কৃষি

আহা মরি মরি, অপরূপ খাগড়াছড়ি

পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে খাগড়াছড়িকে দেখে দার্জিলিংয়ের সাথে তুলনা করতে পারেন। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এখানে বনভোজন করতে কিংবা অবসরে বেড়াতে আসেন। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য এ স্থানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পও আছে। পর্যটন কেন্দ্রটি খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে অবস্থিত হওয়ায় বাস, ট্যাক্সিযোগ যাতায়াত করা যায়।

আলুটিলার ঝর্ণা বা রিছাং ঝর্ণা : আলুটিলা পর্যটন স্পট থেকে প্রায় ৩কিঃ মিঃ পশ্চিমে (খাগড়াছড়ি থেকে ১১কিঃমিঃ) খাগড়াছড়ি-মাটিরাঙ্গা সড়ক হতে বাম পার্শ্বে ১কিঃ মিঃ দক্ষিণে এ ঝর্ণা।

ঝর্ণার সমগ্র যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। যাত্রাপথে দূরের উঁচু-নীচু সবুজ পাহাড়, বুনোঝোঁপ, নামহীন রঙ্গীন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য্য যে কাউকে কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহমন ভরে উঠে। ২৫-৩০ হাত উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি, ঢালু পাহাড় গড়িয়ে নীচে মেমে যাচ্ছে এই প্রবাহ।

কাছাকাছি দুটো ঝর্ণা রয়েছে এ স্থানে, প্রতিদিন বহু সংখ্যক পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমান এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হন। মারমা ভাষায় এর নাম রিছাং ঝর্ণা, ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘ছাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া।

মূল সড়ক হতে রিছাং ঝর্ণায় যাওয়ার পথে চারিদিকের পাহাড়ি প্রকৃতি মনের মাঝে এক অনুপম অনুভূতির সৃষ্টি করে। ইচ্ছে করে প্রকৃতির মাঝেই কাটিয়ে দিই সারাক্ষণ। ঝর্ণা ছেড়ে মন চায় না ফিরে আসতে কোলাহল মূখর জনারণ্যে।

মহাসড়ক হতে হেরিংবোন রাস্তায় জীপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করা যায় এখানে।

রহস্যময় সুড়ঙ্গ : গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে পাহাড়ি সুড়ঙ্গ পথ বেয়ে অন্ধকার পাতালে নেমে যাওয়া কল্পনার বিষয় হলেও আলুটিলার সুড়ঙ্গ পথ কল্পনার কিছু নয়। আলুটিলা কেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর ‘রহস্যময় সুড়ঙ্গ’।

শহর থেকে ৮কিঃ মিঃ পশ্চিমে আলুটিলা পাহাড় চূড়ায় আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে এর অবস্থান।  স্থানীয় লোকের ভাষায় ‘‘মাতাই হাকর’’ যার বাংলা অর্থ দেবগুহা। এ পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিঁড়ির নীচে আলুটিলা পাহাড়ের পাদদেশে পাথর আর শিলা মাটির ভাঁজে গড়া এ রহস্যময় সুড়ঙ্গের অবস্থান।

গুহামুখের ব্যাস প্রায় ১৮ফুট আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ফুট। প্রবেশমুখ ও শেষের অংশ আলো-আঁধারিতে আচ্ছন্ন। মাঝখানে নিকষ কালো গাঢ় অন্ধকার এ গুহার তলদেশ দিয়ে প্রবাহমান শীতল জলের ঝর্ণাধারা।

গা ছমছম করা অনুভূতি নিয়ে এ গুহায় প্রবেশ করাটা একদিকে যেমন ভয়সঙ্কুল তেমনি রোমাঞ্চকরও বটে। শুধু বাংলাদেশেতো বটেই পৃথিবীর অন্য কোন দেশেও এ রকম প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ পথের খুব একটা নজীর নেই।

অনন্য সাধারণ এ গুহায় মশাল বা উজ্জ্বল টর্চের আলো ব্যতীত প্রবেশ করা যায় না। মশাল পর্যটন কেন্দ্রেই পাওয়া যায় ১০ টাকার বিনিময়ে। গুহার একদিকে ঢুকে অন্যদিকে গিয়ে বেরোতে সময় লাগে মাত্র ১৫/২০মিনিট। উপমহাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক এ সুড়ঙ্গ জেলার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ।

এটিও খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে অবস্থিত হওয়ায় বাস, ট্যাক্সিযোগ যাতায়াত করা যায়।

দেবতার পুকুর (দেবতার লেক) : খাগড়াছড়ি-মহালছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কে জেলা সদর থেকে ১১কিঃ মিঃ দক্ষিণে মূল রাস্তা হতে ৪কিঃ মিঃ পশ্চিমে সদর উপজেলার নূনছড়ি মৌজায় প্রশান্তিময় দেবতার পুকুরের অবস্থান।

এখানে জেলা সদর হতে মাইসছড়ি পর্যন্ত বাসে যাতায়াত করা যায়। মাইসছড়ি হতে নূনছড়ি ছড়া পর্যন্ত হেরিংবোন রাস্তা আছে। জীপ/চাঁন্দের গাড়ি বা পায়ে হেঁটে ঝর্ণামুখ (নূনছড়ি ছড়া), ঝর্ণামুখ থেকে প্রায় ১কিঃ মিঃ পায়ে হেঁটে পাহাড় বেয়ে পাহাড়ের শীর্ষে ‘দেবতার পুকুর’।

কেন দেবতার লেক : সদর উপজেলার নূনছড়ি মৌজায় আলুটিলা পর্বত শ্রেণী হতে সৃষ্ট ছড়া নূনছড়ি। নূনছড়ি ছড়ার ক্ষীণ স্রোতের মাঝে রয়েছে প্রকান্ড সব পাথর। স্বচ্ছ জলস্রোতে স্থির পাথর মোহিত করে, প্রকৃতির অপূর্ব সাজে মুগ্ধতায় শিহরিত হয় মন। সমুদ্র সমতল হতে প্রায় ১০০০ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় ‘দেবতার পুকুর’ রূপকথার দেবতার আর্শীবাদের মতো সলিল বারির স্রোতহীন সঞ্চার।

এ পুকুরটির স্বচ্ছ জলরাশির মন ভোলানো প্রশান্তি মূহুর্তের মাঝে পর্যটকদের হৃদয় মন উদাস করে দেয়। এত উঁচু পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত পুকুরটি নানা রহস্যে ভরপুর। এ পুকুর ত্রিপুরা ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠির তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিগণিত। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে এখানে তীর্থ মেলা বসে এবং তান্ত্রিক বিধানমতে ত্রিপুরাগণ যাগযজ্ঞাদি করে।

শতায়ূবর্ষী বটগাছ : মাটিরাঙ্গা উপজেলার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এ প্রাচীন বটবৃক্ষটির অবস্থান। পাঁচ একরের অধিক জমির উপরে এ গাছটি হাজারো পর্যটকদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয়। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এক একটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে।

আশ্চর্য্যরে বিষয় ঝুড়িমূল থেকে সৃষ্ট প্রতিটি বটগাছ তার মূল গাছের সাথে সন্তানের মতো জড়িয়ে আছে। কথিত আছে এ বটবৃক্ষের নীচে বসে শীতল বাতাস গায়ে লাগালে মানুষও শতবর্ষী হয়।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন : কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এস আলম বা শান্তি পরিবহনে সরাসরি খাগড়াছড়ি। ভাড়া মাত্র ৫২০ টাকা। এছাড়াও খাগড়াছড়ি যাওয়ার অনেক পথ রয়েছে।

যেখানে থাকতে পারেন : শহরের প্রবেশ মুখে রয়েছে মনোরম পরিবেশের পর্যটন মোটেল। সেখান থেকে উপভোগ করতে পারবেন খাগড়াছড়ির সৌন্দর্য্য। এছাড়াও শহরে আরও কিছু ভালো হোটেল রয়েছে থাকার জন্য।

সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো শহরের পানখাই এলাকায় রয়েছে একটি সিস্টেম হোটেল। নাম শুনে অবাক হলাম। এখানে আপনি কয়েক স্বাদের ভর্তা দিয়ে কম দামে মজার খাবার পাবেন। তবে খাগড়াছড়ি এসে এ হোটেলে না খেলে আপনি অনেক কিছু মিস করবেন। রাইজিংবিডি/শামটি/এলএ