ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

উপকূলে চীনা বাদাম চাষ বিপ্লব ঘটাতে পারে

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উপকূলে চীনা বাদাম চাষ বিপ্লব ঘটাতে পারে

সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার উপকূলীয় এলাকায় চীনা বাদাম চাষে কৃষকদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় খুলনার সর্বদক্ষিণের উপজেলা কয়রায় গেলে চোখে পড়ে চীনা বাদামের চাষাবাদ। ফলনও ভালো হওয়ায় কৃষকরা ভালো মুনাফার আশা করছেন।

মুখরোচক খাবার হিসেবে বাদামের জুড়ি নেই। বন্ধুদের আড্ডা কিংবা অলস বিকেল সবসময় ভালো সঙ্গ দেয় বাদাম। বাদাম খেতে খেতে সময় পার করে দেওয়া যায় অনায়াসেই। চীনা বাদামের সঙ্গে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এ কারণেই এ বাদামের চাহিদা রয়েছে সব সময়।

বাজারে চাহিদা ভালো এবং কম খরচে লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ঢাকা-১ জাতের চীনা বাদাম আবাদ করেছেন কয়রার কৃষক দম্পতি কৃষ্ণদাস সরদার এবং মিন্টু ঢালী। নতুন পদ্ধতি এবং প্রথমবারের মতো বাদাম চাষাবাদে সাফল্য পেতে যাচ্ছেন তারা।

কয়রা সদর উপজেলার ৪ নম্বর ইউনিয়নের কৃষক কৃষ্ণদাস সরদার বলেন, এ প্রথম আমি ৫০ শতক জমিতে চীনা বাদাম চাষাবাদ করেছি। এ জমিতে আগে আলু এবং মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদ করতাম। প্রথম দিকে মন খারাপ ছিল। এখন ফলন দেখে মন ভরে গেছে, আশা সঞ্চার হয়েছে। অনেক মানুষ আসে বাদাম গাছ দেখতে। তখন আরও ভালো লাগে। এ মাসের শেষ দিকে বাদাম বিক্রির উপযোগী হবে। কেজি প্রতি ৮০/৮৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, ‘আমার দেখাদেখি এ এলাকার অনেকেই আগামীতে বাদাম চাষাবাদ করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। লোনা পানিতে ডুবে থাকা এ এলাকায় চীনা বাদাম হবে ভাবতেই পারিনি। আমি এবং আমার স্ত্রী তৃপ্তি রানী সরদার মিলে এ কাজ করি। এখন আমরা বলতে পারি চীনা বাদাম চাষে সফল হতে যাচ্ছি।’

কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজান মাহমুদ জানান, অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদাম চাষাবাদে খরচ কম। বাজারে চাহিদাও ভালো। উপজেলার দু’জন কৃষককে প্রণোদনার মাধ্যমে চীনা বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। ফলন দেখে এখন তারা অনেক খুশি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।

খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, বাদাম চাষে মনোনিবেশ করতে কৃষি অফিস যথাযথভাবে কাজ করছে। ঢাকা-১ জাতের বাদাম অনেকটা লবণ সহিষ্ণু। বাদাম চাষাবাদ অনেক লাভজনক হওয়ায় এখন অনেক কৃষকই বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছে। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে উপকূলে এ বাদাম চাষ বিপ্লব ঘটাতে পারে।

কৃষি বিভাগের সূত্র মতে, বাদাম একটা স্বল্পমেয়াদি অর্থকারি ফসল। এটি উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল বীজ। বাদামের বীজে ৪৮ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ তেল এবং ২২ থেকে ২৯ শতাংশ আমিষ রয়েছে। কাঁচা ও ভাজা উভয় অবস্থাতেই এটি খাওয়া যায়। এছাড়া চানাচুর, কেক, বিস্কুট, তরকারি, ভর্তা, তেল তৈরিতে বাদাম ব্যবহার করা যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চীনাবাদামে রয়েছে নানা রকমের অবদান। বাদামের প্রোটিনে দেহ গঠন এবং মাংস তৈরিতে সাহায্য করে থাকে। বাদামের ফ্যাট রক্তের কোলোস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়া উচ্চমাত্রার নিয়াসিন দেহকোষ সুরক্ষা, বার্ধক্যজনিত রোগ প্রতিরোধ, মস্তিস্ক সুস্থ্য ও রক্ত চলাচলে সাহায়তা করে। কোলন ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার হার্ডের রোগ প্রতিরোধ করে। এর প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়ামে হাড় গঠনেও সাহায্য করে।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়