ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

জাতিসংঘে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, যুক্তরাষ্ট্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
জাতিসংঘে বর্ণাঢ্য আয়োজনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত

জাতিসংঘ সদরদপ্তরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পঞ্চমবারের মতো উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। 

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ইভেন্টটি ভার্চুয়ালভাবে অনুষ্ঠিত হয়, যা জাতিসংঘ ওয়েভ টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচার করে।

অনুষ্ঠানটির সহ-আয়োজক ছিল বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কানাডা, মিশর, জর্ডান, লিথুনিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাতিসংঘ সচিবালয় ও ইউনেস্কো। 

এতে অংশ নেন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির। বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘের বহুভাষিক সমন্বয়কারী ও জেনারেল অ্যাসেম্বিলি ও কনফারেন্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল, জাতিসংঘের বৈশ্বিক যোগাযোগ বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এবং  সহ-আয়োজক দেশসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ।

অনুষ্ঠানে ইউনেস্কো মহাপরিচালকের ভিডিও বার্তা এবং নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের বার্তা উপস্থাপন করা হয়। স্প্যানিস ভাষাভাষী বন্ধু-দেশগুলোর পক্ষে এ সভায় বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত পর্তুগালের স্থায়ী প্রতিনিধি।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সঞ্চালনা করেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রাণ উৎসর্গকারী সকল ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।

রাবাব ফাতিমা বলেন, “ভাষা শহীদদের এই আত্মত্যাগের ফলেই ‘বাংলা’ রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করেছে”। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। 

তিনি বলেন, “জাতির পিতা ১৯৫২ ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আর এই ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই ১৯৭১ সালে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা”।

যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশি বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা করার জন্য প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাবাব ফাতিমা। 

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউনেস্কোর সঙ্গে সরকারিভাবে যোগাযোগ স্থাপন এবং বিষয়টি এগিয়ে নিতে বিচক্ষণ ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন।  কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সেকথা স্মরণ করেন তিনি। 

রাবাব ফাতিমা বলেন, পৃথিবীর বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সমূহের সংরক্ষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানী ঢাকায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। 

বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে যে প্রস্তাবনা রেখেছেন তা পূনরুল্লেখ করেন তিনি।

সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনকে ধন্যবাদ জানান। 

সাধারণ পরিষদের সভাপতিসহ অন্যান্য বক্তাগণ জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। মাতৃভাষা ও বিশ্বব্যাপী বহুভাষিকতা এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে নেতৃত্বশীল ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে তারও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বক্তাগণ বহুভাষিকতার গুরুত্ব বিশেষ করে কোভিড-১৯ এর প্রেক্ষাপটে বহুভাষিকতার তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের সংরক্ষণ এবং শিক্ষা ও যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে তা ব্যবহার এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে মর্মে উল্লেখ করেন তারা। 

এরপর ছিল বহুভাষিক উপাদানের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক পর্ব।  ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রকে উজ্জ্বীবিত রাখার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের বহুভাষিক উপাদানের সমন্বয়ে তিনটি ভিন্নমাত্রার সঙ্গীত পরিবেশন করে ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিলুপ্তপ্রায় ভাষা ‘খোসা-এর একটি অপেরা সঙ্গীত, ফ্রেঞ্চ ভাষার একটি যন্ত্রসঙ্গীত ও জাপানি শিল্পী পরিবেশিত একটি রবীন্দ্র সঙ্গীত।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিমসং ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ -এর ভিন্ন মাত্রার পরিবেশনা সবাইকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব উইমেন এর শিক্ষার্থীরা বহুভাষার সমন্বয়ে গানটি পরিবেশন করেন।

এছাড়া জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক স্কুলের শিক্ষার্থীগণের পরিবেশনায় ৩৮টি ভাষায় ক্ষুদে ভিডিও বার্তা অনুষ্ঠানটিতে আলাদা মাত্রা এনে দেয়।

ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানটিতে জাতিসংঘ সদস্য দেশসমূহের উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

ঢাকা/ছাবেদ সাথী/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়