ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আমার দেখা টোকিও (পর্ব-৮)

পি আর প্ল্যাসিড, জাপান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০১, ৪ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১০:০৬, ৪ অক্টোবর ২০২০
আমার দেখা টোকিও (পর্ব-৮)

জাপানে আশির দশক থেকে যখন বাংলাদেশিদের দলে দলে আসা শুরু হয়, তখন থেকে টোকিওর কিছু এলাকায় বাঙালিদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিল। যদিও সেসব ছিল নেহায়েৎ রাজনৈতিক আলাপ আলোচনাকে কেন্দ্র করে। ব্যবসায়ীকভাবে উল্লেখ করার মতো হয়ে উঠেনি। যা কিছু হয়েছিল তার স্থায়ীত্ব ছিল কম।

আমি নব্বই দশকের শুরুতে জাপান এসে টোকিওর বিভিন্ন এলাকায় বাঙালিদের আনাগোনা দেখেছি। এর মধ্যে কিতা ওয়ার্ডস্থ জেআর ট্রেন লাইনের হিগাশি জুজো স্টেশনের পাশেই বাংলাদেশি খাবারের (হালাল ফুড শপ) একটি দোকানকে কেন্দ্র করে প্রচুর বাংলাদেশির আনাগোনা দেখেছি। দোকানের নাম সোনালী হালাল ফুড। দোকানটি এখন আর আগের স্থানে নেই। যদিও সেই দোকানের সত্বাধিকারীর বাড়ি কুমিল্লাতে হওয়ায় তিনি তার এলাকার বহু ছাত্রকে জাপান এসে পড়াশোনা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। পরে দেখা গেছে তাদের অধিকাংশ ছাত্র পড়াশোনার পাট চুকিয়ে কর্মজীবনে চলে গেলেও এলাকা ছাড়েনি। যে কারণে হিগাশি জুজোতে বাঙালির সংখ্যা স্থায়ীভাবে এবং অস্থায়ীভাবে বেড়ে যায়।

কারো কারো ধারণা বর্তমানে এখানে বাঙালির সংখ্যা ৭০০ মতো। আবার কারো কারো মতে হাজারের উপর। যেহেতু এখানকার প্রবাসী বাঙালিদের একটা বড় সংখ্যা জাপানে বৈধভাবে থাকার অনুমোদন করেছেন। তাই কারো সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। তবে এটুকু বলতে পারি টোকিওর অন্যান্য এলাকা থেকে এই এলাকাতে বাঙালি চোখে পড়ার মতো।

দিনের যে কোনো সময় এই এলাকার রাস্তায় হাঁটার  সময় বাঙালি কারো না কারো দেখা পাওয়া যাবেই। আবার রাত যত হয় তত বাঙালির হাঁটার সময়  রাস্তায় মোবাইলে উচ্চ স্বরে বাংলায় কথা বলতে শোনা যায়।

এখানে সম্প্রতি একটি মসজিদ (আল মদিনা) নির্মাণ করা হয়েছে। তাছাড়া খুব নিকটবর্তী এলাকায় কম করে দশটি হালাল ফুডের দোকান চলছে বাঙালিদের। পাশাপাশি রেস্টুরেন্টও গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি। এর মধ্যে একটি রেস্টুরেন্ট, যার নামকরণ করা হয়েছে টাইগার রেস্টুরেন্ট। কুমিল্লার ছেলে তোফায়েল আহমেদ এই রেস্টুরেন্টর মালিক। এখানে বাংলাদেশ থেকে আগত বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে সভা বা পার্টির আয়োজন করা হয়। এছাড়া বাঙালি ছাত্র ও কর্মজীবীদের বসে আড্ডা দেওয়ার সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে এই টাইগার রেস্টুরেন্ট। এ কারণে এলাকাটি দেখে মনে হয় টোকিওতে যেনো এক টুকরো বাংলাদেশ।

সম্প্রতি স্টেশন থেকে বের হয়ে দোকানপাট সমৃদ্ধ রাস্তা (সুতেনগাই)-র ওপর একটি পাচিংকো (স্টল বা জুয়া)-র দোকানের সামনে ইলেক্ট্রিক সাইনবোর্ডে বাংলায় লেখা হয়েছে স্বাগতম পাচিংকো। যদিও লেখাটি সফটের কারণে সঠিক লেখা হয়নি তারপরেও কর্তৃপক্ষ যেহেতু জানে যে, এই এলাকায় বাঙালিদের বসবাস বেশি তাই বাঙালিদের আকৃষ্ট করতে এখানে বাংলা ব্যবহার করা হয়েছে। আবার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জাপানি এক সেলুন মালিক বাংলায় কথা বলছেন। এটাও বাঙালিদের আকৃষ্ট করতে তার এক ধরনের কৌশল বলা যায়। মূল কথা বাঙালিদের আকৃৃষ্ট করতেই মালিকপক্ষ বাংলা শিখে বাংলায় তাদের ক্লায়েন্টদের ডাকছেন।

জাপানের রাজধানী টোকিওর এই হিগাশি জুজো বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে এখানে অনেক নতুন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তার নজর পড়েছে। অনেকের ইচ্ছে এখানে একটি বাঙালিদের দোকান বা অন্য যেকোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ব্যবসা শুরু করার।

এই এলাকায় প্রথম হালাল শপ যিনি করেছিলেন তার বাড়ি কুমিল্লায়। এ কারণেই তিনি তার এলাকার বহু ছাত্র এবং বেকার ছেলেকে জাপান এনেছেন। তাদের অধিকাংশ প্রথম জাপান এসে এই এলাকায় তার মাধ্যমেই ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। এ কারণেই হিগাশি জুজোর অধিবাসীদের বেশির ভাগ কুমিল্লারই।

আমরা জাপানের বিভিন্ন প্রিফেকচারে চুকা গাই বা চাইনিজ অধ্যুষিত এলাকায় যাই ঘুরতে, খেতে বা বাজার করতে সুতরাং চাইলে এখন থেকে জাপান প্রবাসীই নয় শুধু দেশ থেকে যারা জাপান ভ্রমণে আসবেন তারা চাইলেই পারেন এই হিগাশি জুজোতে একবার পদচারণা দিয়ে যেতে। আসলে আপনার ভালো লাগবে এখানে বাঙালিদের দ্বারা পরিচালিত মসজিদ আর দোকানপাট দেখে। এবং বাঙালিদের প্রবাস জীবন নিয়ে কথা বলে।


পি আর প্ল্যাসিড, জাপান প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়