কৃষি

বিপদ কাটিয়ে জওত্লাং জয়ের গল্প

ফেরদৌস জামান

প্রচলিত বিভিন্ন মাধ্যমের তথ্য মোতাবেক দুমলংকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মনে করা হতো। যদিও সরকারি তথ্য এটা বলে না। এ সম্পর্কে সরকারি তথ্যগুলোর বিভ্রাট অনেকবারই প্রমাণিত হয়েছে। যেমন সরকার স্বীকৃত দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বিজয় বা তাজিনডংয়ের স্থান বর্তমানে দশের মধ্যেও নেই। বরং সাবেক সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডাংয়ের অবস্থান বর্তমানে পাঁচ নাম্বারে রয়েছে। যাই হোক, দুমলং অভিযানের পরিকল্পনার শেষ পর্যায়ে জানা গেল জওত্লাংয়ের নাম। এটিই আসলে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। অভিযাত্রী দলের সকলের ইচ্ছায় এবার আমাদের লক্ষ্য পরিবর্তিত হলো। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম জওত্লাং যাব। মিজো থেকে এসেছে ‘জও’ শব্দটি। আর বম শব্দ ‘ত্লাং’ অর্থ পাহাড়। এর অবস্থান বান্দরবান জেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত রেখায়। এই অভিযান ছিল একটু ব্যাতিক্রম। কারণ আমরা থানচী থেকে নৌকার পরিবর্তে পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। এবং সে উদ্দেশ্যে যথারীতি পৌঁছে গেলাম থানচী বাজারে।  থানচীর অপরূপ বিশেষত্ব হলো সেখানে মেঘ কুয়াশার খেলা চলে চারপাশের পাহাড়ের গায়ে গায়ে। সেখানে অল্পদিন আগে নির্মিত সেতুর রেলিং ধরে দাঁড়ালে মুহূর্তেই মেঘ এসে শরীর ছুঁয়ে যায়। দিয়ে যায় সিক্ত কোমল পরশের আদর। দিগন্তের দিকে তাকালে দূরের পাহাড় সারি ক্রমেই মিলে যায় অলস মেঘের আড়ালে। কাপড় পরিবর্তন করে ছুটলাম সাঙ্গুর পাড় ধরে উজানে। জানা পথ, চেনা প্রকৃতি, ব্যাতিক্রম কেবল বাহন। নৌকার জায়গায় পদযুগল ভরসা। কয়েক ঘণ্টা ট্রেকিংয়ের পর হঠাৎ আবিষ্কার করলাম সামনে কোনো ট্রেইল নেই।

সব শেষে দুই ঘণ্টা পথ উঠতে হয় ছোট ছোট বাঁশের ঘন বনের মাঝ দিয়ে। পাশাপাশি উটকো উৎপাত হিসেবে রয়েছে স্থানীয়দের ভাষায় বিষ পাতা। একবার সেই পাতার সংস্পর্শে এলে আর রক্ষা নেই। শুরু হয় চুলকানি। আমরা বিষ পাতা এড়িয়ে পথ চলতে লাগলাম। কিন্তু পথ তো ফুরায় না, ঘন বাঁশের তল থেকে আন্দাজ করাও দুস্কর! আর কত দূর, জানতে চাইলে ধানওয়া হাত ইশারায় শুধু বলল, উঠতে থাকো। মাঝে মাঝে সে আবার হঠাৎ থমকে দাঁড়িয়ে মুখে আঙুল চেপে শশশ করে ওঠে। নিকটে জন্তু-জানোয়ারের সাড়াশব্দ পেলে সে অমন করে। আমরাও তখন ভয়ে চুপ করে যাই। অজানা আশঙ্কায় মন কেঁপে ওঠে।অবশেষে পথ ফুরালো। শৃঙ্গে আরোহণ করতে সক্ষম হলাম বেলা ১১.৪৭ মিনিটে। অবস্থানের জন্য সময় নির্ধারিত হলো ত্রিশ মিনিট। কারণ সন্ধ্যার আগেই বেজক্যাম্পে পৌঁছাতে না পারলে যেখানে রাত সেখানেই কাত অর্থাৎ থেকে যেতে হবে। শৃঙ্গের পূর্ব পাশটা মিয়ানমারের সুবিশাল পার্বত্য অঞ্চল। কোনো জুম অথবা বসতি চোখে পড়ে না, কেবল পাহাড়ের সারি আর সারি। সাকাহাফং (বেসরকারিভাবে দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) ও তিনমুখ পিলার (বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমার মিলন বিন্দু, বেসরকারিভাবে যা অষ্টম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ) থেকে সীমান্তের ওপারের যে রূপ চোখে পড়ে দেশের দ্বিতীয় এই সর্বোচ্চ জওত্লাং থেকেও ঠিক একই। শৃঙ্গে রাখা একটি বোতলে আটকানো দুইটি সামিট নোট ও বেজক্যাম্পের এন্ট্রি লিস্ট মোতাবেক আমরা বোধহয় জওত্লাং সামিট করা তৃতীয় অভিযাত্রী দল।রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫/তাপস রায়