ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৫)

মোহাম্মদ তৌহিদ, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৪, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০২:২৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৫)

ছবি: ইন্টারনেট

বেইজিংসহ চীনে জাতীয় পর্যায়ের ছুটির দিনগুলো অন‌্যরকম। বছরের সাত থেকে দশ দিনব্যাপী ছুটিগুলোতে শহরের চেহারা একেবারে বদলে যায়। আর্থিক লেনদেন বন্ধ থাকে, সরকারি বাজার থাকে বন্ধ।

ছুটির দিনে বেইজিংয়ের দর্শনীয় স্থানগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় থাকে। অনেক পর্যটকই এমন ভিড় এড়িয়ে যেতে পারেন, যদি ছুটির দিন সম্পর্কে ধারণা থাকে। 

পুরো দেশের মতো শনিবার ও রোববার বেইজিংয়ের সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবে শনিবার ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু থাকে। তাই জরুরি আর্থিক কার্যক্রমগুলো সারা যায় সহজেই। এছাড়া, দীর্ঘ ছুটির দিনগুলোতে নাগরিক পরিষেবার স্থানে সীমিত পরিসরে সেবা চালু থাকে। বেইজিংয়ের জাতীয় পর্যায়ের ছুটি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো।

জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি: চীনের বসন্ত উৎসব বা নববর্ষ। বসন্ত উৎসব চীনা জাতির সবচেয়ে বড় উৎসব। ঐতিহাসিক দলিল অনুযায়ী এ উৎসবের বয়স চার হাজার বছরেরও বেশি। নিয়ম অনুযায়ী, চীনের চান্দ্রবর্ষের শেষ মাসের ২৩তম দিন থেকে নতুন বছরের প্রথম মাসের ১৫তম দিন পর্যন্ত চলে বসন্ত উৎসব বা নববর্ষের কার্যক্রম। ১৫তম দিনে অনুষ্ঠিত হয় লণ্ঠন উৎসব। সব মিলিয়ে বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয় প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। সাধারণ হিসেবে, খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকার জানুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যে ১০ দিন টানা জাতীয় ছুটি উপভোগ করেন চীনা মানুষ।

মার্চ: ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে চীনে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এদিন পুরো চীনের কর্মজীবী নারীরা অর্ধদিবস ছুটি উপভোগ করেন।

এপ্রিল: ছিং মিং চিয়ে বা সমাধি পরিচ্ছন্নকরণ উৎসব। প্রতি বছর এপ্রিলের শুরুতে সমাধি পরিচ্ছন্নকরণ উৎসব বা ছিং মিং চিয়ে’র দিনটি আসে। প্রথাগতভাবে চীনাদের জন্য দিনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছরের বসন্তকালে চীনারা উৎসবটি উদযাপন করেন। দিবসের এক দিন ছুটিকে আগের বা পরের সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সঙ্গে সংযুক্ত করে টানা তিন দিনের ছুটির ব্যবস্থা করে প্রশাসন।

মে: আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস। সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র চীনের জন্য অবশ্যই দিবসটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের ৮০টি দেশের মতো চীনেও এদিন সরকারি ছুটি থাকে। তবে, ২০১৯ সালের মে মাস থেকে নিয়ম কিছুটা বদলে যায়। চীন সরকার বেইজিংসহ সারা দেশে মে দিবস উপলক্ষ্যে দুই দিন রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করে। এর সঙ্গে সপ্তাহের আগের ও পরের দুটি সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত করে, টানা চার দিনের জাতীয় ছুটির ব্যবস্থা চালু করে চীন।

জুন-জুলাই: ড্রাগন বোট উৎসব। চীনের চান্দ্রবর্ষের পঞ্চম মাসের পঞ্চম দিন ঐতিহ্যবাহী ড্রাগন নৌকা উৎসব বা তুয়ান উ চিয়ে। খ্রিষ্টীয় পঞ্জিকার জুন মাসের ৭/৮ তারিখ এ দিনটি পাওয়া যায়। চীনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উৎসবের মধ্যে ড্রাগন বোট বা ড্রাগন নৌকা উৎসব অন্যতম। বরাবরের মতো চীন সরকার সাপ্তাহিক দুটি ছুটির দিনের সঙ্গে মিলিয়ে টানা তিন দিনের জাতীয় ছুটির ব্যবস্থা করে এ সময়।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবর: চীনের প্রধান উৎসবগুলোর একটি মধ্য-শরৎ উৎসব। সাধারণত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় উৎসবের দিনটি পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যেদিন পূর্ণ চন্দ্র বা পূর্ণিমা রাত। চীনের চান্দ্রবর্ষের অস্টম মাসের ১৫তম দিনটিই চীনের মধ্য শরৎ উৎসব। এ উৎসবে বাড়ি ফিরে পরিবারের সবার সঙ্গে মিলিত হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। তাই, সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সঙ্গে মিলিয়ে কমপক্ষে তিন দিনের জাতীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

অক্টোবর: চীনারা বলে থাকে ‘গোল্ডেন উইক’ বা সোনালি সপ্তাহ। কারণ, চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে টানা সাত দিনের ছুটি থাকে। অভ্যন্তরীণ ও দেশীয় পর্যটনের উৎকৃষ্ট সময় এটি। শরৎকালীন এ সময় আবহাওয়াও থাকে দারুণ! জাতীয় দিবসের এ ছুটিতে গোটা বেইজিং ফাঁকা হয়ে যায়। প্রাত্যহিক নগর জীবনের অনেক সেবা এ সময় কিছুটা কঠিন হলেও ছুটির আমেজ ও আনন্দ সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। 


লেখক:  বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।

আরও পড়ুন

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৪)

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৩)
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-২)
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-১)

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়