প্রবাস

কফিনের শহর!

পশ্চিম ইউরোপের উন্নত দেশ ইতালি। প্রতিদিন প্রায় ছয় কোটিরও বেশি নাগরিক, দুই লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিসহ লাখো ভ্রমণপিপাসুদের কলকাকলিতে মুখরিত হয় বিভিন্ন শহর। 

বিভিন্ন মানুষের ভিড়ে চিরচেনা এসব নগরী হঠাৎ করেই যেন অচেনা এক শহর।  প্রতিদিন সূর্য উঠলেও শহরে ব্যস্ততা বাড়ে না।  তড়িঘড়ি করে কাউকে আর গন্তব্যে ছুটতে দেখা যায় না।

শহরের ব্যস্ততম রাস্তা ফাঁকা।  শপিংমল, হাটবাজার পর্যটন কেন্দ্রগুলো জনশূন্য।  কোথাও কেউ নেই।  কী রাত কী দিন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর  ইতালি এখন জনমানবহীন, জনশূন্য নগরী।  এক অদ্ভুত আতঙ্কে পুরোদেশ।

মহামারি করোনার আগ্রাসনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশটি।  প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা।  করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে গত  শুক্রবার এক বাংলাদেশিসহ আরও ৬২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।  এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে  চার হাজারও বেশি।

ইতালির হাসপাতালগুলোতে প্রতি মুহূর্তে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।  চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।  দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভবিষ্যতে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে।  

দেশটির হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নার্সের ভাষ্যমতে, ‘আমরা দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপের মধ্যে আছি।  হাসপাতালে কতজন মারা গেছেন সে হিসাবও আমার জানা নেই।  পুরো দেশে ভাইরাস কী পরিমাণে ছড়িয়েছে—তা চিন্তাও করা যাচ্ছে না।’

মিলানের কবরস্থানগুলোতে দাফনের জায়গা না থাকায় পাশের শহরে বারগেমোতে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।  এদিকে স্থানীয় কবরস্থানের সংশ্লিষ্টরা বিপুলসংখ্যক মরদেহ সৎকারের কাজ করতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক চাপের মুখে পড়ছেন।

ইতালির মিলান শহরের কবরস্থানগুলোতে দাফনের জায়গা সংকুলান হচ্ছে না।  এর মধ্যেই দেখা দিয়েছে মরদেহ দাফনকারী কর্মীর সংকট।  প্রতিনিয়ত মৃতদেহ আসতে থাকায় সৎকার কাজে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মীরা। করোনাভাইরাস ভয়াবহ ছোঁয়াচে হওয়ায় মৃতদের দাফনে সহায়তার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না নতুন কর্মী।

যে শহর মানুষের পদচারণায় দিনরাত মুখররিত হয়ে থাকতো আজ সেই শহর নীরব নিস্তব্ধ।  চারদিকে শুধু  অ্যাম্বুলেন্স আর সাইরেনের শব্দ।  প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের মিছিল।  মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে এ যেন এক মৃত্যুপুরী।

কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতার মতোই এখন ইতালির বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে।  রাস্তায় সারি সারি কফিনের গাড়ি।  এ যেন এক কফিনের শহর।

পড়ুন:

ইতালি/স্বপন/সাইফ