কৃষি

মাগুরায় মসুর উৎপাদন নিয়ে চিন্তায় কৃষক

মাগুরা প্রতিনিধি : চলতি রবি মৌসুমে মসুর ডালের উৎপাদন নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে মাগুরা জেলার কৃষক। মসুরখেতে গোড়া পচা রোগ এই চিন্তার কারণ। মসুর এই জেলার অন্যতম রবিশস্য। কৃষকরা বলছেন, মসুর গাছ একটু বড় হওয়ার পরই দেখা দিচ্ছে এই রোগ। প্রথমে গাছের শিকড় পচে যাচ্ছে। এরপর গাছ হলুদ হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। খেতে ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। তবে কৃষি কর্মকর্তাদের দাবি, মসুর খেতে গোড়া পচা রোগ হলেও এখন নিয়ন্ত্রণে। এতে উৎপাদনে তেমন প্রভাব পড়বে না। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে জেলায় মসুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৭০৬ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছিল ২৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন। উৎপাদন হয়েছে ১ মেট্রিক টন। এবার জেলায় মসুর চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ হাজার ৮৮৫ মেট্রিক টন। কিন্তু এবার মসুরের চাষ হয়েছে ২৫ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলায় ১০ হাজার ১০০ হেক্টর, মহম্মদপুর উপজেলায় ৫ হাজার, শালিখা উপজেলায় ৫ হাজার ৯০০ এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর জমি। মূলত বারি ৬,৭ ও স্থানীয় জাতের মসুরের আবাদ এই জেলায় জনপ্রিয়। মাগুরা সদর, মহম্মদপুর, ও শালিখা উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, খেতের মধ্যে বিভিন্নস্থানেই মসুরগাছ শুকিয়ে আছে। আবার অনেক জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া গাছ কৃষকেরা তুলে ফেলায় ফাঁকা হয়ে আছে। সবুজ গাছের রঙ হলুদ হয়ে গেছে। মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের তল্লাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘দেড় বিঘা জমিতে এবার মসুরের চাষ করেছি। পচন রোগে গাছ মরে খেত ফাঁকা হয়ে গেছে। ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।’ শালিখার তালখড়ি এলাকার কৃষক জীবন বিশ্বাস  জানান, গত মৌসুমে দুই বিঘা জমিতে মসুরের চাষ করেছিলেন। মসুর পেয়েছিলেন প্রায় ৯ মণ। এবার তিনি চার বিঘা জমিতে মসুরের চাষ করেছেন। গোড়া পচা রোগে এবার তার মসুরখেতের অবস্থা খারাপ। মগুরা সদর উপজেলার ইছাখাদা এলাকার কৃষক  আবুল কাশেম শেখ বলেন, ‘আশা ছিল বেশি ফলন পাব। কিন্তু গোড়া পচা রোগে প্রতিদিন গাছ মরছে। ইতিমধ্যে আমার খেতের ৪০ ভাগ গাছ মরে গেছে।’ কৃষি অফিসের  কর্মকর্তারা বলছেন, মাগুরা  জেলার মাটি ও আবহাওয়া মসুর চাষের জন্য বেশ উপযোগী। জেলার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে মসুর ডালের আবাদ হয়। দাম ভাল থাকায় এ ফসল বিক্রি করে লাভবান হন তারা।   এ বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বৃষ্টি ছিল। এ কারণে মাটিতে রস বেশি থাকায় গাছের গোড়ায় ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। সর্বশেষ  প্রতিবেদনে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলায় ৩৮০ হেক্টর জমির মসুর খেত গোড়া পচা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘খেতের বিভিন্ন গাছের শিকড় ৪-৫ ইঞ্চি নিচে যাওয়ার কথা। কিন্তু কলের লাঙল দিয়ে চাষ করায় মাটির কর্ষণ গভীর হচ্ছে না। এতে দুই ইঞ্চি নিচেই মাটির শক্ত আস্তরণ পড়ায় শিকড় গভীরে পৌঁছাতে পারছে না। এতে গোড়া পচাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মসুর খেতে ছত্রাকজনিত গোড়া পচা রোগ শুরুর সাথে সাথে কৃষকদেও মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচার চালানো হয়। বপণের আগে  প্রোভেক্স (২০০ ডব্লিউ পি) নামের ছত্রাকনাশক ২ দশমিক ৫ গ্রাম হারে প্রতি কেজি বীজ শোধন করে নিলে এ রোগের প্রোকোপ কমে যায় । আক্রান্ত খেতে প্রতি লিটার পানিতে একই ওষুধ  ২ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করলেও উপকার পাওয়া যায়।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা বলেন, ‘এবার মসুরের বীজ বপনের সময় বৃষ্টির কারণে  জমিতে অতিরিক্ত রস ছিল। এতে মসুর খেতে গোড়া পচা রোগ দেখা দেয়। সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মসুরের ফলনে তেমন প্রভাব পড়বে না।’

 

 

রাইজিংবিডি/মাগুরা/ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/ মো. আনোয়ার হোসেন শাহীন/টিপু