ক ঘটনা। মনে আছে, একবার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ভাই ভাবিকে নিয়ে আমার সেই বাড়ি দেখতে এসেছিলেন। সন্ধ্যার দিকে বিদায় হওয়ার আগে পর্যন্ত কি যে আনন্দে কেটেছিল দিনটা! ওই সময় আমাদের উঠানের জাঙলায় লাউ ছিল। খুব বড় হয় নি তখনো। এমন লাউ ইয়িলায়স ভাইকে দেওয়া উচিত কিনা, দিলে কীভাবে নিয়ে যাবেন, আমার স্ত্রীর এসব দ্বিধা দেখে হেসে বলেন ইলিয়াস ভাই, ‘তুমি দাও তো একটা লাউ, আমি ঘাড়ে করে নিয়ে যাব।’ সত্যি সত্যি কোটের উপর ঘাড়ে লাউটা নিয়ে আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ক্ষেতের আল ধরে তাঁর চলে যাওয়ার দৃশ্য ভোলার মতো নয়। ওই সময়ে স্ত্রী খাঁচায় কয়টা বিদেশি মুরগিও পুষতেন নিজেদের আবাদি ডিম খাওয়ার আশায়। একবার বেশ কিছু ডিম জমলে তিনি ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। আমি বলি, তোমার পোষা মুরগির ডিম আর কেনা ডিমে কি কোনো তফাত আছে? ওরা কিনেও এই ডিম খায়। তারপরও স্ত্রীর জেদাজেদিতে একদিন অফিস যাওয়ার পথে কে এম দাস লেনে গৃহপোষ্য মুরগির ডিম পৌঁছে দিয়েছিলাম ইলিয়াস ভাইয়ের বাসায়।

ইলিয়াস ভাই ভাবিকে নিয়ে দেলাপাড়ার সেই বাড়িতে আরো একবার এসেছিলেন। বন্ধু ওয়াসি আহমেদ, নাঈম হাসান সবাই মিলে সপরিবার একটা মাইক্রোবাসে কাঁচা রাস্তা ভেঙে আমার বাড়িতে এলে মহা উৎসবের আনন্দ হয়েছিল। আড্ডা দিতে বন্ধুর পথ ভেঙে ‘নিরন্তর’ সম্পাদক নাঈম হাসান গিয়েছিলেন আরো কয়েকবার। সঙ্গে ছিল গোলাম ফারুক খান বা শামসুল ইসলাম কচি। এছাড়াও সপরিবার সমর মজুমদার, ফরিদুর রহমান, ঝর্ণা রহমান, মনি হায়দার, ভাস্কর চৌধুরী, কুয়াত-ইল-ইসলাম, কাজী নাজমুন, নান্টু রায়, গোলাম রাব্বানী বিপ্লবসহ আরো যারা গিয়েছিলেন আমার শহরতলির ঠিকানায়, তাদের উপস্থিতি আনন্দদায়ক স্মৃতি হয়ে আছে এখনো। আশ্চর্য যে নানা সমস্যা-দুর্ভোগ সত্ত্বেও বাড়িটার নিন্দা করেননি কেউ। বরং কেউ কেউ বলেছেন, হ্যাঁ, লেখকের বাড়ি তো এরকমই হওয়া উচিত।

প্রাকৃতিক জলকামানের গুলিতে উচ্ছেদ হওয়ার আগে বাড়িটাতে সুখের যোগান দিয়েছিল ল্যান্ড-টেলিফোনটি। তখনো মোবাইল ফোন আসেনি। বাড়ি করার পর দীর্ঘ এক যুগ প্রায় বিচ্ছিন্ন মনে হতো নিজেকে। পাগলায়  টেলিফোন এক্সচেঞ্জ হওয়ার পরপরই রাস্তাবিহীন বাড়িতেও সংযোগ পেতে তেমন কষ্ট হয়নি। ফোন যেদিন চালু হলো, প্রথমে ফোন করেছিলাম ওই সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়াসি আহেমেদের বাসায়। ওয়াসি বাসায় ছিল না, ফোন ধরেছিলেন তার শ্বশুর। নাম ভুলে গেছি, কিন্তু দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ও বড় স্বজন মানুষ ছিলেন তিনি। মনে আছে, খুশির কারণ অকপটে তাঁকেও ব্যক্ত করে দোয়া চেয়েছিলাম ফোনের জন্য। এখন মোবাইল ফোন যখন তখন বাজলে বিরক্ত হই। স্মার্টফোনে ইউরোপ-আমেরিকার স্বজনদের সঙ্গে হরহামেশা কথা বা ভিডিও চ্যাট করেও বিন্দুমাত্র বিস্ময় কি পুলক জাগে না। কিন্তু ওই সময়ে আমার শহরতলির বাড়ির ফোনের বাজনাও যে কী মধুর আওয়াজ দিত! সেই আওয়াজে সাড়া দিয়ে বদরুদ্দিন উমর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মাহমুদুল হক, বেলাল চৌধুরীর মতো প্রিয় মানুষদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে কথাবার্তার স্মৃতি ভোলার মতো নয়।

নবীন যৌবনে আমরা যে চিত্রনায়িকার খুব ভক্ত ছিলাম, সেই কবরী সারওয়ার স্বয়ং আমার ওই বাড়িতে ফোন করায় অবিশ্বাস্য খুশিতে শিহরিত হয়েছিলাম। চলচ্চিত্র পরিচালক আখতারুজ্জামানের মাধ্যমে আমার উপন্যাস সিনেমা ও নাটক বানাবার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন তিনি। একই প্রয়োজনে ফোন করেছিলেন চিত্রনায়িকা রোজিনাসহ টেলিভিশন জগতের বিখ্যাত ও বিশিষ্ট অনেকেই। আর বৈদেশিক কলের মধ্যে শুধু দিল্লী থেকে আসা একটা কলের স্মৃতি মনে পড়ে। বাংলাদেশে এক সময়ের ভারতীয় হাই কমিশনার পিনাকী চক্রবর্তীর স্ত্রী রাধা চক্রবর্তী ফোন করেছিলেন। আমার একটি গল্পের অনুবাদক তিনি। কথা বলেছিলেন অনুবাদ গ্রন্থের প্রকাশ নিয়ে। বাড়ি ত্যাগের পর  সেই ফোন সেটটাই নতুন নাম্বারে ভাড়া বাসায় বসেছিল। কিন্তু সহস্রবার বেজেও আগের মতো আনন্দ দিতে পারেনি আর। 

সশরীরে বা ফোনে স্বজন-বন্ধুদের উপস্থিতি ছাড়াও, প্রাকৃতিক জলকামানের কষ্টের স্মৃতি ছাপিয়ে মনে পড়ে বাড়ির আঙিনায় লাগানো ফুলগাছগুলির কথা। বকুল, কামিনী আর বেইলি ফুল লাগানো হয়েছিল আমার লেখাপড়ার ঘর ঘেঁষে। সেই ফুলের ঘ্রাণ আর চাঁদনীরাতের জোৎস্না মাখামাখি হয়ে ঘরের বিছানায় যখন আসত, আনন্দে পাগল হওয়ার মতো অবস্থা হতো। ভাবতাম এত দুঃখ-দুর্ভোগ সত্ত্বেও আমার আবাসভূমি সত্যই কতো সুন্দর!

/তারা/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়