প্রবাস

স্পেনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদুল ফিতর উদযাপন

স্পেনে ভিন্ন পরিবেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অন্য বছরগুলোতে বিশেষ আমেজ থাকলেও এবার প্রস্তুতি ছাড়াই সাদামাটাভাবে ঈদ কাটছে রেমিট্যান্স–যোদ্ধাদের। মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও নিরাপদ থাকতে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন দেশটির ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

স্পেনে ধীরে ধীরে করোনার প্রকোপ কমছে। দীর্ঘ ছয় মাস পর রোববার (৯ মে) এ বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া হয়। স্বাভাবিক জীবন-জীবিকা থাকলেও খোলা মাঠে জনসমাগমের অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই ‘আল্লাহ আকবার’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়নি খোলা মাঠ। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেছেন সেখানে বসবাসরত মুসলিমরা।

স্পেনের সবচেয়ে বড় মসজিদ ভেনতাস ইসলামিক সেন্টার মসজিদে স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ঈদের বৃহত্তম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ, দূতাবাসের দূতালয় প্রধান আব্দুর রউফ মন্ডল, কমার্শিয়াল কাউন্সিলর রেদোয়ান আহমদ এ জামাতে নামাজ আদায় করেন।

স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মুহতাশিমুল ইসলাম, বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলম মজুমদার, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী এনায়েতুল করিম তারেক, ভিলিয়ান্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহীসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ।

এছাড়া হাজারো মুসল্লি কয়েকটি জামাতে বৃস্পতিবার (১৩ মে)  পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। সরকারের নির্দেশনা মেনে জনসমাগম এড়াতে বাংলাদেশি পরিচালনাধীন বায়তুল মোকাররম বাংলাদেশ মসজিদে পরপর পাঁচটি  জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টা ৩০ মিনিট, দ্বিতীয় জামাত ৮টা ১৫মিনিটে, তৃতীয় জামাত ৯টা, চতুর্থ জামাত ৯ টা ৪৫ মিনিটে  এবং সর্বশেষ জামাত ১০টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া আল হুদা জামে মসজিদে ৪ টি জামাত, শাহজালাল ফুলতলী জামে মসজিদে ৪ টি জামাত এবং আল আমান জামে মসজিদ সংক্রিস্টোবালে ৩ টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।

সরকারি নিয়ম অনুসারে স্পেনে মাস্ক বাধ্য করা হয়েছে। ফলে প্রতিটি মুসল্লিকে মাস্ক নিয়ে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। মসজিদে বাইরে ছিল প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা।

স্পেন প্রবাসী আবু হাসনাত হিরো বলেন, ‘দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মসজিদটিতে সবাই মিলে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে পেরে খুবই ভালো লাগল। অন্যদিকে একটু খারাপও লেগেছে। আত্মীয়স্বজনেরা দূরে এবং আগের মতো খোলা মাঠে এক সঙ্গে নামাজের সেই আনন্দ পাইনি। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সব আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।’

প্রতিবারের মতো  এ বছর কারও বাসায় কেউ যাননি। ঈদের কোলাকুলি, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া এবং আত্মীয়-প্রতিবেশীদের নিয়ে ঈদ উদ্‌যাপন করাও হয়নি। ঈদের জামাত–পরবর্তী কোলাকুলি ছাড়াই নিষ্প্রাণ ঈদুল ফিতর উদ্‌যাপন করলেন সে দেশে বসবাসরত অভিবাসী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

করোনা মহামারি সংকট ও পরবর্তী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই অর্থনৈতিক দুর্দশার শিকার হয়েছেন। অর্থনৈতিক সংকটে তারা চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছেন। চাকরি হারিয়েছেন হাজারো বাংলাদেশি। অনিশ্চিত সময়ে বছর ঘুরে আসা চিরচেনা ঈদের আবহে তারা ছন্দ মেলাতে পারছেন না।

প্রতিবছরের মতো এবার পরিবারের জন্য দেশে টাকাও পাঠাতে পারেননি বেশির ভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি। প্রিয় পরিবারকে ঈদের টাকা না পাঠাতে পেরে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশি, স্প্যানিশ নাগরিকসহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সরওয়ার মাহমুদ। তিনি দেশে অবস্থিত প্রবাসীদের পরিবারের সদস্যদেরও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এই মহাদুর্যোগের সময় যে কঠোর জীবনযাপন পদ্ধতি চলছে এর মধ্যেও ধর্মপ্রাণ প্রবাসী ভাইবোনেরা এক মাস রোজা রেখেছেন। এক মাস সিয়াম সাধনার পরে এসেছে ঈদুল ফিতর। এই ঈদুল ফিতর উদযাপন উপলক্ষে প্রবাসীরা নিয়মকানুন পালন করে ঈদ উদযাপন করছেন। এখন এক কঠোর ও অস্বাভাবিক সময় অতিক্রম করছে গোটা বিশ্ব। এমন খারাপ সময় থাকবে না, আমাদের সুদিন আসবেই।’