ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণ কোরিয়ায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে করোনা

ফাইল ফটো

দিন যত যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ভাইরাসের ভয়বহতা ততই বড়ছে। সময়ের সাথে সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেক্ষাপট চীনের পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দেশটির নাগরিকেরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) কোরিয়াতে একদিনেই সংক্রমণ মানুষের সংখ্যা ৫০৫ জন। যা করোনা ভাইরাস সংক্রমণের রের্কড। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭৬৬ জনে। এখন পর্যন্ত মারা গেছে ১৩ জন।

সর্বশেষ যিনি মারা গেছেন তিনি যিশুর গোপনীয় সিনচাইজি চার্চের সদস্য ছিলেন। বয়স ৭৪ বছর। ওই ব‌্যক্তি গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে জ্বর এবং কাশিতে আক্রান্ত হন। কয়েকদিন পর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তার। বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে মারা যান তিনি।

চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ চীনের মধ্যেই বেশি ছিলো। কিন্তু গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ার দেগু শহর থেকে ছড়িয়ে পড়েছে অন‌্যান‌্য শহরে। যা ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আশঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্ব মহামারিতে রূপ নিতে যাচ্ছে করোনা। দেগু শহরে আক্রান্তের সংখ‌্যা ৬৪৮ জন, সিউলে ৪৩৩ জন, দেজন-এ ২৭৩, বুসানে ২৭২ জন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা দেখা দেয়। যার সমাধান হিসেবে এখনো কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা।

এদিকে দেগুর একটি বিশেষ গির্জা অনুসারীরাই ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হয়েছে করোনায়। এই গির্জার দুই লাখেরও বেশি সদস্য। তাদের সবাইকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দেগু থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে ক্যাম্প ক্যারোলে ২৩ বছর বয়সী এক সৈন্য নতুনভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। সে সম্প্রতি দিগুর ক্যাম্প ওয়াকারে গিয়েছিল। এর আগে মার্কিন এই সামরিক ঘাঁটির কাছে বেশ কয়েকজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত ওই সৈন্য ঘাঁটির বাইরে নিজের বাড়িতে নিজেকে স্বেচ্ছা-কোয়ারেন্টিন করেছেন বলে কোরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনী ইউএসএফকে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।

গত রোববার দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন দেশটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছেন। তিনি করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি নিয়ে টেলিভিশনের জাতির উদ্দেশে ভাষণও দিয়েছেন। সেখানে এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণে তিনি দেশের মানুষকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ যেকোনো বড় আকারের সমবেত হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।

তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যদি কোথাও ফেস মাস্ক মজুত করে রাখা হয় এবং সদ্য নিষিদ্ধ কোনো সমাবেশে কেউ অংশ নেয়, তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৮১ হাজারের কাছাকাছি। এ ভাইরাস ইতোমধ্যে মৃত্যু ঘটিয়েছে দুই হাজার ৭৬৪ জনের, যাদের মধ্যে চীনেই মারা গেছে দুই হাজার ৭১৫ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত কোনো বংলাদেশি এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। তিনি বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে চলাফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

দক্ষিণ কোরিয়া/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়