প্রবাস

নীনা-ডোনার ভরাডুবি, চন্দন-আবুলের জয়

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ড. নীনা আহমেদ পেনসিলভানিয়ার অডিটর জেনারেল পদে পরাজিত হয়েছেন। নীনা আহমেদ ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে সেখানে লড়েছেন। ড. নীনা আহমেদের এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত মোট ভোট পাঁচ লাখ ৭০ হাজার। নীনা আহমেদ তার প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান টি ডিফুর থেকে প্রায় এক লাখ ৯৫ হাজার ভোটে পিছিয়ে আছেন। তার প্রাপ্ত ভোট সাত লাখ ৬৪ হাজার। তবে ফিলাডেলফিয়ার মেইল ইন ভোট এখনো যোগ হয়নি।

গত ২ জুনে হওয়া প্রাইমারিতে এবার তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থেকে ৮০ হাজার ১৩৭ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন চার লাখ ৭৭ হাজার ৫২৬ ভোট। সেই অর্থে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংখ্যা সেখানে অত নয়, ফলে তিনি সব দেশের মানুষের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছিলেন বলে মনে করেন তার জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডা. ইবরুল চৌধুরী।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিনি ডোনা ইমাম টেক্সাসের অস্টিন থেকে ইউএস কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের নির্বাচনে ৫৬ শতাংশ (২০ হাজার ৮৮৪) ভোট পেয়ে টেক্সাসের কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্ট-৩১ এর চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। অস্টিনের উইলিয়ামসন কাউন্টি এবং সেনা ছাউনি অধ্যুষিত ফোর্ট হুড নিয়ে গঠিত উক্ত নির্বাচনী এলাকার ৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষের ৫৯.১৯ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ। এশিয়ানের সংখ্যা মাত্র ৫.২ শতাংশ। হিসপ্যানিক হচ্ছে ২৩.৯৩ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গের সংখ্যা ১১.২৪ শতাংশ।

এই আসনে কখনোই ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হতে পারেনি। এবারই প্রথম বাঙালির রক্ত প্রবাহিত ডোনা রিপাবলিকানদের একটি ধাক্কা দিতে চেয়েছিলেন। ডোনা ইমাম প্রাথমিক পর্ব অতিক্রম করেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে। টেক্সাসে জন্মগ্রহণকারী ও ইলেক্ট্রিক্যাল এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী ডোনা নিজেই একটি ফার্ম দিয়েছেন। সেখানে কাজের পাশাপাশি মার্কিন রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

এবারের নির্বাচনে ষ্টেট সিনেটর পদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী হয়েছেন। তিনি ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের নরক্রস, লিলবার্ন ও লরেন্সভিল নিয়ে গঠিত ডিস্ট্রিক্ট-৫ আসন থেকে নির্বাচিত হন। এর আগে একই আসন থেকে তিনি প্রথমবারের মতো সিনেটর নির্বাচিত হন। এবারের নির্বাচনে শেখ রহমানের বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের কোনো প্রার্থী না থাকলেও নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরপরই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে জর্জিয়া নির্বাচন বোর্ড।

১৯৫৫ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জে বাজিতপুর থানার সরারচরে পৈতৃক বাড়িতে শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন জন্মগ্রহণ করেন। মরহুম নজিবুর রহমান এবং সৈয়দা হাজেরা খাতুন দম্পতির চতুর্থ সন্তান তিনি। চন্দনের এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। চন্দনের ছোট ভাই কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল বলেন, বড় ভাইয়ের বিজয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনসহ এলাকার সবাই আনন্দিত। 

তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান চন্দন। ছাত্রজীবনেই তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।

নির্বাচন পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়া তিনি বলেন, সব প্রবাসীদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞ। সবার আশীর্বাদে বিজয়ী হওয়ার মধ্যে অন্যরকমের একটি আনন্দ রয়েছে-যা আমাকে আরও সামনে এগোতে সহায়তা করবে। শেখ রহমান বলেন, স্টেট পার্লামেন্টে থাকলেও জাতীয়ভিত্তিক যে কানেকশন রয়েছে ইউএস সিনেট এবং ক্যাপিটল হিলে, তাকে অবশ্যই বাংলাদেশি আমেরিকান ও বাংলাদেশের সামগ্রিক কল্যাণে কাজে লাগানোর প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।

উল্লেখ্য, তার নির্বাচনী এলাকার ভোটারের সংখ্যা ১৪,৯০৪। এর মধ্যে শতাধিক বাংলাদেশি আমেরিকান রয়েছেন। অর্থাৎ ভিন্ন ভাষা, বর্ণ আর ধর্মের মানুষের প্রিয় একজনে পরিণত হওয়ায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পেরেছেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশয়ার অঙ্গরাজ্যে চতুর্থবারের মতো হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ নির্বাচিত হলেন বাংলাদেশি রিপাবলিকান আবুল খান। ৩ নভেম্বর রাতে ভোট গণনায় বিজয় লাভের পর তিনি এক ফেসবুক পোষ্টে স্থানীয় দীর্ঘকালের পুরাতন কর্মীসহ সীব্রুক ও হ্যামটন ফলসের বাসিন্দাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সীব্রুক ও হ্যামটন ফলসের যেসব নাগরিক তার নির্বাচনী প্রচারের জন্য তৈরি ক্যাম্পেইন সাইন ব্যবহার করতে সুযোগ দিয়েছেন তাদের কাছে তিনি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ বলে উল্লেখ করেছেন।

পিরোজপুরের সন্তান আবুল খান বলেন, তিনি এমন একটি এলাকায় বসবাস করছেন যেখানে কোন বাঙালি নেই। ভারতীয় বা দক্ষিণ এশিয়ান লোকদেরও দেখা মেলে না। শ্বেতাঙ্গদের  সংখ্যাই বেশি। বিবর্ণ হলেও তার অপর ভালোবাসায় রয়েছে সবার। এ কারণে তিনি বারবার ওই এলাকা থেকে নির্বাচিত হন। ২০১২ সালে তিনি প্রথম বিজয় লাভ করেন উক্ত এলাকা থেকে।  ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হননি। তবে ২০১৬ এবং ২০১৮ সালেও নির্বাচন করে আবার নির্বাচিত হন। ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে  নিউ হ্যাম্পশয়ার অঙ্গরাজ্যে চতুর্থবারের মতো হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ নির্বাচিত হন।

উল্লেখ্য, এবার নির্বাচনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত পাঁচজন প্রার্থী বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিভিন্ন পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা হলেন- টেক্সাসের অস্টিন থেকে ইউএস কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ডোনা ইমাম, জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের স্টেট সিনেটর শেখ রহমান, নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি. খান ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের অডিটর জেনারেল পদপ্রার্থী ড. নীনা আহমেদ। 

এছাড়া ড. রাব্বি আলম মিশিগান স্টেট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ পদে নির্বাচনে অংশ নেন। তাদের মধ্যে দু'জন বিজয়ী হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এরা হলেন জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ষ্টেট সিনেটর পদে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শেখ মোজাহিদুর রহমান চন্দন ও নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ আবুল বি. খান।