মালয়েশিয়ায় জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগে বাংলাদেশিদের মামলা
এস.এ সৌরভ, (মালয়েশিয়া) || রাইজিংবিডি.কম
মালয়েশিয়ায় কাজ করছেন অভিবাসী শ্রমিকরা
মালয়েশিয়ার রাবার গ্লাভস প্রস্তুতকারক ব্রাইটওয়ে হোল্ডিংসের সাবেক শ্রমিকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিম্বার্লি-ক্লার্ক করপোরেশন এবং আনসেল লিমিটেডের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। রয়টার্সের প্রতিবেদন জানায়, সরবরাহকারীর কাছে জোরপূর্বক শ্রমের কথিত ব্যবহার থেকে ‘জ্ঞাতসারে লাভ’ করার অভিযোগে তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা বলেছেন, কিম্বার্লি-ক্লার্ক এবং অ্যানসেল ব্রাইটওয়ে এবং অন্যান্য মালয়েশিয়ান গ্লাভ প্রস্তুতকারকদের পাবলিক রিপোর্টের মাধ্যমে অভিযুক্ত শ্রম নিপীড়নের বিষয়ে তারা সচেতন ছিলেন এবং শ্রম অডিট কর্তৃক পাওয়া লঙ্ঘনগুলো সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
এদিকে কিম্বার্লি-ক্লার্ক বলেছেন, মামলাটি ‘সম্পূর্ণভাবে মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন।’ এছাড়া রয়টার্সকে একটি ইমেলে আরও বলেছেন, ‘কিম্বার্লি-ক্লার্ক সব ধরনের জোরপূর্বক শ্রমের বিরুদ্ধে এবং আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে আমাদের সরবরাহ শৃঙ্খলের মধ্যে থাকা সমস্ত শ্রমিকদের সঙ্গে, আমাদের কর্মক্ষেত্র এবং মানবাধিকারের মান অনুযায়ী আচরণ করা হয়।
অন্যদিকে আনসেল এবং ব্রাইটওয়ে তাত্ক্ষণিক কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। মালয়েশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলো থেকে লাখ লাখ অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে, বছরের পর বছর ধরে মূল রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে শোষণের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। ছয় গ্লোব প্রস্তুতকারকসহ আটটি মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানকে গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র নিষিদ্ধ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা মামলায়, ১৩ জন সাবেক ব্রাইটওয়ে কর্মী বলেছেন যে তারা মধ্যস্বত্বভোগীদের উচ্চ নিয়োগ ফি প্রদান করেছেন যার ফলে ঋণের বোঝা তৈরি হয়েছে। খুব অল্প সময় বা ছুটির দিন ছাড়া দীর্ঘসময় কাজ করেছেন এবং কোম্পানি তাদের পাসপোর্ট নিয়ে গেছে।
এদিকে কিম্বার্লি-ক্লার্ক, একটি মার্কিন ব্যক্তিগত পরিচর্যা সংস্থা যা ক্লিনেক্স ব্র্যান্ডের মালিক এবং অস্ট্রেলিয়ান ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম সরবরাহকারী আনসেলের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চাইছে কলম্বিয়া জেলার ফেডারেল জেলা আদালত।
শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক অধিকার আইনজীবী টেরেন্স কলিংসওয়ার্থ বলেছেন, ‘এই সংস্থাগুলো অস্বীকার করতে পারে না যে তাদের ব্রাইটওয়েতে জোরপূর্বক শ্রম আদায়ে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। ’
কলিংসওয়ার্থ আরও বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য প্রথমে কিম্বার্লি-ক্লার্ক এবং অ্যানসেলের সঙ্গে মধ্যস্থতার প্রস্তাব করেছিলেন, কিন্তু উভয় সংস্থাই সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সন্দেহভাজন জোরপূর্বক শ্রম আদায়ের জন্য ব্রাইটওয়ে পণ্যগুলোকে আমেরিকায় প্রবেশ করা নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ হিসেবে উল্লেখ, বলেছিল যে এটি জোরপূর্বক শ্রমের ১১টি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সূচকের মধ্যে ১০টি খুঁজে পেয়েছে।
এছাড়া, ব্রাইটওয়েতে অসদাচরণের অভিযোগ অন্তত এক বছর আগে প্রকাশ্যে ছিল।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে, মালয়েশিয়ার কর্মকর্তারা ব্রাইটওয়ে কর্মীদের শিপিং কন্টেইনারে বসবাস করতে দেখেছিলেন এবং একজন মন্ত্রী একটি অভিযানের পরে এই খারাপ অবস্থাকে ‘আধুনিক দাসত্ব’ হিসাবে তুলনা করেছিলেন।
এদিকে, ২০২১ সালের মে মাসে রয়টার্স রিপোর্ট করেছিল যে, ব্রাইটওয়ের শ্রম অডিটে বিশ্বব্যাপী নৈতিক মানদণ্ডের ৬১টি এবং মালয়েশিয়ার শ্রম আইনের ৫০টি আইন লঙ্ঘনের বিস্তারিত ছিল, যদিও নিরীক্ষকরা তখন বলেছিলেন যে তারা জোর করে শ্রম আদায়ে কিছু খুঁজে পাননি।
আনসেল সেই সময়ে রয়টার্সকে বলেছিলেন অডিট টিম, যখন পরিদর্শন করেছিল, তখন ‘শ্রমিক মানগুলোর সাথে বেশ কিছু অ-সম্মতি প্রকাশ করেছিল।’
উভয় কোম্পানি তখন বলেছিল, ডিসেম্বরে সরকারি অভিযানের পর থেকে ব্রাইটওয়ে এই সমস্যার কিছু সমাধান করেছে।
/সৌরভ/হাসান/সাইফ/
আরো পড়ুন