ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উন্মুক্ত ও জলাবদ্ধ ড্রেন, জবিতে বাড়ছে মশার উপদ্রব

জবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৫, ১৫ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৪:৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২২
উন্মুক্ত ও জলাবদ্ধ ড্রেন, জবিতে বাড়ছে মশার উপদ্রব

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমে থাকা একটি ড্রেনের পানিতে বংশবিস্তার করছে এডিস মশা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেশির ভাগ ড্রেনে ঢাকনা না থাকা এবং ড্রেনে পানি আটকে থাকায় ক্যাম্পাসে বাড়ছে মশার উপদ্রব। এতে দেশের অন্যতম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

সরেজমিনে জবি ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়,  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর দিকের ড্রেন, শিক্ষকদের ডরমিটরি যাওয়ার রাস্তার পাশের ড্রেন, বিজ্ঞান অনুষদ ও প্রশাসনিক ভবনের মাঝের ড্রেন, ভাষা শহীদ রফিক ভবনের পাশের ড্রেন কোনোটিতেই ঢাকনা নেই। এছাড়াও ড্রেনগুলোতে পানি জমে থাকছে। ড্রেনের পানি চলাচল না করায় বদ্ধ পানিতে জন্ম নিচ্ছে এডিস মশা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের পেছনের ড্রেনগুলিতেও দেখা যায় বদ্ধ পানি। এছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এবং বিভিন্ন ঝোপঝাড় থাকায় ড্রেনগুলি মশার বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক ভবনের ছাদের ঢালাইয়ের ফিনিশিং না দেওয়ায় সেখানেও পানি জমে পুরো ছাদে শ্যাওলা জমে রয়েছে। বেশিরভাগ সময় ছাঁদ বন্ধ থাকলেও ছাদে জমা পানিতে বংশবিস্তার করছে মশা। কলা ভবনের সংস্কারকৃত ছাদেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ হাজার ৮৭৬ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১২০০ ছাত্রী ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে' থাকলেও বাকি ১৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পুরান ঢাকার বিভিন্ন মেস বা বাসায় থাকেন। এসব শিক্ষার্থীরা দিনের বেশিরভাগ সময় ক্যাম্পাসে কাটান তাই ক্যাম্পাসে মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।

কলা ভবনের ছাদে জমে থাকা পানিতে জন্ম নিয়েছে শ্যাওলা ও আগাছা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আপন জানান, দিনের অধিকাংশ সময়ই ক্যাম্পাসে কাটানো হয়। সারাদেশে ডেঙ্গুর যা অবস্থা তাতে আমাদের মধ্যেও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ড্রেনগুলোতে যেভাবে মশা বংশবিস্তার শুরু করেছে এভাবে চলতে থাকলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। 

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুকাইয়া মিজান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে শুধুমাত্র বিকেলে একবার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আমরা দিনের বেলা ক্যাম্পাসে থাকি আর দিনেই এডিশ মশা কামড়ায়। আমাদের কয়েকজন বন্ধু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানতে পেরেছি।
এদিকে ঠান্ডা, জ্বর নিয়ে অনেক শিক্ষার্থীই আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে। মেডিকেল সেন্টারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেডিকেল সেন্টারে দৈনিক ২০০ জন রোগী আসলে এদের ১৫০ জনেই আসে জ্বর নিয়ে। আর এসব রোগীর এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীরই থাকে ডেঙ্গুর উপসর্গ। 

জবি মেডিকেল সেন্টারের উপ-প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মিতা শবনম বলেন, ‘আমরা জ্বরের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে নাপা খেতে বলি। ডেঙ্গুর উপসর্গ দেখা দিলে তাদেরকে ডেঙ্গু টেস্ট করার জন্য বলি। শিক্ষার্থীরা বাইরের মেডিকেলে টেস্ট করে। কিছু শিক্ষার্থীর রিপোর্ট পজেটিভ আসে আবার অনেকেরই নেগেটিভ আসে। এই রিপোর্ট নিয়ে শিক্ষার্থীরা আমাদের এখানে আসেন না। তারা আসলে আমরা সঠিকভাবে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাটা বলতে পারতাম।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দৈনিক একবার করে ক্যাম্পাসের ড্রেনগুলোতে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের পেছনে যেসব ড্রেন আছে সেসব ড্রেনেও ছিটানো হচ্ছে। ড্রেনগুলোর পানি চলাচল অব্যাহত রাখতে সেগুলো পরিষ্কার রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ছাদেও জমে রয়েছে পানি।

জমে থাকা পানি নিষ্কাশন ও ড্রেনের ঢাকনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবিষয়ে প্রকৌশল দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী হেলাল উদ্দীন পাটোয়ারি বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ড্রেনের ঢাকনা নিয়ে অনেকের দ্বিমত আছে। ড্রেন পরিষ্কার করতে নাকি অসুবিধা হবে। তবে আমি ঢাকনার বিষয়ে একটি ফাইল পাঠিয়েছিলাম সেটি বাতিল হয়ে গেছে।’

মেহেদী/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়