কৃষি

চীনের আকাশে শরতের নীল ।। শান্তা মারিয়া

চকবাজার টু চায়না :: তৃতীয় কিস্তি চীনের মহাপ্রাচীর আর চেয়ারম্যান মাও সে তুংয়ের নাম ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। তবে আমাকে যে কখনও চীন দেশে চাকরি করতে যেতে হবে তা আগে ভাবিনি। চীন আন্তর্জাতিক বেতার চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল-এ ফরেন এক্সপার্টের চাকরি নিয়ে ২০১১ সালের ৩০ অগাস্ট পাড়ি জমালাম চীনদেশে। হাদিসে আছে, জ্ঞান অর্জন করতে হলে যদি চীন দেশে যাওয়ার প্রয়োজন হয় সেখানেও যাবে। চীনে যাওয়ার আগেই আমার জ্ঞান অর্জন শুরু হলো। পুলিশ ভ্যারিফিকেশন, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অ্যাম্বেসিসহ বিভিন্ন জায়গায় দৌড়াতে হলো। ষোলো বছর ধরে যে সাংবাদিকতা করছি সেই সার্টিফিকেটও নিতে হলো। আর নেট ঘেঁটে বেইজিং সম্পর্কে যা জানবার তাও জেনে নিলাম। একবারে একা যাচ্ছি অচেনা দেশে। ওখানে আমার আত্মীয়-বন্ধু কেউ নেই। বিশেষত চীনাভাষা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই। যাওয়ার আগের দিন এক আত্মীয় এসে ভয় দেখালেন। তিনি নাকি চীন গিয়েছিলেন স্বামীর সঙ্গে। সাতদিন না খেয়ে ছিলেন। কোনো খাবারই মুখে তোলা যায় না। সাতদিন পর কোনোমতে প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরেছেন।তখন রোজা চলছে। আমাকে যেতে হবে ঈদের আগের দিন। এটা অবশ্য চীনা বেতারে আমার পূর্বতন সহকর্মী সালাউদ্দিনের কারসাজিতে হয়েছিল। তার স্ত্রী আমার সঙ্গে বেইজিং যাবেন। আমাকে নিতে অফিসের গাড়ি আসবে।আমার সঙ্গে এক গাড়িতে যাতে তার স্ত্রী যেতে পারেন সেইজন্য ঈদের আগের দিন আমাকে যেতে হল দেশ ও বাসার সবাইকে ছেড়ে।রাত একটায় ফ্লাইট। চায়না ইস্টার্নের টিকেট। ঢাকা-কুনমিং-বেইজিং। ফ্লাইট যথারীতি ডিলেইড। ফলে রওনা দিতে দিতেই আড়াইটা তিনটা বাজলো। পরদিন সকালে যখন বেইজিং পৌঁছালাম তখন একবারে ক্লান্ত বিধ্বস্ত অবস্থা। এয়ারপোর্টে আমাকে নিতে এসেছিলেন চীন বেতারে বাংলা বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর চিয়াং চিনশেং। তার মুখে বাংলা কথা শুনে খুব ভালো লাগলো। বাংলা বিভাগের সব কর্মীই অবশ্য কম বেশি বাংলা বলতে পারেন। বেইজিং এয়ারপোর্ট থেকে চীন বেতারের দিকে যেতে যেতে শহরটা দেখছিলাম। আমি তখন ভীষণ ক্লান্ত, সৌন্দর্য দেখার মতো মনের অবস্থা নয়। তারপরও বেইজিং শহরের অসাধারণ সৌন্দর্য চোখে না পড়ে উপায় নেই। তখন শরৎকাল। সবচেয়ে সুন্দর সময়। রাস্তার দু’ধারে এবং আইল্যান্ডে গোলাপের সারি। গ্রীষ্মে ফোটা এই গোলাপ অবশ্য বেশিদিন থাকবে না। শীতের বাতাস বইতে না বইতে ঝরে পড়বে। কিন্ত শরতে তা অপরূপ।