ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

করোনা নিয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ভার্চুয়াল উত্তেজনা

ছাবেদ সাথী, নিউইয়র্ক প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:৫৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
করোনা নিয়ে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের ভার্চুয়াল উত্তেজনা

নিউইয়র্কে জাতিসংঘের বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে ভার্চুয়াল উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। চীন কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আনলে এ উত্তেজনা দেখা দেয়।

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য চীনকে দায়ী করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।  করোনাভাইরাস মহামারির জন্য তিনি চীনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানান।  এদিকে, এ অভিযোগ খণ্ডন করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।  যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, কোনো দেশের সঙ্গে একটি শীতল যুদ্ধে জড়ানোর ইচ্ছে তার দেশের নেই।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ এমন এক সময়ে করলেন, যখন তার সামনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আছে মাত্র ৩৯ দিন। এ সময়ে এভাবে চীনকে ঘায়েল করার মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনে সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

তবে করোনা সংক্রমণের বিষয়টিকে তিনি গুরুত্বই দেননি এমন কথা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন কার্ড নির্বাচনে কতটা কাজে দেবে তা বোঝা মুশকিল।

বিশ্বের বড় দুই শক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তেজনা বা সংঘাতময় অবস্থা বিদ্যমান অনেকদিন ধরে। এর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, প্রযুক্তি, হংকং ইস্যু, সিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিম সংখ্যালঘু উইঘুরদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের গোয়েন্দাবৃত্তিসহ বিভিন্ন ইস্যু।  এসব ইস্যুতে দুই দেশ পাল্টাপাল্টি ব্যবস্থা নিয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কনস্যুলেট।  বাণিজ্যে শুল্ক আরোপ, বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে।  ফলে বিশেষ করে এই বছরটিতে সেই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে পৌঁছে যায়।

এ বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন হচ্ছে বেশির ভাগই ভার্চুয়াল। সেখানে আগে থেকে বিশ্ব নেতাদের রেকর্ড করা বক্তব্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।  সাধারণত প্রতি বছরের এই অধিবেশনে ভূ-রাজনৈতিক কোনো ইস্যু সামনে থাকে।  কিন্তু এবার যেহেতু সশরীরে সবাই উপস্থিত নেই, তাই এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু এবার অনুপস্থিত। এবারের অধিবেশনে প্রতিটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন মাত্র একজন প্রতিনিধি। ফলে এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের ঠেসাঠেসি করার সুযোগ কমই।  কিন্তু তার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বক্তব্যে নিজের অর্জন তুলে ধরেছেন এবং তার বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করেছেন।  বিশেষ করে তার আক্রমণের মূলে ছিল চীন।  তিনি বলেন, একটি দেশকে অবশ্যই আমাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। ওই দেশটি বিশ্বে প্লেগ বা মহামারি ছড়িয়ে দিয়েছে, তারা হলো চীন।

ট্রাম্প বলেন, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রথমদিকে আভ্যন্তরীণ সব রকম চলাচল লকডাউন করে দেয় চীন। অন্যদিকে চীন ত্যাগ করার ফ্লাইট সচল ছিল।  এর মধ্য দিয়ে বিশ্বকে সংক্রমিত করা হয়েছে।  চীনের বিরুদ্ধে আমি যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলাম, তার নিন্দা করেছে চীন। এমনকি তারা অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো বাতিল করে জনগণকে দেশের ভেতর বন্দি করে রেখেছিল।

আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ সময়ে করোনাভাইরাস ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বক্তব্যের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।  কারণ, তিনি এই ভাইরাসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঘন ঘন চীনকে দায়ী করেছেন।  তিনি বলেছেন, চীন চাইলে এই রোগের বিস্তার বন্ধ করতে পারতো।  তবে জবাবে চীন বলেছে, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।  এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্প দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চাইছেন।  ওদিকে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে দুই লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এই সংখ্যা বিশ্বে অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি।  তবে এই রোগকে মাঝে মাঝেই অবহেলা করে বক্তব্য রেখেছেন ট্রাম্প।

জাতিসংঘে ট্রাম্পের বক্তব্যের পরপরই শি জিনপিং বক্তব্য রাখেন। তিনি সবাইকে সভ্যতার সংঘাতের (ক্ল্যাস ওব সিভিলাইজেশনস) ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেন।  বলেন, আমরা অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সব মতপার্থক্য ও বিরোধ নিষ্পত্তি অব্যাহত রাখবো। আমরা শুধুমাত্র আমাদের নিজেদের ভিতরে অথবা শূন্য ফল আসে এমন কোনো খেলায় নিজেদের আবদ্ধ রাখবো না। তিনি এদিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনাও করেন।  বলেন, বৈশ্বিক বিষয়ে আধিপত্য বিস্তারে, অন্যদের গন্তব্য নিয়ন্ত্রণে অথবা সবকিছুতে তাদের সুবিধা বজায় রাখার একক অধিকার কোনো দেশেরই নেই।

তিনি আরও বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চীনে গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ সর্বোচ্চে পৌঁছাবে এবং ২০৬০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হবে। উল্লেখ্য, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ করে চীন।

ছাবেদ সাথী/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়