ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অন্তিম মুহূর্তের ললাট লিখন বদলালো না বাংলাদেশের

ক্রীড়া প্রতিবেদক, কলকাতা থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অন্তিম মুহূর্তের ললাট লিখন বদলালো না বাংলাদেশের

আবারো অন্তিম মুহূর্তের গোলে পয়েন্ট হারালো বাংলাদেশ। আবারো অন্তিম মুহূর্তে গোল হজমের আফসোসে পুড়ল বাংলাদেশ। আবারো সেই ভারতের সঙ্গে ড্র। একবার নয়, একাধিকবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। অথচ ইতিহাস গড়ার কী দারুণ সুযোগই না পেয়েছিল বাংলাদেশ। ৩৪ বছর পর সল্টলেকে খেলতে নেমে ১৬ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়ের সুবর্ণ সুযোগ ছিল। কিন্তু ওই যে! অন্তিম মুহূর্তের ললাট লিখন। যা আজও বদলাতে পারল না লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। পারলনা বাংলাদেশকে খাটো করার প্রচেষ্টাকারীদের মুখে ঝামা ঘষে দিতে। এমন কথা কেন? পেছনের কারণ কী? পেছনের দ্রোহের গল্পটা রচিত হয়েছিল সোমবার কলকাতার নিউটাউনের নভোটেল হোটেলে ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে।

সুনীল ছেত্রী আপনি কী বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করবেন? কোচ আন্ডারডগ বাংলাদেশের বিপক্ষে ব্যবধানটা কী ৬-০ হবে? ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ র‌্যাঙ্কিংয়ে ৮৩ ধাপ পিছিয়ে! ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সাংবাদিকরা অধিনায়ক ও কোচকে এমন প্রশ্নগুলো করেছিলেন। অধিকাংশ প্রশ্নেই তারা বাংলাদেশকে খাটো করার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। সে কারণে শেষ দিকে ভারতের ক্রোয়াট কোচ ইগোর স্টিমাক বাংলাদেশকে খাটো করে না দেখতে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

তার অনুরোধে কী থামে সাংবাদিকদের কলম? তাইতো পশ্চিমবঙ্গের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বাহারি শিরোনাম। ‘ক্রিকেটের বাংলাদেশ, ফুটবলের নয়’। বাংলাদেশকে চিড়ে-ফুড়ে খেলে বড় ব্যবধানের জয় প্রত্যাশা করছিল সবাই। সেটার সাক্ষী হতে ৬৫ হাজার দর্শক মাঠে হাজির হয়েছিল। থান্ডার ক্লাপ, নামে নামে স্লোগান, ভারত মাতা কী জয়, ইন্ডিয়া-ইন্ডিয়া, হর্সধ্বনি, শিষ, ঢোল-ঢাকের ছন্দে ছন্দে স্লোগান, উচ্ছ্বাস-উল্লাস, কী করেনি দর্শকরা ভারতকে উজ্জীবিত করতে?

অথচ তাদের সামনে ম্যাচের ২২ সেকেন্ডেই মোহাম্মদ ইব্রাহিম আক্রমণে ওঠেন। তাকে ডি বক্সের মধ্যে ফেলে দেয় ভারতের আনাস। পরিস্কার পেনাল্টি ছিল সেটি। কিন্তু রেফারি কর্ণপাত করেননি। চতুর্থ মিনেটে ভারতও আক্রমণে ওঠে। এ সময় সুনীল ছেত্রীর নেওয়া শট সরাসরি আশরাফুল ইসলাম রানার হাতে জমে যায়। ইব্রাহিম আরো একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। কাজে লাগাতে পারেননি। ৩১ মিনিটে ভারত প্রথমবার ক্লিয়ার চান্স পায়। কিন্তু গোল করতে ব্যর্থ হয়। ৩৭ মিনিটে সমন্বিতভাবে দারুণ একটি আক্রমণ শানায় বাংলাদেশ। এ সময় জামাল ভুঁইয়া থেকে সোহেল রানা বল পান। সোহেল দেন সাদ উদ্দিনকে। সাদ থেকে বল পান জীবন। কিন্তু মিস করেন তিনি। ৩৯ মিনিটে তারকা সুনীল আরো একটি সুযোগ পান। এ সময় মানভীর সিংয়ের কাট, ডি বক্সের মধ্যে হেড নেন ছেত্রী। আশরাফুল রানা ধরে ফেলেন।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকদের উল্লাসধ্বনি বাড়তে থাকে। ভারতের খেলোয়াড়দের চেয়ে গোল পেতে তারা বেশি মরিয়া হয়ে ওঠে। খেলোয়াড়দের পায়ে বল গেলেই মেঘনাদের মতো গর্জন তুলে গোটা স্টেডিয়াম প্রকম্পিত করে তোলে। ৪২ মিনিটে ৬৩ হাজার দর্শকের উল্লাসধ্বনিতে মুখরিত স্টেডিয়ামকে শশ্মানে পরিণত করেন সাদ উদ্দিন। এ সময় বামদিকে ফ্রি কিক পায় বাংলাদেশ। কিক নেন অধিনায়ক জামাল। তার নেওয়া কিকের ফ্লাইট মিস করেন ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং। লাফিয়ে উঠে ফিস্ট করার চেষ্টা করেন। কিন্তু বলের নাগাল পাননি। বল সরাসরি সাদ উদ্দিনের কাছে চলে যায়। পড়তে পড়তে হেড নেন। বল জালে জড়ায়। র‌্যাঙ্কিং, দর্শক, ফেভারিট ভারত পিছিয়ে পড়ে।

বিরতির পর ভারতের কোচ লেফট ও রাইট উইংয়ের শক্তি বাড়ান। আর বাংলাদেশ যায় রক্ষণাত্মক পন্থায়। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে মুহুর্মূহ আক্রমণ শানতে থাকে ভারত। একের পর এক অন টার্গেটে শট নিতে থাকে। অল্পের জন্য জাল মিস হতে থাকে। অবশ্য বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুলও দুর্দান্ত সব সেইভ করতে থাকেন। 

তার মধ্যে ম্যাচের ৫১ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েছিলেন জীবন। এ সময় পাল্টা আক্রমণে বামদিক দিয়ে ইব্রাহিম বল নিয়ে উঠে পড়েন। ডি বক্সের সামনে থাকা জীবনকে বাড়িয়ে দেন। জীবন ঢুকে পড়েন। সামনে ভারতের গোলরক্ষক। তাকে একা পেয়েও গোল করতে পারেনননি । ৫৫ মিনিটেও ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। এ সময় মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ডান দিক থেকে নেওয়া শট ভারতের গোলরক্ষক মিস করেন। কিন্তু বল জালে প্রবেশ না করে বার কাঁপিয়ে ফিরে আসে। এক সুতা নিচ দিয়ে গেলেই বল তার কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে পারত। হয়নি।

৬০ মিনিটের মাথায় সমতা ফেরানোর দারুণ একটি সুযোগ পেয়েছিল ভারত। এ সময় কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা বলে মানভীর সিং হেড নেন। বল জালে জড়াতে যাচ্ছিল। গোললাইনের উপর থেকে সেভ করেন রিয়াদুল হাসান। ৭৩ মিনিটে আরো একবার নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশের। এ সময় জীবন ডি বক্সের মধ্যে বল পেয়ে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে চিপ করেন। বল এক লাফ দিয়ে গোললাইন ছুঁয়ে ফেলতে যাচ্ছিল। এমন সময় লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করেন ভারতের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় আদিল।

আক্রমণের পর আক্রমণ করে ভারতও জালের নাগাল পাচ্ছিল না। সুযোগ মিসের হতাশায় উহ-আহ করতে করতে ম্যাচের ৮৭ মিনিট পার হয়ে যায়। এ সময় সেই বামদিকে ফ্রি কিক পায় ভারত। কিক নেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে নামা ব্রান্ডন ফার্নান্দেজ। তার নেওয়া কিক খুঁজে পায় ডি বক্সের মধ্যে থাকা আদিলকে। বল তার মাথা ছুয়ে মুহূর্তে জালে আশ্রয় নেয়। আশরাফুল ইসলাম রানার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না। শেষ পর্যন্ত আদিলের গোলে ১-১ এর সমতা নিয়ে মাঠ ছাড়ে ভারত। হাফ ছেড়ে বাঁচে ভারত ও তাদের সমর্থকরা। যদিও সবকিছুতে পিছিয়ে থেকে, ভারতের বিপক্ষে ৮৭ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকে, শেষ পর্যন্ত ড্র করে নৈতিক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এর চেয়ে ভালো ফল কী কেউ প্রত্যাশা করেছিল আন্ডারডগ বাংলাদেশের কাছ থেকে?

 

কলকাতা/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়