ইতালিতেই সর্বপ্রথম ভালোবাসা দিবসের সূচনা
ইসমাইল হোসেন স্বপন || রাইজিংবিডি.কম
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিশ্ব ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন্স ডে) এ দিনটিকে বিশ্বব্যাপী ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব, স্বামী-স্ত্রী, মা-সন্তান, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন বন্ধনে আবদ্ধ মানুষেরা এই দিনে একে অন্যকে তাদের ভালবাসা জানায়। বর্তমানে সমগ্র বিশ্বে এই দিনটিকে খুবই ঘটা করে আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়।
মূলত ইউরোপের প্রাণকেন্দ্র ইতালিতেই ভালোবাসা দিবসের প্রচলন চালু হয়। পরে সময়ের সাথে সাথে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে নানা রঙে, নানা আয়োজনে উদযাপন করা হলেও দিনটি শুরু হওয়ার ইতিহাস কিন্তু খুবই করুণ! এক মর্মান্তিক ভালোবাসার পরিণতি থেকেই এই দিনটির যাত্রা।
২৬৯ সালে রাজা ক্লডিয়াস-২ ইতালির রোম শাসন করতেন। তার রাজ্যে সুশাসনের বড়ই অভাব ছিল। তার মধ্যে আবার আইনের অপশাসন, শিক্ষার অভাব, স্বজন-প্রীতি, দুর্নীতি এবং কর বৃদ্ধি যেন প্রজাদের জীবনকে নরক বানিয়ে দিয়েছিল।
রাজা তার সুশাসন ফিরিয়ে আনার জন্য রাজ দরবারে তরুণ যুবকদের নিয়োগ দিলেন। আর যুবকদেরকে দায়িত্বশীল ও সাহসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তিনি রাজ্যে যুবকদের বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন।
রাজা বিশ্বাস করতেন বিয়ে মানুষকে দুর্বল ও কাপুরুষ করে। বিয়ে নিষিদ্ধ করায় পুরো রাজ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন যাজক গোপনে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। তিনি সকলের কাছে পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘ভালবাসার বন্ধু বা ‘Friend of Lovers’ নামে। কিন্তু তাকে রাজার নির্দেশ অমান্য করার কারণে রাষ্ট্রদ্রোহিতার দায়ে আটক করা হয়।
জেলে থাকাকালীন ভ্যালেন্টাইনের সাথে পরিচয় হয় জেলরক্ষক আস্ট্রেরিয়াসের।
আস্ট্রেরিয়াস জানতো ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাতিক ক্ষমতা রয়েছে। তাই তিনি ভ্যালেন্টাইনকে অনুরোধ করেন তার অন্ধ মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে। ভ্যালেন্টাইন পরবর্তীতে মেয়েটির দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন।
এতে মেয়েটির সাথে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক শক্তি সম্পর্কে জানতে পেরে রাজা তাকে রাজ দরবারে ডেকে পাঠান এবং রাজকার্যে সহযোগিতার জন্য বলেন।
রাজা বিয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা না তোলায় ভ্যালেন্টাইন রাজকার্জে সহযোগিতায় অস্বীকৃতি জানান। এতে রাজা ক্ষুদ্ধ হয়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মৃত্যুদণ্ডের ঠিক আগের মুহূর্তে ভ্যালেন্টাইন কারারক্ষীদের কাছে একটি কলম ও কাগজ চেয়ে নেন।
তিনি তার ভালোবাসার মানুষের উদ্দেশ্যে একটি গোপন চিঠি লেখেন। সেখানে বিদায় সম্ভাষণে তিনি লিখেছিলেন ‘From your Valentine’। এই একটি শব্দ হৃদয়কে বিষাদে আচ্ছন্ন করেছিল।
ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেই থেকেই এই দিবসটিকে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে পালন করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ।
স্বপন/সনি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন