কৃষি

মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ : মঙ্গলবাড়িয়া কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার একটি গ্রামের নাম।লিচুর সুবাদেই গ্রামটি বেশি পরিচিতি পেয়েছে। চলতি মৌসুমেও লিচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে লিচু আর লিচু। প্রায় ২০০ বছর ধরে এখানে লিচুর আবাদ হয়ে আসছে। বর্তমানে এই গ্রামে হাজার হাজার লিচু গাছ রয়েছে। গ্রামের নামেই নামকরণ হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু’। রসালো,  স্বাদ, সুন্দর গন্ধ ও গাঢ় লাল রঙের কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খ্যাতি দেশজুড়ে। এ ভরা মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতা ও পাইকারদের পদচারণায় মুখর লিচু বাগানগুলো। এলাকার শত শত কৃষক  লিচু চাষকেই আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। লিচুর চাষ করেই তাদের জীবনে এসেছে সচ্ছলতা। এখানে লিচু বাগানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই।

লিচু চাষিরা জানান, কেবল কিশোরগঞ্জ জেলায় নয়,  অন্যান্য জেলাতেও মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর রয়েছে বাড়তি চাহিদা। আর সেই কারণেই লিচুর মৌসুমে স্থানীয় বাজারে এসব লিচু পাওয়া যায় না। চলে যায় দেশের বড় বড়  শহরে। দামও অন্য জাতের লিচুর চেয়ে বেশি। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু আকারে যেমন বেশ বড় হয়, রঙে-স্বাদে এবং গন্ধেও ব্যতিক্রম । যে কারণে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর রয়েছে বাড়তি কদর ও চাহিদা। লিচু চাষি শামীম মিয়া জানান,  ঠিক কত বছর আগে এবং কীভাবে এখানে লিচু চাষের প্রচলন শুরু হয়েছে, তা জানা না গেলেও  প্রবীণদের ধারণা অন্তত ২০০ বছর আগে এখানে লিচু চাষ শুরু হয়। গত কয়েক দশক ধরে এ গ্রামে বানিজ্যিকভাবে লিচু চাষ শুরু হয়েছে। বর্তমানে শুধু এ গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রামগুলোতেও লিচু চাষ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকার বহু কৃষক লিচু চাষকেই আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছেন। অনেক কৃষকেরই রয়েছে ১৫-২০ টি থেকে শতাধিক লিচু গাছ। লিচুর পাইকারি ব্যবসায়ী ও চাষি তাওহিদ মিয়া বলেন, ‘আমার ১৫১টি লিচু গাছ রয়েছে। এসব গাছ আমি আগাম কিনে থাকি। লিচু চাষে উৎপাদন খরচ বাবদ আমার ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখান থেকে ১১/১২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করা সম্ভব হবে। মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু অনেক সুস্বাদু, জেলার বাইরের অনেক লোক এখানে লিচু কেনার জন্য আসে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকার সাত হাজার লিচু গাছে এবার সাড়ে সাত থেকে আট কোটি টাকা আয় করতে পারবেন কৃষকরা। এ লিচু আমাদের দেশের একটি বড় সম্পদ। উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র থেকে কয়েক বছর ধরে এ লিচু চাষের ডাটা সংগ্রহ করছে ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।’ মনে করা হচ্ছে, সরকারি- বেসরকারি সহায়তা পেলে এখানকার উৎপাদিত লিচুর আবাদ আরও সম্প্রসারণ করা সম্ভব, বাজারজাত করণের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে তোলা হলে পাল্টে যেতে পারে স্থানীয় অর্থনীতির চিত্র। রাইজিংবিডি/কিশোরগঞ্জ/১৬ মে ২০১৭/রুমন চক্রবর্তী/টিপু