কৃষি

সবজির চারায় দেড় শতাধিক কৃষকের ভাগ্য বদল

নরসিংদীতে কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করছেন সবজির চারা।  আর এসব  সবজির চারা বিক্রি করে এরই মধ্যে ভাগ্য বদল হয়েছে শিবপুরের দেড় শতাধিক কৃষকের।

একই জমিতে বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে উৎপাদন করা হচ্ছে শীত ও গ্রীষ্মকালীন বিভিন্ন রকম সবজির চারা।  গুণগত মান ভালো হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকদের মাঝেও চাহিদা বাড়ছে এখানকার উৎপাদিত এ সবজির চারার।  এছাড়া লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে চারা উৎপাদনকারী কৃষকের সংখ্যাও।

সবজির চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা জানান, শিবপুর তথা নরসিংদীর স্থানীয় কৃষকরা এক সময় মুন্সীগঞ্জ থেকে চারা কিনে সবজি চাষ করতেন।  কিন্তু নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদার কথা ভেবে আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে এ চারা উৎপাদন শুরু করেন এখানকার কৃষকরা।  এরপর থেকে ধীরে ধীরে এখানে উৎপাদিত সবজির চারা জনপ্রিয় হয়ে উঠে।  এখন প্রায় ৩০ বিঘার জমির উপরে এ চারা উৎপাদন করা হয়।  যার বাজার মূল্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা।  এই চারা বিক্রয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন শুধু বাঘাব ইউনিয়নেরই দেড় শতাধিক কৃষক।

স্থানীয় কৃষকরা জানান,  শিবপুরের বাঘাব ইউনিয়নের কৃষকরা বংশ পরম্পরায় সবজির চারা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত।  এই ইউনিয়নের খড়ক মারা, ব্রাহ্মন্দী, লামপুর, কুন্দারপাড়া, রংপুর এলাকার রয়েছে সবজির চারা উৎপাদনের খ্যাতি।  তারা বেগুন, ফুলকপি, বাধাকপি, মরিচ, লাউ, শসা, টমেটো, পেঁপে, করলাসহ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা উৎপাদন করে থাকেন।

চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে শুরু হওয়া অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করেন, বিক্রি চলে আশ্বিন মাস জুড়ে।  এ চার মাস সময়কালে একই পলিথিনে মোড়ানো সেড করে ৪ থেকে ৫ বার পর্যন্ত বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারেন তারা।

সবজির চারা উৎপাদনকারী কৃষকরা আরো জানান, মৌসুমের আষাঢ় মাস থেকে বীজতলা প্রস্তুত করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, মরিচ ও টমেটোর বীজ বপন করেন।  ওই বীজ অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা গজালে তা পরিচর্যা করে একমাস বয়সে তুলে অন্য কৃষকদের কাছে বিক্রি করা হয়।  ভাল মানের প্রতিটি ফুলকপির চারা ৮০ পয়সা থেকে ১ টাকা এবং বাঁধাকপির চারা মানভেদে ৬০ থেকে ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

তাদের উৎপাদিত সবজির চারা নরসিংদী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে কৃষকরা এসে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।  প্রতিদিন এখানে নরসিংদী জেলাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, নেত্রকোনা, গাজীপুর ও টাঙ্গাইল এলাকার কৃষকরা সবজি চারা কিনতে আসেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুর উপজেলার কুন্দারপাড়া বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকার মাঠজুড়ে পলিথিনে মোড়ানো বীজতলা।  বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন আসছেন চারা কেনার জন্য।  অনেক চাষি চারা তুলছেন বিক্রয়ের জন্য।  কেউ কেউ বীজতলার উপরের পলিথিন খুলে উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন।  আবার কেউ আগাছা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কুন্দারপাড়ার একটি সবজির নার্সারির মালিক শওকত আলী বলেন, আমি বিগত ১৪ বছর ধরে এ ব্যবসা করে আসছি।  চারা বিক্রি করে ভালো আছি।  আমি দেড় বিঘা জমিতে অঙ্কুরোদগমের মাধ্যমে চারা উৎপাদন এবং বিক্রি করে প্রতি বছর লাখ দুয়েক টাকা আয় করতে পারছি।  আমাদের এখানে এখন ৩০ বিঘার জমির উপরে প্রায় ১৫০ জন কৃষক চারা উৎপাদন করছেন।  এখান থেকে বছরে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার চারা বেচা কেনা হয়।

একই এলাকার সবজির চারা উৎপাদনকারী ফজলুল হক বলেন, আমরা এক সময় মুন্সীগঞ্জ থেকে চারা এনে সবজি চাষ করতাম। সেখান থেকে দেখে চারা উৎপাদন শুরু করি।  প্রতিবিঘা জমিতে ফুলকপির বীজ বপন করে চারা উৎপাদন পর্যন্ত (এক মাস) অন্তত এক লাখ টাকা ব্যয় হয়।  তবে এতে ৩ লাখেরও বেশি চারা উৎপাদন করে খরচ বাদেও কমপক্ষে ২ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়। পরবর্তীতে ওই চারা অন্য কৃষকরা কিনে অন্তত তিন মাস পরিচর্যা করে বিক্রি উপযোগী করে তোলেন।

শিবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিন সাদেক জানান, উপজেলার কুন্দারপাড়া এলাকায় ৮ হেক্টর জমিতে সবজির চারা উৎপাদন করা হয়।  সবজির নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা।  আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও চারার গুনগত মান বজায় রাখতে এবং নতুন নতুন জাত ও আগাম সবজির চারা উৎপাদনে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

নরসিংদীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, বাণিজ্যিকভাবে সবজির চারা উৎপাদন করে নিজেদের জমির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্যত্র বিক্রি করে লাভবান হতে পারছেন এখানকার কৃষকরা।  সবজির চারা উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছরই কৃষকদের দক্ষতা অর্জনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।