প্রবাস

‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য প্রথম দাবি তোলেন শেখ রেহানা’

‘সুইডেনের স্টকহোমের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের যে বিচার দাবি করেছিলেন, তার মধ্য দিয়েই এই দাবি সারাবিশ্বে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছিলো।’ ১৯৭৯ সালের ১০ মে বঙ্গবন্ধু কন্যার এই দাবি উত্থাপনের দিনটিকে স্মরণ করে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর উদ্যোগে মঙ্গলবার (১০ মে) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে এই মন্তব্য করেন আলোচকবৃন্দ।

সেখানে বলা হয়, এই প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার সম্পন্ন করেছে এবং দেশের জন্য উজ্জ্বল দিন এনেছে বলে একটি আলোচনা সভায় মত দিয়েছেন বক্তারা।

১৯৭৯ সালের ১০ মে বিশ্বমানবতার কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়েছিলেন তার কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। সেদিন সুইডেনের স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্ব-ইউরোপীয় বাকশালের এক সম্মেলন থেকে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে প্রথমবারের মতো ঘৃণ্য ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি তোলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা।

সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ প্রমুখ।

স্টকহোমের সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা সুলতান মাহমুদ শরীফ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যুক্তরাজ্য ও সুইডেনসহ ইউরোপে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবির সোচ্চার হওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

সুইডেনে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আসতে পারেননি। উনি বললেন, শেখ রেহানাকে নিয়ে যেতে।

শেখ রেহানার কথা তুলে ধরে সুলতান শরীফ বলেন, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে আমাদের সকলকে পরিচালিত করছিলেন। লন্ডনে আসার পর থেকেই আমাদের উৎসাহিত করছিলেন। আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। যার ফলে উনার নেতৃত্বে আমরা সুইডেনে গিয়েছিলাম এবং সেখানে উনি এমন একটি মর্মস্পর্শী ও আবেগঘন বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং এমনভাবে আবেদন করেছিলেন, যে আবেদনের ফলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে সেই কথাগুলো সারাবিশ্বে জানান দিতে। এবং প্রায় দেড় বছর পরে আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে লন্ডনে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। উনার নেতৃত্বে সমস্ত বাংলাদেশের পট পরিবর্তনের যে রূপরেখা তা শুরু করতে পেরেছিলাম। এবং শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আজকে আমরা বিশ্বে উন্নত দেশ হিসেবে পরিচিত হয়েছি।

সুলতান শরীর বলেন, শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। তার উৎসাহ না হলে এটা (স্টকহোমে সম্মেলন) কোনোদিন করতে পারতাম না। আর শেখ রেহানা যদি আমাদেরকে নিয়ে এই কাজটি না করতেন তাহলে আজকের এই উজ্জ্বল দিনটি আমরা দেখতে পারতাম না।

আমির হোসেন আমু বলেন, যদি সেদিন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা দেশের বাইরে না থাকতেন তাহলে আমরা কত বছর এই নির্যাতনের শিকারে থাকতাম? আমরা এই খুনি চক্রের চক্রান্তের শিকারে থাকতাম? এই প্রশ্ন কিন্তু জাগে।

তিনি বলেন, তারাই লন্ডনে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দলকে উজ্জীবিত করেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। জন ম্যাকব্রাইটের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন এবং তাদেরকে দেশে এনে যাতে তদন্ত করা যায় সেই চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার তাদেরকে ভিসা দেয়নি, আসতে দেয়া হয়নি।

আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস ও অর্জনগুলি নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা আবার এই অর্জনগুলি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছি, সংবিধানের মূল চার নীতিতে ফিয়ে যাওয়া এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তানি প্রেতাত্মা ও দালালরা নব্য পাকিস্তান সৃষ্টির যে পায়তারা নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল সেই জায়গা থেকে জাতিকে তার আসল জায়গায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

তিনি বলেন, এই ১০ মে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা যেভাবে সূচনা করেছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় সেই আন্দোলন আমাদের দেশে আসে এবং আমরা সেই জায়গাগুলি পূরণে সফল হয়েছি। সমস্ত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আমরা যে অর্জনগুলি পেয়েছি তাদেরই অকুতোভয় নেতৃত্বের কারণে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ১০ মে ১৯৭৯ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্টকহোমে যে সমাবেশ হয়েছিল, সেখানে বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা যে বক্তব্য রেখেছিলেন সেটা আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ সেখানে হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য বিদেশের মাটিতে যারা সোচ্চার হয়েছিলেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা আমাদের শ্রদ্ধাভাজন শেখ রেহানা।

‘যখন আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমরা দেশে শেখ রেহানার পরামর্শে নানা কাজকর্ম করতে সক্ষম হয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে আইনি লড়াই করার জন্য আইনজীবীদের আনাসহ নানা সহযোগিতা তিনি (শেখ রেহানা) করেছেন। শেরি ব্লেয়ারকে তিনি এখানে পাঠিয়েছিলেন। নানাভাবে তিনি সহযোগিতা করেছেন।’

কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার কথা তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি অত্যন্ত ধীরস্থির, শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা এই জাতির জীবনে স্বাধীনতার পরে সবচেয়েয়ে বড় অন্যায়। এই হত্যাকাণ্ডের যদি বিচার না হতো তাহলে আমাদের পক্ষে ন্যায়ভিক্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হতো না।