কৃষি

পাটের মণ ৪০০০ টাকা, লাভবান হচ্ছেন ফড়িয়া-ব্যবসায়ীরা

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বালিদিয়া গ্রামের কৃষক মোবারেক হোসেন মোল্লা নিজের জমিতে ৩৫০-৪০০ টাকা মজুরিতে শ্রমিক দিয়ে পাট চাষ করেন। বছর শেষে উৎপাদিত পাট বিক্রি করে তার লাভ দূরের কথা, উৎপাদন খরচ ওঠে না। শুধু মোবারক হোসেন নয়, সব পাটচাষির অবস্থা এ রকমই।

কয়েক বছর ধরে কৃষি উপকরণের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি ও উৎপাদিত পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় দিন দিন কৃষি উৎপাদন অলাভজনক কাজে পরিণত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মোবারেক হোসেন।

কিন্তু উল্টো চিত্র ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, চাষির মজুদ ফুরালে পাটসহ কৃষি পণ্যের দাম বাড়ে। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ পাট বিক্রি হয়েছে ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায়। সেই পাট এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়।

মাগুরা জেলার ব্যবসায়ী-ফড়িয়াদের গুদামে মজুদ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার বেল (১ বেলে ৫ মণ) পাট। কৃষকের কাছ থেকে কেনা দরের চেয়ে ২ হাজার টাকা বেশিতে প্রতিমণ পাট বিক্রি করছেন তারা। এতে কৃষক দাম না পেলেও তাদের পকেটে যাবে লাভের প্রায় ৫০ কোটি টাকা।

পাট চাষিরা জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে জেলায় পাটের দাম পড়তে শুরু করে। তবে অক্টোবরের শেষে এসে বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়। কৃষকরা তখন প্রতিমণ পাট বিক্রি করেন ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকায়।

মাগুরা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টরে। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৩৯৫ হেক্টর বেশি জমিতে আবাদ হয়েছে। জেলায় ১১ লাখ ৮৫ হাজার বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কয়েকজন পাট চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাট উৎপাদনের পরপরই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা দেনা পরিশোধ করার জন্য একযোগে পাট বিক্রি শুরু করেন। এতে পাটের বাজার পড়ে যায়। এই সুযোগ নেয় ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। কম দামে তারা পাট কিনে গুদামজাত করেন। জেলায় এখন এ রকম বড় ব্যবসায়ীদের গুদামে প্রায় ৫০ হাজার বেল পাট মজুদ রয়েছে। এখন তারা বেশি দামে পাট বিক্রি করছেন।

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার দীঘা গ্রামের পাট চাষি মোসলেম উদ্দিন মোল্যা  বলেন, মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাটের তেমন চাহিদা থাকে না। তখন কম দামে পাট বি্ক্রি করতে হয়। আবার যখন দাম বাড়ে তখন কৃষকের হাতে পাট থাকে না। দাম বৃদ্ধির সুবিধা অধিকাংশক্ষেত্রে কৃষক নিতে পারে না।

মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামাণিক বলেন, কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়ার জন্য বিপণন নীতিমালা করা প্রয়োজন। কৃষক দাম পেলে কৃষির উন্নয়নে সহায়ক হবে।