ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদনের পর চিকিৎসা সহায়তা পেলেন সেই শাহীন

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১১, ৮ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৮:০৪, ৮ জানুয়ারি ২০২৩
রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদনের পর চিকিৎসা সহায়তা পেলেন সেই শাহীন

ছবি: রাইজিংবিডি

সন্তানকে বাঁচাতে দুখিনী মায়ের আকুতি’ শিরোনামে ২০২২ সালের ৯ আগস্ট দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকম—এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদনে উঠে আসে বগুড়া ধুনট উপজেলার এক অসহায় মায়ের আহাজারি। অকালে স্বামী ও বড় ছেলেকে হারানো এক জন নারী, এক জন মা। ছোট ছেলে শাহীন আলমকে ঘিরে তার জীবন। দৈনিক ১০০ টাকা আয়ে কাজ করেন ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। মাসে মাত্র তিন হাজার টাকা আয়। 

মায়ের আয়ে কোনোভাবেই যখন সংসার চলছিল না, তখন মাদ্রাসায় পড়া ছেলে শাহীন আলম ধুনটের একটি কাপড়ের দোকানে কাজ নেয়। মা-ছেলের আয়ে কোনোভাবে খেয়েপরে বেঁচে ছিলো দুজন। মা জানলেও শাহীন জানতো না, তার বড় ভাই কীভাবে মারা গেছে। বড় ভাইয়ের মতো তার শরীরেও বাসা বাঁধে সেই একই রোগ।  

শাহীন আলম একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে ওঠে। ভারী কাজ করতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে। বুকে ব্যথা হয়। স্থানীয় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তারা জানান, শাহীনের হৃৎপিণ্ডে জন্মগতভাবে ছিদ্র রয়েছে। যার কারণে তার এই শারীরিক সমস্যা হচ্ছে।  

বছরখানেক আগে ছেলের শরীরে রোগ ধরা পড়লে মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। কী করবেন তিনি? কীভাবে করাবেন ছেলের চিকিৎসা? অনেক চেষ্টা করেও দুখিনী মা তার সন্তানের চিকিৎসার অর্থ যোগাড় করতে পারেননি। নিজের শেষ সম্বল যা ছিল, তাও ছেলের চিকিৎসায় ব্যয় করেছেন। অথচ সব খরচ মিলিয়ে মাত্র ৩ লাখ টাকার ব্যবস্থা হলেই বেঁচে যেতে পারে মায়ের প্রাণপ্রিয় সন্তান। 

শাহীন যেই কাপড়ের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই তার সঙ্গে পরিচয় হয় ধুনট কালেরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শামীম হোসেনের সঙ্গে। দুই সন্তানের জনক এই স্কুলশিক্ষক শাহীনের শারীরিক অবস্থার কথা জেনে বিভিন্ন জনের কাছে ওর চিকিৎসার জন্য হাত পাতেন। শিক্ষক শামীম হোসেনের অনুরোধে স্থানীয় সাংবাদিকদের কয়েকজন পত্রিকায় শাহীনের চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন।

সেরকম একটি নিউজ ছাপা হয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিতে। নিউজ প্রকাশের পরই রাইজিংবিডির এক হৃদয়বান পাঠক যোগাযোগ করেন শিক্ষক শামীম হোসেনের সঙ্গে। শাহীনের শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত জেনে আশ্বাস দেন, ওর চিকিৎসার সকল ব্যয়ভার তিনি গ্রহণ করবেন।

এরপর খুব দ্রুতই ঘটতে থাকে ঘটনা। শিক্ষক শামীম হোসেন শাহীনের মায়ের সঙ্গে কথা বলে ওকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। ঢাকায় এনে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে শাহীনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। সেখানে তার হার্টের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নতুন করে ধরা পড়ে, শাহিনের ভাল্বও নষ্ট। এরপর সেখানে তার ভাল্ব লাগানো হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা সফলভাবে সম্পন্ন হলে ডাক্তার শাহীনকে নিয়ে আবারও ৩ মাস পর আসতে বলেন। হাসপাতালের সব খরচই দেন ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ রাইজিংবিডির সেই পাঠক।

তিন মাস পর আবারও চেকআপ করাতে শাহীনকে ঢাকায় নিয়ে আসেন শিক্ষক শামীম হোসেন। তাকে দেখে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক জানান, শাহীনের অবস্থা আপাতত ভালো হলেও ওর হার্টের চিকিৎসা (অপারেশন) করাতে হবে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে করাতে হলে তাদের অপেক্ষা করতে হবে, একটু সময় লাগবে। সম্ভব হলে শাহীনকে যেন দ্রুতই অপারেশন করে ফেলে। শাহীনের অপারেশনের জন্য রাজধানীর মিরপুরের হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ওকে রেফার করেন চিকিৎসক। সেখা‌নে সহ‌যোগী অধ্যাপক ডা. জেস‌মিন হোসাইন‌কে দেখা‌নোর পর তি‌নি শাহীন‌ এবং সব কাগজপত্র দে‌খে জানুয়া‌রির ৪ তা‌রি‌খে এসে ভ‌র্তির পরামর্শ দেন।

এবারও সেখানে উপস্থিত রাইজিংবিডির সেই সুহৃদ পাঠক। তার আশ্বাস পেয়ে জানুয়ারির ৪ তারিখ শাহীন‌কে নি‌য়ে মিরপু‌রের হার্ট ফাউন্ডেশ‌নে আসেন শিক্ষক শামীম হোসেন। শাহীন‌কে ভ‌র্তি করা‌নো হয় ডা. জেস‌মিন হোসাইনের অধী‌নে।

শ‌নিবার (৭ জানুয়া‌রি) শাহী‌নের অপা‌রেশন ক‌রে তার হা‌র্টে ডিভাইস বসান হার্ট ফাউন্ডেশ‌নের সহ‌যোগী অধ্যাপক জেস‌মিন হোসাইন। রোববার (৮ জানুয়ারি) শাহী‌নের চি‌কিৎসক জানান, ওর অপা‌রেশন সফলভা‌বে সম্পন্ন হয়ে‌ছে। সোমবার সে বা‌ড়ি চ‌লে যে‌তে পার‌বে। ত‌বে প্রথম অবস্থায় তা‌কে মা‌সে এক বার, এরপর তিন মা‌সে এক বার ডাক্তা‌রের ফ‌লোআপে আস‌তে হ‌বে। এরপর থে‌কে বছ‌রে এক বার ক‌রে আস‌লেই হ‌বে ব‌লে জানান সহ‌যোগী অধ্যাপক ডা. জেস‌মিন হোসাইন। শাহী‌নের হা‌র্টে লাগা‌নো ডিভাইসসহ হাসপাতা‌লের সব খরচ বহন ক‌রে‌ছেন রাইজিংবি‌ডির ‘নাম প্রকা‌শে অনিচ্ছুক’ সেই পাঠক।

যার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জা‌নি‌য়ে‌ছেন শাহী‌ন, তার মা, শিক্ষক শামীম হো‌সেন এবং তার ছাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সোহাগ আলী।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়