ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘণ্টায় ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত

মোহাম্মদ হানিফ, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘণ্টায় ২৫ জন করোনায় আক্রান্ত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস চীনে মহামারী রূপ নেওয়ার পর তাণ্ডব চালিয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭৬৬ জন, এক সপ্তাহ পরে তা দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৮৮ জনে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। গড়ে প্রতি ঘণ্টায় আক্রান্ত হচ্ছে ২৫ জন।

করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে বিশ্বজুড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৮২টি দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার খবর মিলেছে।

এই পরিস্থিতিতে কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের মাঝেও আতঙ্ক বাড়ছে। করোনা আতঙ্কে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না অনেক বাংলাদেশি প্রবাসী। এক প্রকার বন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।

কোরিয়ার হানিয়াং ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি অধ্যায়নরত বাংলাদেশি আরিফুর রহমান বলেন, ‘খুবই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে, কোথাও বের হতে পারছি না। ইউনিভার্সিটিতে মার্চের ২ তারিখে আমাদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে তা ১৬ তারিখে পিছিয়েছে। এ অবস্থায় আমাদের ক্লাস অনলাইনে নেওয়া হবে বলে ইউনিভার্সিটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।’

কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে বেশিরভাগই দক্ষিণাঞ্চলীয় দেগু শহরের বাসিন্দা। দেগু শহর থেকে বাংলাদেশি প্রবাসী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আজ তিন সপ্তাহ বাসা থেকে বের হই না। শুধু যেখানে কাজ করি সেই ফ্যাক্টরি পর্যন্তই আমাদের যাতায়াত সীমাবদ্ধ।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিদিন কর্মস্থলে ঢোকার সময় আমাদের শরীরের তাপ মাত্রা চেক করা হয়। বাসা-কোম্পানি কাছাকাছি। বাসা থেকে বাইরে কোথাও না যেতে মালিকের নিষেধাজ্ঞা আছে। আমাদের এই ফ্যাক্টরিতে কোরিয়ানসহ ১০০ জন শ্রমিক কাজ করে। তার মধ্যে বাঙালি ১৭ জন। বাইরে যেতে না পারায় খাওয়া দাওয়ায় কষ্ট হচ্ছে। হালাল ফুডের দোকানে ফোন করলে তারা খাবার নিয়ে আসে। কিছু প্রয়োজন হলে কুপাংয়ে অর্ডার করি।’

কোরিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এরই মধ্যে কোরিয়ায় যে চার্চটি থেকে প্রথম করোনাভাইরাস ছড়াতে শুরু করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। সরাসরি খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বহু নিষেধ সত্ত্বেও যে তৎপরতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলার কথা ছিল চার্চটির, তারা তা করেনি।

তবে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় জাতির কাছে ক্ষমা চেয়েছেন সেই চার্চের প্রধান লি মান-হি। গত সোমবার (৩ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে দুইবার হাঁটু গেড়ে নত মস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন তিনি। মি. লির বিরুদ্ধে সম্ভাব‌্য অবহেলার অভিযোগ এনে বিষয়টি তদন্ত করতে চাইছেন দেশটির আইন প্রণেতারা।

গোটা বিশ্বে কোভিড-১৯ সংক্রমণের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) পর্যন্ত করোনাভাইরাসের থাবায় চীনে আক্রান্তের সংখ‌্যা ৮০,৪০৯ জন, মৃত্যু হয়েছে ৩,০১২ জনের। ইরানে আক্রান্ত ৩,৫১৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ১০৭ জনের। ইতালিতে আক্রান্ত ৩,০৮৯ জন, মৃত্যু ১০৭ জনের।

জাপানে আক্রান্ত ৩১৭ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৬ জনের। ফ্রান্সে আক্রান্ত ২১২ জন, মৃত্যু ৪ জনের। স্পেনে আক্রান্ত ২০০ জন, মৃত্যু ১ জনের। এভাবে বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ৯৬ হাজার ১৭১ জনে। ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে তিন হাজার ৩০৫ জনের মৃত‌্যু ঘটিয়েছে এ ভাইরাস। এদের মধ্যে চীনেই মারা গেছে তিন হাজার ১২ জন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত এখন পর্যন্ত এই রোগে কোনো বাংলাদেশি আক্রান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। তিনি বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

দক্ষিণ কোরিয়া/হানিফ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়