ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দর্শক বনাম সাপোর্টার

আহসান হাবীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৯, ২ ডিসেম্বর ২০২২  
দর্শক বনাম সাপোর্টার

এক বন্ধুর সঙ্গে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলাম। এক সময় আমার সহযাত্রী বন্ধু (অবশ্য এখন বিশেষ একটা কারণে সে ধীরে ধীরে শত্রু হয়ে উঠছে। আশা করছি সে এই লেখা পড়বে না) বললো, আমরা মনে হয় এই মাত্র জার্মানির বর্ডার পার হলাম! 
: মানে? 
: ঐ দেখ।
গাড়ির জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ঘটনা সত্যি, চারদিকে জার্মানির পতাকা পতপত করে উড়ছে। তখনই আমাদের দুজনের একসঙ্গে মনে পড়ল সামনে ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ এলো বলে। সম্ভবত তারই প্রস্তুতি চলছে। এই এলাকায় জার্মানির সাপোর্টার বেশি মনে হচ্ছে। 

মনে আছে আগের কোনো এক ওয়ার্ল্ড কাপে সারা ঢাকা ছেয়ে গিয়েছিল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পতাকায় আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, ক্যামেরুন... এটা নিয়ে বেশ লেখালেখিও হচ্ছিল বোধ হয়। কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছিল পৃথিবী কি তাহলে পাসপোর্ট ভিসাহীন এক বিশ্ব রাষ্ট্রে পরিণত হলো রাতারাতি? 
সরকার তখন কড়া হুকুম জারি করলেন ভীন দেশের পতাকা এভাবে নগ্নভাবে ঢাকার আকাশে উড়তে পারবে না। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব পতাকা নামাতে হবে। কড়া হুকুম, সরকারের হুকুম বলে কথা। পরদিনই সব পতাকা নেমে গেল। শুধু দেখা গেল গুলশানে এক বাড়িতে ব্রাজিলের পতাকা উড়ছে।   
ঘটনা কি! এত বড় দুঃসাহস কার? পওে দেখা গেল ওটা ব্রাজিলের অ্যাম্বাসি।  

আমি বরাবর ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলের ভক্ত বেশি। ক্রিকেটে যখন বাংলাদেশ জিততে শুরু করে তখন অবশ্য ক্রিকেটের ভক্ত হয়ে উঠি। এইতো কিছুদিন আগে যখন বাংলাদেশের টাইগাররা পরপর হারছিল, সবাই মোটামুটি হতাশ তখন একজন আমাকে প্রশ্ন করেছিল, ‘আচ্ছা আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বমানের?’ আমি গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিলাম, ‘তা বলতে পারছি না, তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দর্শক অবশ্যই বিশ্বমানের।’

আসলে আমার সঙ্গে সবাই একমত হবেন বাংলাদেশের কি ক্রিকেট কি ফুটবল সব দর্শকই বিশ্বমানের এতে সন্দেহ নেই। একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। গত বারের আগের বার ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপে বাংলাদেশের এক ফুটবল দর্শক (নাকি সাপোর্টার) যিনি জার্মানির সাপোর্টার (নাকি দর্শক)... তিন কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকা বানিয়েছিল। খবর পেয়ে ঢাকার সাংবাদিকরা সব উপস্থিতÑ আপনি জার্মানির সাপোর্টার?
: জি।
: জার্মানির সবগুলো খেলাই দেখছেন তাহলে?
: না খেলা দেখার সময় পাচ্ছি না।
: কেন? 
: দেখছেন না তিন কিলোমিটার দীর্ঘ পতাকা বানিয়েছি। আমাদের সাপোর্টারদের অনুরোধে আরো এক কিলোমিটার বাড়াব বলে ভাবছি। খেলা দেখার সময় কই! আসলে বিশ্ববাসীকে দেখাতে চাই আমরা কতটা জার্মান ভক্ত!   
এই না হলে বিশ্বমানের দর্শক; না কি সাপোর্টার!   

আসলে সাপোর্টার আর দর্শক- এ দুয়ের মধ্যে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। আামি এক সাপোর্টারের কথা শুনেছি সে মোহামেডানের ভয়াবহ সাপোর্টার ছিল। সে কখনো খেলা দেখত না। খেলা দেখলেই নাকি তার দল হারে। সে তাই মোহামেডানের খেলার দিন  স্টেডিয়ামের বাইরে ঘুরঘুর করতো আর সিগারেট টানতো- আহা কি কষ্ট!
সব শেষে পৃথিবীর ব্যর্থতম একটা ফুটবল খেলার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে ইতিহাসের পাতা থেকে।  

১৯২১ সালের ৭ মে। লিসেস্টার সিটি বনাম স্টকপোট কাউন্টির মধ্যে খেলা চলছিল। খুবই গুরুত্বপূর্ণ খেলা। কিন্তু খেলাটি যেন রহস্যময় কারণে আনলাকি থার্টিনের খপ্পরে পরে যায়। কারণ খেলা দেখতে আসে মাত্র ১৩ জন দর্শক। তাও আবার হাফ টাইমের পর ছয়জন চলে যায়। এতে খেলোয়াড়রা খুশী হয়ে ওঠে; যাক খেলাটি তাহলে এখন আনলাকি থার্টিন থেকে লাকি সেভেনের খপ্পরে পড়ল। কিন্তু তারপরও এই খেলাটি পৃথিবীর ‘ব্যর্থতম ফুটবল দর্শকের উপস্থিতিতে খেলা’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। কে জানে দর্শক ১৩ জন থাকলেও বাইওে সেই আবেগী সাপোর্টাররা হয়তো স্টেডিয়ামের বাইরে ঘুরঘুর করছিল আর সিগারেট টানছিল- আহা কি কষ্ট!
 

তারা//

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়