ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৬)

মোহাম্মদ তৌহিদ, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৬)

চীনের গ্র্যান্ড ক্যানেল (ছবি: ইন্টারনেট)

মহাখাল বা গ্র্যান্ড ক্যানেল: চীনের পূর্বাঞ্চলের সমতল ভূমিতে শুরু হওয়া বড় একটি প্রকল্প মহাখাল বা গ্র্যান্ড ক্যানেল। এটি প্রাচীন চীনাদের তৈরি বৃহত্তম জলসেচ প্রকল্প। একইসঙ্গে এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন ও দীর্ঘতম খাল। 

২০১৪ সালের ২২ জুন, জাতিসংঘের ৩৮তম ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সম্মেলনে’ চীনের গ্র্যান্ড ক্যানেল বা মহাখালকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটি চীনের ৪৬তম বিশ্ব ঐতিহ্য।

বৃহত্তম এই খালের নির্মাণকাজ শুরু হয় ৪৮৬ খ্রিষ্টপূর্বে। এতে সুইথাং গ্র্যান্ড ক্যানেল, চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেল এবং চ্যতুং গ্র্যান্ড ক্যানেল- এই তিনটি অংশ রয়েছে। মোট দৈর্ঘ্য ২৭০০ কিলোমিটার। এটি মহানগরী বেইজিং, থিয়েনচিন, হ্যপেই, শানতুং, হ্যনান, আনহুই, চিয়াংসু ও চ্যচিয়াং মোট আটটি প্রদেশ সংযুক্ত করেছে। চীনের হাই নদী, হোয়াংহ নদী, ইয়াংসি নদী ও ছিয়ানথাং নদীকে সংযুক্ত করেছে এই মহাখাল। আড়াই হাজার বছর ধরে প্রবাহিত হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম এই খাল।

এর মধ্যে চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেল অংশটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন খাল হিসেবে পরিচিত। মহাখাল, মহাপ্রাচীর ও খান আরচিংকে একসঙ্গে চীনের প্রাচীনকালের ‘তিনটি মহান প্রকল্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেল দক্ষিণ দিকে চীনের হাংচৌ শহর থেকে শুরু হয় উত্তরদিকে বর্তমান বেইজিং পর্যন্ত বিস্তৃত।  এই অংশটি চ্যচিয়াং, চিয়াংসু, শানতুং ও হ্যপেই- এই চারটি প্রদেশ এবং বেইজিং ও থিয়েনচিন শহর অতিক্রম করেছে। চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেলের মোট দৈর্ঘ্য ১৭৯৭ কিলোমিটার। খালটি চীনের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতি, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও উন্নয়ন, বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিল্প ও কৃষির উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেল চীনের ইয়াংসি নদীর পরে দ্বিতীয় ‘সোনালি জলপথ’ নামে খ্যাত। ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মহাপ্রাচীরের মতোই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা। চীনের মহাখাল সুয়েজ খালের চেয়ে নয় গুণ এবং পানামা খালের চেয়ে ২২ গুণ বড়।

চিংহাং গ্র্যান্ড ক্যানেলের দুই পাশ চীনের সবচেয়ে সমৃদ্ধ কৃষি অঞ্চল। এটি চীনের শাংহাই, নানচিং, সুইচৌ, চেনচিয়াং শহরকে সংযুক্ত করেছে। এই ‘সোনালি জলপথ’কে প্রাণচঞ্চল করার জন্য শানতুং, চ্যচিয়াংসহ সংশ্লিষ্ট প্রদেশগুলো গ্র্যান্ড ক্যানেলের বিভিন্ন অংশ খনন ও পুনর্নির্মাণ করে। 

২০০২ সালে মহাখালকে চীনের ‘দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে পানি সরবরাহ’ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। মহাখাল-সংশ্লিষ্ট এ প্রকল্পটিও চীনের দীর্ঘ প্রকল্প। এই খালটি হানচিয়াং নদীর পানি বেইজিংয়ের সামার প্যালেসে এনে ফেলেছে। এখান থেকে হোয়াংহ নদীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে প্রকল্পটি। সবমিলিয়ে এর দৈর্ঘ্য ১৪৩২ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের মাধ্যমে হ্যনান, হ্যপেই, বেইজিং ও থিয়েনচিনসহ ১৪টি শহরে পানির যোগান দেওয়া হয়। 

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেইজিংয়ের থোংচৌ এবং হ্যাপেই প্রদেশের উছিং ও সিয়াংহ্য এলাকার জলসেচ বিভাগ কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে চিংহাং মহাখালের থোংচৌ-সিয়াংহ্য-উছিং অংশ পুনরায় যাতায়াতের কাজে ব্যবহার প্রক্রিয়া শুরু হয়। 


লেখক:  বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়