কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে কুয়েতের শ্রম আইন এবং স্থানীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলার গুরুত্বের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, আইনগত অধিকার এবং অবৈধ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার বিষয়ে কর্মীদের সচেতন করতে এই বার্তাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইনি অধিকার ও কর্মবিরতি
কুয়েতের শ্রম আইন অনুযায়ী, বকেয়া বেতন বা অন্যান্য সমস্যার সমাধানে কর্মীদের ধর্মঘট বা কাজে অনুপস্থিত থাকা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। যদি কোনো কর্মী একটানা সাত দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন, তাহলে কোম্পানি তার বিরুদ্ধে ‘অ্যাবসকনডিং কেস’ বা অনুপস্থিতির মামলা করতে পারে। এর ফলে কর্মী চাকরি হারাতে পারেন এবং তার ইকামা বাতিল হতে পারে। তাই, যেকোনো সমস্যার ক্ষেত্রে কুয়েতের ‘পাবলিক অথোরিটি ফর ম্যানপাওয়ার’ অথবা ‘ডিপার্টমেন্ট অব ডোমেস্টিক লেবার’-এ অভিযোগ করার জন্য দূতাবাস পরামর্শ দিয়েছে। দূতাবাস প্রয়োজনে এসব আইনি প্রক্রিয়ায় সহায়তা করবে।
কর্মস্থলের বাইরে কাজ করা থেকে বিরত থাকুন
কুয়েতের আইনে, ইকামায় উল্লেখিত কর্মস্থলের বাইরে অন্য কোথাও কাজ করা সম্পূর্ণ অবৈধ। অনেক সময় নতুন কর্মীরা অধিক আয়ের আশায় এই ভুল করে থাকেন, যার ফলে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আইন ভঙ্গের কারণে তাদের জেলে পাঠানো হয় এবং শেষ পর্যন্ত দেশে ফেরত পাঠানো হয় (ডিপোর্ট)। একবার ডিপোর্ট হলে ভবিষ্যতে কুয়েতে ফিরে আসার আর কোনো সুযোগ থাকে না। তাই, প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিজেদের ইকামায় উল্লেখিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ না করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভিসা কেনা-বেচা এবং অভিবাসন ব্যয়
বাংলাদেশ সরকার কুয়েতে কর্মী পাঠানোর জন্য অভিবাসন ব্যয় বাবদ ১,০৬,৭৮০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এর অতিরিক্ত কোনো অর্থ লেনদেন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ভিসা কেনা-বেচার মাধ্যমে এই ব্যয় অনেক বেড়ে যায়, যা আইন অনুযায়ী দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের জন্যই অপরাধ। দূতাবাস অনুরোধ করেছে, সকল প্রকার অবৈধ ভিসা লেনদেন থেকে বিরত থেকে যেন বৈধভাবে কুয়েতে আসার চেষ্টা করা হয়।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা
চুক্তিপত্র: কর্মস্থলে যোগদানের আগে চুক্তিপত্রের শর্তাবলী (বেতন, কাজের ধরন ইত্যাদি) ভালোভাবে জেনে স্বাক্ষর করুন এবং একটি কপি নিজের কাছে সংরক্ষণ করুন।
অবৈধ আর্থিক লেনদেন: ইকামা নবায়ন, ছুটি বা আকামা স্থানান্তরের জন্য কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ। এই ধরনের লেনদেন থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
অর্থ লেনদেনের প্রমাণ: যেকোনো আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে অবশ্যই রশিদ বা উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করুন, কারণ মৌখিক প্রতিশ্রুতির কোনো আইনি ভিত্তি নেই।
অবৈধ কার্যক্রম: কুয়েতে ভিক্ষাবৃত্তি, আবর্জনা থেকে জিনিসপত্র সংগ্রহ করে বিক্রি করা, অর্থ জালিয়াতি, এটিএম কার্ড জালিয়াতি এবং মাদক সংক্রান্ত যেকোনো কার্যক্রমে জড়িত হওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। দূতাবাস বিশেষভাবে সতর্ক করেছে যে, মাদক কেনা-বেচা বা পরিবহনের অপরাধে অনেক বাংলাদেশি বর্তমানে জেলে আছেন।
যানবাহন ও ট্রাফিক আইন: গাড়ি চালানোর সময় অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির কাগজপত্র সাথে রাখুন। ট্রাফিক আইন, যেমন সিট বেল্ট ব্যবহার, নির্ধারিত গতিসীমা মেনে চলা, এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলা- এই নিয়মগুলো মেনে চলুন।
এই সকল নির্দেশনা মেনে চলে কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের এবং দেশের সুনাম রক্ষা করতে পারবেন, পাশাপাশি আইনি জটিলতা এড়িয়ে একটি নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবন নিশ্চিত করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছে কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস।