কৃষি

মেহেরপুরে কলা চাষে কৃষকের ভাগ্যবদল 

একবার কলার চারা রোপণ করে ক্ষেত থেকে ২৪ মাসে ৩ বার ফলন পাওয়া যায়। খরচ কম, তবে লাভ বেশি। তাই মেহেরপুরের কৃষকরা কলা চাষে ঝুঁকে পড়েছে। জেলায় কলা চাষ, ব্যবসা ও পরিবহনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। 

মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলায় কলার চাষ হয়। জেলা কৃষি বিভাগের হিসাবমতে, গত মৌসুমে জেলায় কলা চাষ হয় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। 

মুজিবনগর উপজেলার গোপালপুর গ্রামের চাষি হাবিবুর রহমান বলেন,  মহাজনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আব্দুল মান্নান মাস্টার আশির দশকের প্রথম দিকে ভারত থেকে চারশত জয়েন্ট গভর্নর জাতের কলার চারা এনে গ্রামের মাঠের এক বিঘা জমিতে চাষ করেন। সেই থেকে জেলায় ধীরে ধীরে কলার চাষ ছড়িয়ে পড়ে। এখন মেহেরপুর থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক কলা দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে।

সদর উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের কলা চাষি মোনাজাত আলী মাস্টার জানান, তিনি ৮-১০ বছর ধরে কলার চাষ করছেন। এ মৌসুমেও তার আট বিঘা জমিতে মেহেরসাগর কলার (রং কলা) আবাদ করেছেন। কোনো রাসায়িক সার না দিয়ে তিনি জমিতে গোবর সার দিয়েছেন।  তিনি আরো বলেন, প্রতি বছরের পৌষ থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত কলার চারা রোপণ করার সময়। পৌষ-মাঘ মাসে কলার চারা লাগাবার পর জমিতে লেগে গেলে একটি সেচ দিতে হয়। মাটি ঝরঝরে হলে জমি কুপিয়ে দিতে হয়। এরপর গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারা কেটে দিতে হয়। এরপর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চাষির মুখে হাসি ফুটবেই। 

তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে কলার চাষ করতে প্রথম বছরে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবিঘা জমিতে প্রতিবার চারশত কাঁদি কলা পাওয়া যায়। যা ক্ষেত থেকে পাইকারি বিক্রি করলে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এভাবে ২ বছরে মোট ৩ বার কলা পাওয়া যাবে। পরের ২ বার সার, কীটনাশক ও পানি সেচ বাবদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা করে খরচ হয়। 

একই গ্রামের পাতারুল ইসলাম ৩ বিঘা জমিতে সবরি কলার চাষ করেছেন। তিনি জানান, এ কলার চাষ করার উপযুক্ত সময় বৈশাখ মাস। এক বিঘা জমিতে এ কলার চাষ করতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। বছরের শেষে ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ তিন মাস কলা কাটার উপযুক্ত সময়। 

তিনি জানান, কলা প্রাকৃতিক দুর্যোগে কম ক্ষতি হয়। বছর শেষে খরচ বাদে প্রতি বিঘা জমি হতে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। 

সাতক্ষীরা থেকে আগত ব্যবসায়ী হাসান জানান, মেহেরপুরের কলার চাহিদা দেশের বিভিন্ন জেলায়। তিনি মেহেরপুর থেকে প্রতিমাসে ৫ থেকে ৬ ট্রাক কলা কিনে সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠান। 

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসরিন পারভিন বলেন,  মেহেরপুরে জয়েন্ট গভর্নর, মেহেরসাগর, দুধসর, সবরি, চাপা, চিনিচাঁপাসহ বিভিন্ন ধরনের পাকা কলার চাষ হচ্ছে। সম্প্রতি কৃষিবিভাগ রান্না করে খাওয়ার জন্য উন্নত জাতের কাঁচকলার চাষ করতে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছে। তিনি একই জমিতে একবার অর্থাৎ ২৪ মাসের বেশি কলার চাষ না করতে চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। নাহলে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ে। 

মুজিবনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান জানান, কলা চাষিদের সমস্যা সমাধানে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছেন। তারা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। 

জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি কৃষি বিভাগ ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কলায় কার্বাইড ও বিষ স্প্রে না করার পরামর্শ দেন।

 

ঢাকা/বকুল