ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৮)

 মোহাম্মদ তৌহিদ, চীন থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ৪ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৮:৪৭, ৪ নভেম্বর ২০২০
বেইজিংয়ের জানালা (পর্ব-৮)

বেইজিংয়ের সিছাং জেলার নিউচিয়ে বা অক্স স্ট্রিট মুসলিম পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় একটি স্থান। বিশেষ কোনো স্থাপনা নয়- আজ থেকে ১২০০ বছর আগে তৈরি নিউচিয়ে মসজিদ, পর্যাপ্ত হালাল খাবারের দোকান ও মুসলিম জনগোষ্ঠীই এই আকর্ষণের কেন্দ্র। 

এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বেইজিংয়ে ১০ লাখেরও বেশি মুসলিম জনগোষ্ঠী বাস করে।  আর বেশিরভাগই বাস করে নিউচিয়ে-সংলগ্ন এলাকায়। চীনের বৈশিষ্ট্যময় খাবার, হটপট (হুও কুও), রোস্ট ডাক (খাও ইয়া), ডাম্পলিংস (চিয়াও য্যি), নুডলস ইত্যাদি উপভোগ করতে অথবা, গরু, ছাগল, মুরগির টাটকা হালাল মাংস সংগ্রহ করতে মহানগরীর মুসলিম জনগোষ্ঠী সাধারণত এ অঞ্চলে ছুটে যান। নিউচিয়েতে হালাল খাবারের প্রাচুর্য দেশি ও বিদেশিদের কাছে অন্যতম একটি আকর্ষণ।

নিউচিয়ে মসজিদ: বেইজিংয়ের সবচেয়ে পুরাতন ও সবচেয়ে বড় মসজিদ এটি।  ৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে চীনের লিয়াও রাজবংশের সময় প্রথম এ মসজিদটি তৈরি হয়। পরবর্তীতে ছিং রাজবংশের খাংসি সম্রাট (১৬৬১-১৭২২ খ্রিষ্টাব্দ) মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও বর্ধিত করেন। মসজিদের আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটার। 

মসজিদের নকশা ও নির্মাণশৈলীতে ইসলাম ও হান জাতির বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণ সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়। নামাজের প্রধান কক্ষটি ৬০০ বর্গমিটার। এতে ১০০০ মানুষ একসঙ্গে নামাজ  আদায় করতে পারেন। নারীদের নামাজের সুবিধার্থে অপেক্ষাকৃত ছোট আরও একটি নামাজের ঘর রয়েছে। প্রধান দুটি নামাজের ঘরের পাশাপাশি মসজিদ কর্তৃপক্ষের থাকার স্থান, ধর্মীয় শিক্ষার জায়গা ও প্রচুর উন্মুক্ত অংশ রয়েছে। 

মসজিদের ইতিহাস: ৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে স্থানীয় মুসলিম জনসাধারণ চীনা বৈশিষ্ট্যময় মসজিদটি তৈরি করেন। এর ভেতরের দিকে ইসলামিক নকশা ছিল। মসজিদের এক ইমামের ছেলে নজরউদ্দীন এর নকশা করেছিলেন। এরপর ১২১৫ সালে মোঙ্গল সম্রাট চেঙ্গিস খানের সেনাবাহিনীর হাতে মসজিদটি ধ্বংস হয়। এরপর মিং রাজবংশের আমলে ১৪৪৩ সালে মসজিদটি পুনরায় তৈরি করা হয়।  তারপর ১৪৯৬ সালে একবার সংস্কার হয় এবং সর্বশেষ ছিং রাজবংশের আমলে ১৬৯৬ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নয়ন করা হয়। সে সময় আশেপাশের বাজারগুলো গরু-ছাগলের হালাল মাংসের বাজার হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে। এরপর থেকে আজ অবধি তেমনই আছে।

মসজিদের চীনা নাম লিপাইসি, ১৪৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ছেংহুয়া সম্রাট এই নাম দেন। বর্তমানে এটি উত্তর চীনের সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত মসজিদ।১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠিত হলে নিউচিয়ে মসজিদে ১৯৫৫, ১৯৭৯ ও ১৯৯৬ সালে তিনবার বড় ধরনের সংস্কার হয়। এরপর ২০০২ সালে নগরের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী ঘোষণা করা হয়, মসজিদটি বর্তমান অবস্থানেই থাকবে এবং একে ঘিরে সবুজায়ন ও বৃহৎ চত্বর গড়ে তোলা হবে।

মসজিদ প্রাঙ্গণে বেইজিংয়ে ইসলাম প্রচার করতে আসা জনৈক তাবেয়ি ও তার সন্তানের কবর রয়েছে। সুদূর সৌদি আরব থেকে তিনি এসেছিলেন উত্তর চীনে। স্থানীয় হুই মুসলিম মানুষ এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। সেই সঙ্গে প্রচুর পর্যটক ও বিদেশি মুসলিমও এ অঞ্চল ভ্রমণ করেন।  ইসলামের বৃহত্তম দুটি উৎসব— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় নিউচিয়ে মসজিদকেন্দ্রীক মুসলিম-অমুসলিম নারী-পুরুষের ঢল নামে।  স্থানীয় মুসল্লিদের পুনর্মিলনর স্থানে পরিণত হয় নিউচিয়ে। ঈদের সময় উত্সবের নিরাপত্তা ও স্থানীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নগর কর্তৃপক্ষ মসজিদের চার পাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। বাহারি হালাল খাবারের আয়োজন দেখা যায় উৎসবের সময়।

লেখক:  বিদেশি বিশেষজ্ঞ, বাংলা বিভাগ, চায়না মিডিয়া গ্রুপ, বেইজিং, চীন।

ঢাকা/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়