ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

লেবাননে হিজবুল্লাহ বিরোধী সমালোচকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

জসিম উদ্দীন সরকার, লেবানন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৫:৫৫, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
লেবাননে হিজবুল্লাহ বিরোধী সমালোচকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার

লেবাননের বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক, হিজবুল্লাহ বিরোধী সমালোচক লোকমান স্লিমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃস্পতিবার (৪ফেব্রুয়ারি) মাথায় চারটি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে স্থানীয় আইন শৃংখলা বাহিনী।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সন্ধ্যায় একটি কালো রঙের ভাড়া গাড়ি করে তিনি বৈরুত ফিরছিলেন। দক্ষিণ লেবাননের আদ্দুসিয়াহ গ্রামের কাছে গাড়ির চালকের আসনে রক্তাক্ত অবস্থায় ৫৮ বছর বয়সি লোকমান স্লিমকে পাওয়া যায়। পরবর্তী সময়ে তদন্ত কমিটির প্রধান জজ রাহেফ রহমান লোকমানের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সাইদার সরকারি হাসপাতালে পাঠান। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুযায়ী লোকমান স্লিমের মাথায় ৪টি ও পিঠে একটিসহ মোট ৫টি গুলি লেগেছে।

তদন্ত কমিটির প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে আনুমানিক রাত ২টা থেকে ৩টার মধ্যে তাকে হত্যা করা হয়। তার মোবাইল ও জাতীয় পরিচিয় পত্রের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার এক টুইটে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত সাদ হারিরি লোকমান স্লিমকে লেবাননের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের একজন নতুন শহীদ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে যাব। হত্যার নিন্দা জানানোই যথেষ্ট নয়। অপরাধীকে অবশ্যই প্রকাশ্যে এনে হত্যার মেশিন বন্ধ করতে হবে ‘

তবে অনেকেই এই হত্যার ঘটনায় ‘হিজবুল্লাহ'র দিকে আঙুল তুলছেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ফারেস সোয়াইদ বলেছেন, ‘হিজবুল্লাহ'র প্রভাবশালী এলাকায় লোকমান স্লিমকে হত্যা করা হয়েছে। তাই হিজবুল্লাহ'ই প্রধান সন্দেহভাজন।’

ফিউচার মুভমেন্টের সিনিয়র নেতা মুস্তফা আলাখা বলেন, ‘স্লিম হিজবুল্লাহ'র শত্রু হিসেবেই পরিচিত। স্লিম যেহেতু হিজবুল্লাহ'র সমালোচনা করতেন, তাই তাকে তারাই সরিয়ে দিয়েছে, যাতে তাদের বিরুদ্ধে কেউ আর সমালোচনা  না করতে পারে।

স্কায়েস প্রেস ফ্রিডম সেন্টার বলছে, এটা একটি মুক্ত রাজনীতির চিন্তার প্রতীককে নির্মূল প্রচেষ্টা। কারণ কিছু রাজনীতিবিদ সমালোচকদের ভয় পায়।

অন্যদিকে এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘আমরাও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’ খুনিকে খুঁজে বের করে দ্রুত শাস্তির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগকে অনুরোধ করেন সংগঠনটি।

প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন তদন্ত সংস্থাকে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে দ্রুত খুনিদের খুঁজে বের করে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবও এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন।

স্লিমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ইতিহাসের প্রভাষক মাকরাম রাবাহ বলেন, ‘লোকমান স্লিমকে চিনে জানে, এমন শত্রুরাই তাকে হত্যা করেছে। ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক।’

ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এগনেস ফনডার মুহল এক বিবৃতে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন দূতাবাসও। রাষ্ট্রদূত ডরোথি শেয়া এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘এটি একটি গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা ধ্বংসের কাপুরুষোচিত হামলা।’

এছাড়া জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছে এবং নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।

ঢাকা/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়