লেবাননে নতুন করে লকডাউন ঘোষণার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ জনগণ। শনিবার (২৩ জানুয়ারি) দক্ষিণ লেবাননের সাইদায় তারা প্রধান সড়ক বন্ধ করে এই বিক্ষোভ করে।
দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু ঘটছে। এই পরিস্থিতেতে উচ্চতর প্রতিরক্ষা কাউন্সিল ২৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই সপ্তাহের নতুন কঠোর লকডাউন দিতে বাধ্য হয়।
বিক্ষোভকারীদের একজন বলেন, ‘সরকার জোরপূর্বক লকডাউন দিচ্ছে কিন্তু জনগণের সাহায্য সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসছে না। এভাবে লকডাউন জোরপূর্বক জেল ছাড়া আর কিছু নয়, তবে জেলখানাতেও তো খাবার মিলে।’
অপর এক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘এখন এমন সময় যখন দেশটি অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে, মানুষের ঘরে খাবার নেই। একদিন কাজ না করলে এখন পেট চলে না, সেখানে লম্বা লকডাউন দিয়ে সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম হয়েছে। তাহলে কেন এই লকডাউন?’
বিক্ষোভকারীরা সাইদার এলিয়া মোড়ে বিপ্লব চত্বর থেকে মিছিল শুরু করে। কারফিউ এবং লকডাউনের প্রতিবাদে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীরা সাংবাদিকদের জানান, তারা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে। কারণ মানুষ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ছে এবং দেশে দুর্নীতির কারণে ডলারের দাম বেড়ে আকাশচুম্বী হয়ে গেছে।
তাদের ভাষায়, ‘রাষ্ট্র যদি অসহায় এবং যারা দৈনন্দিন মজুরিতে কাজ করে তাদের জন্য সাহায্য প্রদান করতে না পারে, তাহলে তাদের বেঁচে থাকার জন্য কাজ করার অনুমতি দেওয়া উচিত। এভাবে লকডাউন মানুষকে মেরে ফেলবে।’
অন্যদিকে একই কারণে বিক্ষোভে নামে উত্তরাঞ্চলের জনগণও, তারা ত্রিপোলি-মিনিহ মহাসড়ক এবং পালমা মহাসড়ক অবরোধ করে। আক্কার অঞ্চলের জনগণও ত্রিপোলিতে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বিক্ষোভে যোগ দেয়।
একটি বৃহৎ দল ত্রিপোলির অলি গলি দিয়ে মিছিল করে সরকার বিরোধী স্লোগান দেয় এবং লেবাননের সকল জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানায়। তারা বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত, প্রত্যেক ব্যক্তি কষ্ট ভোগ করছে এবং তারা রাষ্ট্রের দ্বারা নিপীড়িত, সকল অধীকার থেকে বঞ্চিত।’
তারা সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে সাদ হারিরির মুসতাকবাল দলের আফিসের দিকে এগিয়ে যান। অন্যান্য বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে আল-কোবেহ এবং আল-বেদ্দাউয়ির রাস্তা অবরোধ করে রাখেন।
এছাড়াও বৈরুতের কিছু এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও বিক্ষোভকারীরা লকডাউন চলাকালীন সরকারের কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
দেশটিতে চরম অর্থনৈতিক সংকটে মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা কোনো রকম দৈনন্দিন কাজ করে দিন যাপন করছেন। কিন্তু দীর্ঘ লকডাউনে কাজে নামতে না পেরে তাদের খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। তাদের মূল অভিযোগ সরকার শুধু লকডাউন দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অসহায় দরিদ্র জনগণের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে না।
অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন নেতারা তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা ধরে রাখতে ব্যস্ত। বিশেষ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী মনোনীত'র দ্বন্দ্বে সরকার গঠনের প্রক্রিয়া আরো কঠিন করে দিচ্ছে। তাই সরকার গঠনের ব্যর্থ হয়ে তারা একের পর এক লডকাউন দিয়ে মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখতে চাইছে। কিন্তু জনগণ কী খাবে, কীভাবে বাঁচবে সেই চিন্তা তারা করছে না বলে মনে করেন বিক্ষোভকরীরা।