ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: যেমন ছিল রাজধানী ঢাকা

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১৮, ১৬ ডিসেম্বর ২০২২  
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১: যেমন ছিল রাজধানী ঢাকা

ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ঢাকার চারদিকে থমথমে অবস্থা। চলছে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ। এরই মধ্যে সন্ধ্যা ৫টা ২৫ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশ-ভারতে যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি। দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ।  

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র, দ্য ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ (১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১) ও মুক্তিযোদ্ধাদের বরাতে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৬ ডিসেম্বর ঢাকার চিত্র 
পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর হওয়ার পরপরই ঢাকায় উল্লাসে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। এখানে-সেখানে মিছিল আর মিছিল। কেউ নাচছে, কেউ-বা জড়িয়ে ধরছেন একে অন্যকে। রাস্তার দুই দিকে মানুষের সারি। জয়োল্লাসে ফেটে পড়ছে ঢাকা। মুক্তির জয়োৎসবে আবেগে আপ্লুত হয়ে কাঁদছেন অনেকে। খোলা ট্রাক, ভ্যান, জিপে করে দোর্দণ্ড প্রতাপে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় যৌথবাহিনীর সদস্যরা। তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন মানুষ। কেউ কেউ ভারতীয় বাহিনীর ট্রাকে উঠে পড়েছে। খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিলে মানুষের স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’। সন্ধ্যা থেকে সারা রাতব্যাপী ঢাকায় বিজয় উল্লাস চলল। এদিন বাড়িতে বাড়িতে রাতভর আলো জ্বলতে দেখা যায়।

মুক্তিযোদ্ধারা শহরের পথে-পথে আকাশে রাইফেলের ফাঁকা গুলিতে প্রকম্পিত করে স্লোগান তোলেন ‘জয় বাংলা’। সন্ধ্যার পর থেকেই থমথমে ঢাকা তখন বিজয় উৎসবের নগরী। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিবাদে বেরিয়ে আসে পথে। রাতভর আলো জ্বলে নির্ঘুম ঢাকা নগরীর ঘরে-ঘরে।

আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুকুল বোস ২০২০ সালে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুদ্ধশেষে ঢাকায় ফিরে আসি। শহরে ঢুকেই সবার মধ্যে আনন্দ, মিছিল আর উৎসব দেখি। পুরো ঢাকায় মিছিল, মিটিং, স্লোগান হচ্ছে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী আনন্দ উদযাপন করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বর  চারদিকে থমথমে ভাব। আমার যতদূর মনে পড়ে, কারফিউ দিয়েছিল ওরা। তারপর যখন ঘোষণা হলো রেসকোর্সে আত্মসমর্পণ হবে, তখন মানুষ একবারে স্রোতের মতো বের হয়ে আসছে। মুক্তিযোদ্ধারা শহরে ঢুকতেছে, যারা ফিল্ডে ছিল। যারা ঢুকছে— কৃষক, সাধারণ মানুষের সন্তানদেরই দেখলাম। আমি (তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু) ও মাহফুজ উল্লাহ (প্রয়াত সাংবাদিক) রণাঙ্গনের খবরাখবর নিয়ে ‘পূর্ববাংলা’ নামে একটি পত্রিকা বের করতাম।

তিনি বলেন, আগের ক’দিন কারফিউ থাকলেও বিজয়ের পর ল অ্যান্ড অর্ডার তো নেই। সুযোগসন্ধানীরা যে যার মতো লুটপাট করেছে। বাড়িঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও ঘটিয়েছে।

’৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ভারতীয় বাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক জগদিৎ সিং অরোরা ও তার অধীনস্থ অফিসার ও সেনাদের ভূয়সী প্রশংসা করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ভারত সরকার, ভারতীয় জনগণ, সোভিয়েত সরকার, পোল্যান্ড ও অন্যান্য মিত্র দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এসব দেশের সাহায্য না পেলে বাংলাদেশ আজ যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, তা সম্ভব হতো না।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি মুক্তি বাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গড়া যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে অস্ত্র ও সেনা সমর্পণ করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন। মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করেন বাংলাদেশ বাহিনীর উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার।

তিনি বলেন, এদিন বাঙালি জাতি পায় কাঙ্ক্ষিত মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। এই বিজয়ের মাধ্যমে পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম দেয় বাংলাদেশ নামে নতুন এক রাষ্ট্রের। হাজার হাজার মানুষের জয় বাংলা ধ্বনিতে ঢাকায় আবেগপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় সেদিন। 

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়