সাথী ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে পেঁয়াজ চাষ
টাঙ্গাইলে চরাঞ্চলে সাথী ফসল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে পেঁয়াজ চাষ। বেগুন, ফুলকপি, টমেটো, মরিচ, ধনেপাতার সাথে সাথী ফসল হিসেবে এই পেঁয়াজের চাষ হচ্ছে।
কৃষকরা বলছেন, গেল কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় প্রচুর পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। যার বেশিরভাগই সাথী ফসল হিসেবে। তবে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশীয় পেঁয়াজ চাষে বেশি সফলতা পাচ্ছেন না কৃষকরা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বিস্তৃত চরাঞ্চল, গোপালপুর-ভূঞাপুরের চরাঞ্চলে অধিকহারে হচ্ছে এই পেঁয়াজের আবাদ। স্বল্প সময়ে অল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় দিন দিন এই আবাদে চাষিদের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বর্তমান সময়ে পেঁয়াজের মূল্যর উর্ধ্বগতি থাকায় মুনাফাও হচ্ছে বেশি।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের চরাঞ্চল দুয়োজানি গ্রামের কৃষক মাইনুদ্দিন বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করছি। এবারের ফলন গেলো বছরগুলোর তুলনায় খুব ভালো হয়েছে। তবে মাজরা পোকা এই ফসলে খুব ক্ষতি করে, যার জন্য আমাদের কিছু বিষ স্প্রে করে দিতে হয়। তবে এটি মানব দেহের ক্ষতিকর নয়। ’
ওই এলাকায় বেগুন-চিচিঙ্গার সাথে পেঁয়াজ চাষ করা আরেক চাষী আব্দুল কালাম মিয়া বলেন, ‘একসাথে এক জমিতে তিনটি ফসল চাষ করে আমরা বেশি লাভবান হই। দেখা যায় একটি ফসল উঠে যায়, আরেকটা থাকে। এক পরিশ্রমে তিনটি ফসল ফলানো যায়। এবার ৫০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ বুনে ছিলাম। তাতে আমার ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। আর ইতিমধ্যেই ১ লাখ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। অন্য কোন ফসলে এমন লাভ হতো না।’
মাজেদুর নামের আরেক চাষি জানান, শ্রমিক, সারসহ তার দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ২লাখ টাকার মতো। আরও কিছু পেঁয়াজ এখনও আছে, সাথে বেগুন, টমেটো তো রয়েছেই।
তিনি বলেন, ‘অক্টোবর-নভেম্বরে মধ্যেই বীজতলা ও সার দিয়ে পেঁয়াজ চাষের জন্য জমি আমরা তৈরি করি। দেড় মাসের মধ্যেই ফলন উঠে পড়ে। তারপর দুই মাস বেগুন বিক্রি করতে পারি। আর তারপর বেগুন গাছ তুলে ফেলে চিচিঙ্গা শুরু হবে।’
সুজন নামের একই এলাকার আরেক কৃষক বলেন, ‘প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৫০ মনের মতো পেঁয়াজ হয়। ১ মন বুনলে ১০ মন হয়। আমরা পাতা পেঁয়াজ চাষ করি। বর্তমানে পেঁয়াজের যে বাজার আছে, সে অনুযায়ী আমরা পাতা পেঁয়াজে দাম পাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এই পেঁয়াজ পাতা সহ বিক্রি করে ফেলি। গোড়া পেঁয়াজ বানানো যাবে কিনা সেই বিষয়ে আমরা এখনও জানি না।’
জেলা কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘টাঙ্গাইল জেলার ৫টি উপজেলা চর বেষ্টিত। গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী, টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর এলাকা যমুনা নদী সংলগ্ন। যমুনা থেকে যে নদীগুলো উঠেছে, যেমন- ধলেশ্বরী, লৌহজং এই নদীগুলোর অববাহিকায় প্রতিবছরই পলিমাটি পরে। আর তাই এই এলাকার চাষিরা মিশ্র ফসল বেশি চাষ করে। সেই মিশ্র ফসলের অংশ হিসেবেই তারা বেগুন, চিচিঙ্গা, মরিচ, টমেটো, কলা ইত্যাদি বিভিন্ন ফসলের সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ করে। ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময় তারা মরিচ বুনে, সেই মরিচের সাথী ফসল হিসেবে পেঁয়াজ বুনে। তার পাশাপাশি ধনেপাতা, বেগুন, সজ ইত্যাদি বিভিন্ন ফসল একই জমিতে বুনে থাকে। ’
তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকায় যে পেঁয়াজটা চাষ করা হয়, সেটি সাধারণত সবজি হিসেবে চাষ করা হয়। গত দেড় মাস ধরে বাজারে যে পেঁয়াজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে, তাতে গোড়ায় পেঁয়াজ অল্প পরিমানে আছে, সাথে সবজি হিসেবে পাতা রয়েছে। টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের প্রায় ৬৯০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও, প্রায় ৫৩০ হেক্টর জমিতে এই সবজি পেঁয়াজের আবাদ করা হয়েছে।’
টাঙ্গাইল/ শাহরিয়ার সিফাত/টিপু
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন