প্রবাস

প্রবীর বিকাশ সরকারের জাপানি ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশ

একটি অসাধারণ কাজ সম্পাদন করেছেন জাপান প্রবাসী বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক প্রবীর বিকাশ সরকার। তিনি প্রায় চার দশকের কাছাকাছি সময় ধরে জাপানে বসবাস করছেন। জাপানের ইতিহাস, সংস্কৃতি, জাপান-বাংলা সম্পর্ক, জাপান-রবীন্দ্রনাথ সম্পর্ক এবং এশিয়ার সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর গবেষণামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ দুই বাংলার পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে লিখে আসছেন দীর্ঘ বছর ধরে। যা বৃহত্তর বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকার কাছে অজানাই বলা চলে। আর এসব বিষয়কে ভিত্তি করেই তিনি এশিয়ার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পটভূমিতে জাপানের ঐতিহাসিক ভূমিকার ওপর নতুন করে আলো ফেলেছেন জাপানি ভাষায় একটি গ্রন্থ রচনা করে যার নাম, ‘নিহোন গা আজিয়া অ মেজামে সাসেতা’ অর্থাৎ ‘জাপান এশিয়াকে জাগ্রত করেছে’, যা পাঠ করে বর্তমান জাপানি প্রজন্ম বিংশ শতকজুড়ে জাপানের আত্মিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত হতে পারবেন। 

বিগত পাঁচ দশক ধরেই জাপানে দুই বাংলার আড়াই হাজারের মতো বাঙালি বসবাস করছেন। এদের মধ্যে জাপানি ভাষায় গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন এমন লেখকের সংখ্যা একেবারেই আঙুলে গোনা। তাদের মধ্যে প্রবীর বিকাশ সরকার অন্যতম। আগামী মাসের মাঝামাঝি তার গ্রন্থটি জাপানে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে লেখকের সঙ্গে মেসেঞ্জারে কথা হয়। কথোপকথনে ছিলেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

রাইজিংবিডি: প্রথমেই আপনাকে জানাচ্ছি অভিনন্দন এমন একটি অসাধ্য কাজ সাধন করার জন্য। দীর্ঘদিন ধরে আপনি জাপান-বাংলা সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন। এই সম্পর্কের ইতিহাসটি সম্পর্কে যদি একটা ধারণা দেন আমাদের। 

প্রবীর বিকাশ সরকার: মধ্যযুগের কথা যদি আমরা বাদ দিই তাহলেও জাপানের সঙ্গে দুই বাংলারই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ১২৫ বছরেরও বেশি আধুনিককালে। স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৯৩ সালে কিছুদিনের জন্য জাপানে অবস্থান করেছিলেন আমেরিকা যাওয়ার পথে। ১৮৯৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং হয়ে নেপালে যান জাপানি বৌদ্ধভিক্ষু কাওয়াগুচি একাই, তারপর নেপাল থেকে তিব্বত ভ্রমণ করেন, তাকে সহযোগিতা করেছিলেন চট্টগ্রামের বিশিষ্ট তিব্বতবিশেষজ্ঞ এবং সংস্কৃতি গবেষক শরৎচন্দ্র দাশ। শরৎচন্দ্র দাশ ১৯১৭ সালে জাপান ভ্রমণ করেছিলেন। 

কাওয়াগুচির ভ্রমণের কয়েক বছর পর ১৯০২ সালে জাপানের মনীষী, দার্শনিক, শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিন কলকাতায় যান এবং প্রায় ১০ মাস অবস্থান করেন। এই সময় ওকাকুরার সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে স্বামী বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী নন্দলাল বসু, ভগিনী নিবেদিতা প্রমুখের। তার সঙ্গে ছিলেন তরুণ বৌদ্ধভিক্ষু হোরি শিতোকু, যিনি রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের প্রথম বিদেশি ছাত্র। 

১৯০৩ সালে ওকাকুরার দুই প্রিয় শিষ্য চিত্রশিল্পী য়োকোয়ামা তাইকান ও হিশিদা শুনসোও প্রায় মাস তিনেক কলকাতায় অবস্থান করেন। তারা চিত্রকলাবিষয়ক ভাববিনিময় করেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু, অসিত হালদার প্রমুখের সঙ্গে। ১৯০৩ সালে জাপানি রসায়নবিদ, সাবান তৈরির প্রযুক্তিবিদ উয়েমোন তাকেদা ঢাকায় যান ভাগ্যের অন্বেষণে। ১৯০৭ সালে ঢাকার খিলগাঁওস্থ এক ব্রাহ্ম পরিবারের জ্যেষ্ঠকন্যা হরিপ্রভা বসু মল্লিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯০৫ সালে প্রসিদ্ধ জুদোও ক্রীড়াবিদ ও প্রশিক্ষক সানো জিননোসুকে এবং চিত্রশিল্পী কাৎসুতা শৌকিন কলকাতা হয়ে শান্তিনিকেতনে যান। 

১৯০৮ সালে প্রসিদ্ধ বৌদ্ধপণ্ডিত ও ভিক্ষু কিমুরা নিক্কি পূর্ববাংলার চট্টগ্রামে যান পালি ভাষা শেখার জন্য। তিনি সেখানে বছর তিনেক অবস্থান করার পর ১৯১১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের আহ্বানে  কলকাতায় যান। এবং রবীন্দ্রনাথসহ অনেক খ্যাতিমান মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সালে জাপানের বিশ্বখ্যাত বৌদ্ধধর্ম ও ভারতীয় দর্শনবিশেষজ্ঞ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ড. তাকাকুসু জুনজিরোও কলকাতায় যান, রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে ও বন্ধুত্ব হয়।  

১৯১২ সালে উপরোক্ত হরিপ্রভা তাকেদা বাঙালি নারী হিসেবে প্রথম জাপান ভ্রমণ করেন স্বামীর সঙ্গে। এই বছর পুনরায় জাপানি মনীষী ওকাকুরা কলকাতায় যান এবং কিছু সশয় অবস্থানকালে বাংলাদেশের পাবনায় জন্ম এবং কলকাতায় স্থায়ী বিশিষ্ট কবি, কথাসাহিত্যিক ও সমাজসেবী বিধবা প্রিয়ম্বদাদেবী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে প্রণয়বন্ধনে আবদ্ধ হন। 

১৯১৫ সালে পালিয়ে এসে জাপানে আশ্রয় গ্রহণ করেন বিপ্লবী রাসবিহারী বসু এবং ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জাপান ভ্রমণ করেন ১৯১৬ সালে।  ১৯১৫ ও ১৯১৬ সালে যথাক্রমে রাসবিহারী বসু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জাপান আগমন পূববর্তী ওকাকুরা তেনশিনের ভারত ভ্রমণের সুদূরপ্রসারী সম্পর্কের গুরুত্ব ও তাৎপর্যকেই নির্দেশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পূর্ব পর্যন্ত আরও একাধিক প্রসিদ্ধ জাপানি কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে যান রবীন্দ্রনাথের আগ্রহে। 

১৯৪৩ সালে জার্মানিতে পলাতক সুভাষচন্দ্র বসুর জাপানে আগমন এশিয়ার ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। যা ভারতের স্বাধীনতাকে তরান্বিত করেছিল এবং জাপানের সামরিক বাহিনি ও আজাদ হিন্দ ফৌজের যৌথ অভিযানের পরিপ্রেক্ষিতেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশের উপনিবেশ ভারতবর্ষ স্বাধীনতা লাভ করে। 

১৯৪৬-৪৮ সাল পর্যন্ত টোকিও মিলিটারি ট্রাইবুন্যালে বাঙালি বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এক ব্যতিক্রম রায় প্রদান করে বিশ্বইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনি অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার একাংশ বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার সলিমপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর কলকাতায় স্থায়ী হন। তিনি জাপানে অসামান্য মর্যাদার সঙ্গে শান্তির দূত হিসেবে জাপানিদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। টোকিও এবং কিয়োতো শহরে রয়েছে তার দুটি সুদৃশ্যমান স্মৃতিফলক। 

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও যুদ্ধোত্তর দেশগঠনে জাপানিদের অগ্রণী ভূমিকা সর্বজনবিদিত। ১৯৭৩ সালে জাপানি প্রধান মন্ত্রী সাতোও এইসুকের আমন্ত্রণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাপান সফরের মধ্য দিয়ে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক স্থাপন করেন। এই হচ্ছে জাপান-বাংলা সম্পর্কের একটি অতিসংক্ষিপ্ত রূপ। কিন্তু এই বিষয়ে গবেষণা যেমন হয়নি, তেমনি ইতিহাসটিও লেখা হয়নি। 

রাইজিংবিডি: এই গবেষণা না হওয়ার কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?  প্রবীর বিকাশ সরকার: একাধিক কারণ বিদ্যমান। যেমন, জাপানি ভাষা পৃথিবীর কঠিনতম একটি ভাষা। আর এই ভাষাতেই রচিত উক্ত সম্পর্কের তথ্য ও দলিলপত্রসমূহের অধিকাংশ। বাঙালিরা জাপানি ভাষা না জানার কারণে ইচ্ছে থাকলেও লিখতে পারেননি বা পারেন না। আর জাপানিরা যারা জানতেন তারা সংখ্যায় কম ছিলেন না, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের পর দুই অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কটি অনেকটাই শীতল হয়ে গিয়েছিল।  জাপানও বিধস্ত, বিপর্যস্ত, দারিদ্র থেকে উঠে দাঁড়ানোর সংগ্রামে উদয়াস্ত ব্যস্ত ছিল। 

ষাট থেকে আশির দশক পর্যন্ত দুই বাংলায় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দ্বিপাক্ষিক ভাববিনিময় সম্পর্ক অনেকটাই স্তিমিত ছিল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ জাপানে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল। এবং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ পুনর্গঠনে জাপানিদের আগ্রহ ছিল আকাশচুম্বী কিন্তু সেটার পতন ঘটে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু-হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে। জাপানিদের আগ্রহ হারিয়ে যায়। সুতরাং এসব কারণে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যেমন বাধাগ্রস্ত হয় তেমনি উভয়পক্ষেরই আগ্রহও আর কখনো জাগেনি। তথাপি কিছু লেখালেখি হয়েছে কিন্তু সেটা বিচ্ছিন্নভাবে। তবে বিগত ১২ বছরে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা এবং বাংলাদেশের অগ্রগতির সুবাদে জাপানিদের আগ্রহ কর্মবর্ধমান। 

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গেও জাপান-বাংলা সম্পর্ককেন্দ্রিক দুটি প্রতিষ্ঠান ‘নিপ্পন ভবন’ এবং ‘ভারত-জাপান সংস্কৃতি কেন্দ্র: রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় দুই অঞ্চলের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে নতুন গতি এসেছে। বৃহত্তর অর্থে, জাপান-ভারত-বাংলাদেশ ত্রিদেশের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কও নতুন মোড় নিতে শুরু করেছে চীনের উত্থানের কারণে ফলে শতাধিক বছরের সম্পর্কটাকে বোঝার সময় এসেছে। অর্থাৎ ইতিহাসকে জানা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে। না জানলে বিভিন্ন পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা গ্রহণে ভুল বা অদূরদর্শিতা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে যা সমগ্র এশিয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে। এই বিষয়টি ভেবেই গ্রন্থটি লেখার তাগিদ অনুভব করছিলাম কয়েক বছর ধরে। 

রাইজিংবিডি: আর কী কারণ ছিলো?

প্রবীর বিকাশ সরকার: আরও একটি কারণ ছিল, জাপানিরা জানেন না যে, বিপ্লবী রাসবিহারী বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে জাতিতে বাঙালি যদিওবা তৎকালীন ভারতবর্ষে তাদের জন্ম। এই গ্রন্থে জাপানিরা জানতে পারবেন যে, উক্ত বাঙালি ব্যক্তিবর্গ এবং বাংলার সঙ্গে জাপানিদের কী গভীর ভাবনিনিময় সম্পর্ক বিদ্যমান যা নিয়ে গবেষণা যেমন হয়নি, তেমনি কোথাও পড়ানোও হয় না। 

রাইজিংবিডি: এই গ্রন্থের গুরুত্ব বা তাৎপর্যটা কোথায়? 

প্রবীর বিকাশ সরকার: নানা কারণে গ্রন্থটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য বলে আমি মনে করি। উক্ত গ্রন্থে আমি যথাসম্ভব ভারত, জাপান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার শতবর্ষপ্রাচীন নানাবিধ সম্পর্কের ইতিহাস নাতিদীর্ঘ পরিসরে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। প্রভাবশালী জাপানি নাগরিকরাই শুধু নয়, সাধারণ জাপানিরাও এই গ্রন্থপাঠের মধ্য দিয়ে বাঙালির শৌর্যবীর্ষ, সাহস, বাংলার ইতিহাস, সংস্কৃতি, চিন্তা ও আদর্শকে নতুন করে বুঝতে সক্ষম হন বলে আমার একান্ত বিশ্বাস। 

এশিয়ায় যেভাবে বাঙালি জাতির উত্থান ঘটেছে নানাভাবে তার নজির অন্যজাতির মধ্যে বিংশ শতকে দেখা যায়নি। বিশেষ করে, ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ভেতরে বাঙালির স্বাধীনতার ইচ্ছাশক্তি ও মুক্তির প্রত্যাশায় আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল জাপান। শুধু পরাধীন ভারতেই নয়, বিদেশি সাম্রাজ্যবাদের অধীন এশিয়ার অধিকাংশ দেশেই ১৯০৪-৫ সালে সংঘটিত ‘রুশ-জাপান মহাযুদ্ধে’ জাপানের বিপুল জয়লাভ ব্যাপক এবং গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। অর্থাৎ পরাধীন এশিয়াকে জাগ্রত করেছিল জাপান। সেই ইতিহাসের কিছুদিক আমি তুলে ধরেছি। যা দুঃখজনকভাবে আজ এশিয়াবাসী বিস্মৃত হয়ে গেছে। 

ভারতীয় স্বাধীনতায় তৎকালীন জেনারেল তোজো হিদেকির জাপান সরকারের যে ভূমিকা এবং অবদান তার মূল্যায়ন আজও হয়নি। এটা আমাকে বহু বছর ধরেই ব্যথিত করে এসেছে। আরও বেদনাহত করেছে, যেসকল প্রভাবশালী জাপানি নাগরিক এবং ৫০ হাজার সেনা যথাক্রমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভারতীয় তথা বাঙালি বিপ্লবীদেরকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদেরও কোনো মূল্যায়ন হয়নি। কোনো ভারতীয় বা বাঙালি ধন্যবাদও প্রদান করেননি, ঋণ পরিশোধ দূরের কথা! অন্তত একজন বাঙালি হিসেবে সেসব মহান জাপানিদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চেষ্টা করেছি এই গ্রন্থ রচনার মধ্য দিয়ে। 

আরেকটি প্রধান কারণ হচ্ছে, বর্তমান বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়নে এবং ভবিষ্যৎ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে জাপানের যে বিপুল ভূমিকা বিদ্যমান তার পরিপ্রেক্ষিতে এরকম একটি গ্রন্থের প্রত্যাশা ও চাহিদা আমি নিজেই অনেকদিন ধরে অনুভব করে আসছিলাম, যা বিগত কয়েক বছরের বিভিন্ন প্রচেষ্টার বদৌলতে গ্রন্থাকারে রূপ দেবার সুযোগ আমার স্ত্রী (জাপানি) এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সহযোগিতায়। অনেক অজানা তথ্য উপাত্ত এই গ্রন্থে সন্নিবেশিত হয়েছে যা এই প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জাপানিরা অবগত হতে পারবেন।  যা জানা জরুরি এই সময়ে। 

গ্রন্থটিতে ভিন্ন একটি মাত্রা সংযোজিত হয়েছে। জাপানের আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিশেষজ্ঞ, লেখক, গবেষক ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা অধ্যাপক ড. পেমা গিয়ালপোর সঙ্গে আমার একটি দীর্ঘ মতবিনিময় কথপোকথন এশিয়ার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিষয়ে সংযুক্ত হয়েছে।  

রাইজিংবিডি: গ্রন্থটি কোন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে?

প্রবীর বিকাশ সরকার: জাপানের স্বনামধন্য প্রকাশনা সংস্থা হার্ট শুপ্পান কোম্পানি। মূল্য: ১৪০০ ইয়েন (ট্যাক্স বাদ দিয়ে)। প্রচ্ছদ করেছেন উক্ত কোম্পানির স্টাফ আর্টিস্ট। পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২৩২। 

রাইজিংবিডি: গ্রন্থটির বাংলা অনুবাদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে কী? 

প্রবীর বিকাশ সরকার: অবশ্যই বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অনুবাদের পরিকল্পনা রয়েছে, তবে কিছুটা সময় লাগবে।